জুলিয়াস সিজার: তনুর নাম সোহাগী জাহান তনু না হয়ে যদি তনু দাশ কিংবা তনু চাকমা হতো তাহলে আর এতো প্রতিবাদ হতো না। তখন বিপ্লবীদের ইন্ডিয়া আর বার্মাতে কতজন মুসলিম মেয়ে ধর্ষিত হলো সেই হিসেব করতে দেখা যেতো। ইতরদের সাথে তুলনা করে নিজেকে ইতর বানানোর ইচ্ছে নেই। তনু হত্যার বিচার চাই আর এই মৌসুমী বিপ্লবীদেরও মানসিক রোগের মুক্তি চাই।
অনেকেই বলবেন, আন্দোলনে বাধা দিচ্ছি। আন্দোলনের মাঝেও ধর্ম টানছি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রমাণ হাতেই আছে, একদম টাটকা, তরতাজা।
-এই কিছুদিন আগেই পাবনায় এডওয়ার্ড কলেজের এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ক্ষমতাশালী ধর্ষকদের প্রভাবে উল্টো এখন মেয়েটিরই পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। থানাও মামলা নেয়নি। কেন জানেন তো?
অসাম্প্রদায়িক দেশ হিন্দুদের ধর্ষণের মামলা নেয় না। নিলেও অভিভাবককে সাত ঘাঁটের জল খাইয়ে তারপর নেয়। আগেই ‘বার্তা’ দিয়ে দেয় মামলা নিয়েছি দয়া করে। বিচারের আশা করার বোকামি করো না খোকা। রাস্তা মাপো; ঢাকা-টু-কোলকাতা ট্রেইন আছে কিন্তু।
প্রতিবাদ কোথায়?
-এই মাত্র দুই দিন আগে সিরাজগঞ্জের তাড়াইলে এক হিন্দু পরিবারের মাত্র ১৩ বছরের বালিকাকে অস্ত্রের মুখে বাবাকে বন্দি করে তার বৃদ্ধ বাবারই সামনে ধর্ষণ করেছে দুইজন সন্ত্রাসী।
-প্রতিবাদ কোথায়?
ফরিদপুরে এক হিন্দু স্কুল শিক্ষিকাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজকে পাঁচদিন হয়ে গেলো। নিশ্চয় ধর্ষণ-গণধর্ষণ সারা হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। এখনও কোনো সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। হয়তো কিছুদিন পর ঐ শিক্ষিকার বিবস্ত্র ধর্ষিত লাশ কোনো ঝোঁপঝাড় কিংবা ধানক্ষেতে পাওয়া যাবে।
-প্রতিবাদ কোথায়?
উপ্রু মারমা, ছবি মারমা, মোনালিসা নংপ্রট, সবিতা চাকমা এবং আরও অসংখ্য আদিবাসী মেয়েদের যখন ধর্ষণের পর গলা কেটে, জবাই করে, ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল তখন আমাদের বিবেক কোথায় ছিল? এই গণজাগরণ, এই প্রতিবাদ কোথায় ছিল?
তখনও গণজাগরণ মঞ্চ ছিল। কোথায় ছিল লং মার্চ? একের পর এক সভা, ব্যানার, মানবতা, প্রসেশন?
কারণ তখন পাবলিকের হাইপ উঠে নি। তাই কোনো নেতার সেই ‘জন-জোয়ারকে’ গ্রিপ করে নিজের আয়ত্তে আনার প্রয়োজন পড়ে নি। আজ সারাদেশের মানুষ জেগেছে। এই জন জটলাকে মিস করার মতো বোকামি করার কোনো অর্থই হয় না। তাই দিয়ে দাও একের পর এক কর্মসূচী।
কিছুদিন আগে রাজবাড়ীর পাংশায় আদিবাসী মা-মেয়েকে একই সাথে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে এক আদিবাসী তরুণীকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।
তখন কোথায় ছিলো প্রতিবাদ?
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে নিজের মেয়ে ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে যখন আদিবাসী অলিন্দ ত্রিপুরা আত্মহত্যা করেছিলেন তখন কোথায় ছিলো এতো প্রতিবাদ?
সবিতা চাকমার ছোট্ট মেয়েটি যখন,’আমার মায়ের ধর্ষকদের, খুনিদের বিচার চাই’ পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেই ছবি দেখেও কেন আপনার মানবতা জাগে না? তখন এই প্রতিবাদ স্পৃহা কোথায় থাকে?
