কাকলী তালুকদার: এখানে এখন ফাগুন চলছে, ছোট ছোট বিবর্ণ গাছগুলো দ্রুত সবুজ রং এ ছেয়ে যাবে। সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলাম, ফাগুনের বাতাস গায়ে লাগছে, ঠাণ্ডা পুরোপুরি কমেনি। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকৃতি তার নিজস্ব সৌন্দর্যতা ফিরে পাবে। যে গাছে পাতা হারিয়েছিল তারা সবুজ হবে কয়েকদিনের মধ্যেই।
ফুলগুলো অবাধ্য কিশোর বয়সের মতো সময়ের আগেই ফুটে যাবে। যেদিকে তাকাবো স্বর্গ বলেই মনে হবে প্রকৃতির পাগলা সৌন্দর্যতায়। গতকাল বেরিয়েছিলাম দুপুরের খাবার নিয়ে, গাড়ি চালানোর প্র্যাকটিসটাও চলছে।
ঘুরতে ঘুরতে একটা নদীর ধারে গেলাম, ওখানেই দুপুরের খাবার খাবো ভেবেছিলাম কিন্তু এতো নীরব জায়গাটায় একজন মানুষও দেখলাম না! নিরাপত্তা নিয়ে এখানে ভাবনা নেই তবুও প্রকৃতির নীরবতাও যেন সহ্য হলো না। ওখান থেকে চলে আসলাম হাইওয়ের পাশে একটা লেকের ধারে। নদী এবং লেকের জল এখনও বরফ হয়েই জমে আছে, অল্প অল্প গলছে। লেকের পারে বেঞ্চ ছিল বসার, কিন্তু এতো বাতাস থাকায় বসতে পারেনি। গাড়ির ভিতরে বসেই চারজন খেলাম।
নদীর পাড় আর প্রকৃতির নীরবতায় মনে হলো আমাদের দেশে এমন নীরব স্থানে মানুষের লাশ মিলতো! মুখ দিয়ে এই কথাটাই বের হলো। বুকের ভিতরটা জমে যায়, প্রতিদিন মানুষ মানুষকে খুন করছে,ধর্ষণ করছে, গুলি করছে!
সাধারণ মানুষগুলোর উপর চলছে অত্যাচার, অবিচার।
জানি না কতটুকু অন্ধ হলে মানুষ মানুষকে খুন করার শক্তি পায়! জীবন তো একটাই যারা মৃত্যুর কাছে চলে যায় বা পাঠানো হয় তারা কি ফিরবে আর কোনদিন! যারা চাপাতির ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মানুষগুলোকে মুহূর্তেই শেষ করে দিচ্ছে তাদের কে কি সত্যিই ঈশ্বর ভাল চোখে দেখবে?
না, আজকাল আর আশার আলো দেখতে পাই না, অন্তত বাংলাদেশকে নিয়ে! আমরা মৃত এক জাতিতে পরিণত হচ্ছি প্রতিদিন! একদিন আমরা নিজের নিজের ছায়াকে কুপিয়ে মারার চেষ্টা করবো!
ওখানে আর বসন্ত আসবে না, গাছে গাছে ফুল ফুটবে না, পাখি গান গাইবে না, দমকা হওয়া গায়ে লেগে প্রিয় মানুষের মুখ মনে করিয়ে দিবে না! আমাদের মনের কালো গ্রাস করে নিচ্ছে পুরো দেশকে, ভালোবাসা মিউজিয়ামে একদিন খুঁজতে যাবো আমরা! সেদিন আর আমাদের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না!