সবসময় আদিবাসী কেউ ধর্ষিত হলে এড়িয়ে যাবেন। চুপ চুপ! দেশের মান-ইজ্জত, ভাবমূর্তি একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে এসব প্রচারে আসলে। সমতলের কোনো সংখ্যালঘু অমুসলিমকে যখন ধর্ষণ করা হয়, যখন ধর্ষিতার পরিবার থেকে মামলা করতে চাইলেও অসাম্প্রদায়িক সরকারের(!) আমলে মামলাটি পর্যন্ত নেওয়া হয় না, উল্টো ধর্ষকেরা বুক ফুলিয়ে দম্ভের সাথে ঘোরাফেরা করে, ধর্ষিতার পরিবারকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হয় নিজেদের বাকি মেয়েগুলোকে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতে।
তখন কোথায় থাকে এত প্রতিবাদ? নারীর প্রতি এত সহানুভূতি? এত লংমার্চ, এত রোডমার্চ?
তনুর ব্যাপারটিতে সোচ্চার হওয়ার কারণ ৩টা ;-
১) তনুর অনেক সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব এবং তণুর কলেজ ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের’ শিক্ষার্থীরা ফেইসবুকে সক্রিয়। তাঁদেরই আপ্রাণ প্রচেষ্টায় আজকের এই আন্দোলন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
২) তনু ধর্ষিত এবং খুন হয়েছেন ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে।
৩) এবং অপ্রিয় হলেও সত্যি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তণু হিজাব পরিহিতা। এটার জন্য তনু এদেশের মানুষের একটা অতিরিক্ত সহানুভূতি পেয়েছেন। অনেকে হয়ত দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে বলছে ইশ,’অমন হিজাব পরিহিতা মেয়েটিকেও কিনা ধর্ষণ করে খুন করা হলো!’
অসংখ্য ধর্ষনের মত জঘন্য ঘটনা ঘটে চলেছে আমাদের দেশে। সব ঘটনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সময় হয়তো সবার নেই। এই নিয়ে কোন অনুযোগ করছি না আমি। কিন্তু শুধুমাত্র সংখ্যালঘু কিংবা আদিবাসী হওয়ার কারণে এই ঘটনাগুলোকে পত্রিকায় আসতে না দেওয়া, আসলেও সম্পূর্ণ রূপে অগ্রাহ্য করা, এড়িয়ে যাওয়া নীরব থেকে, তারা গণিমতের মাল এবং তাদের ধর্ষণ করাটা যুক্তিযুক্ত লিখে ফতোয়া দেওয়া মানুষদের বিরুদ্ধে যখন আজকের এই প্রতিবাদী গোষ্ঠীকে নীরব থাকতে দেখা যায় তখন তনুর জন্য এই মৌসুমী বিপ্লবীদের প্রতিবাদগুলোকে এক ধরনের ‘হিপোক্রেসি’ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। গণিমতের মাল বলে বলে একটু একটু করে এগিয়ে দেওয়া অপরাধীদের অপরাধের বিচার নিয়ে তাই আজকে যখন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি তখন আসলেই ভাবি আসলেই তারা অনুভব করতে পারে একটা ধর্ষিতা মেয়ের কষ্ট? সে সংখ্যালঘু হোক কিংবা আদিবাসী কিংবা তনু।
আমি মনেপ্রাণে চাই তনুর হত্যার বিচার হোক অন্তত একটা অপরাধের তো বিচার হবে। তার জন্য কিছু ফায়দালোভী নেতাকেতা, কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠন অথবা সুবিধা আদায় করলেও করুক। তাতেও যদি একজন নির্যাতিতার পরিবার, একজন অসহায় মেয়ে হারানোর পরিবার বিচার পান।
শুধু বাংলাদেশ নয়, এই পৃথিবীর সমস্ত নির্যাতিত এবং বঞ্চিতদের সাথেই আছি সবসময়।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
কিছু কারণে তনু ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা দেশের মানুষের সামনে চলে এসেছে সত্য, তবে ধর্মের কোনো প্রভাব মনে হয় না এখানে পড়েছে | কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের ছেলে হিমাদ্রি হত্যায় বেশ কয়েকজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত; অথচ, ত্বকী হত্যার বিচারই হতে দিচ্ছে না প্রভাবশালী মহল | ধর্মই যদি এসবের প্রধান কারণ হতো, তাহলে ত্বকী হত্যার বিচার হতো আগে | তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, সংখ্যালঘুরা পৃথিবীর কোথাও স্বস্তিতে নেই, সে আমেরিকা বলুন আর বাংলাদেশ বলুন |
তোমার বাল ছালের কাহিনি নিয়া তুমিই পইরা থাকগা । এইদেশে হাজার হাজার ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে কয়টার বিচার হইছে দেখাও তো । আব্লামীর লিমিট থাকা দরকার