শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ফাইনালে স্পেন

spainউইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক (২৮ জুন): একদিকে এবারের কনফেডারেশন্স কাপের সবচাইতে শক্তিশালী দল স্পেন। অপরদিকে নিজেদের সবচাইতে কার্যকরী স্ট্রাইকার বালোতেল্লি’হীন ইতালি। কাগজে কলমে কিছুটা অসমান লড়াই। তবুও ফুটবলের এই দুই জায়ান্টের লড়াই নিয়ে বাজিকরদের বাজি সমানে সমানই হয়েছে হয়তো। হতাশ করেনি কোন দলই। একটি ফুটবল ম্যাচের জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১২০ মিনিটই দর্শককে উত্তেজনায় রেখেছে দুটি দলই।

দুই দলের খেলা অনেকটা পরিণত হয় দুই গোলরক্ষকের অগ্নি-পরীক্ষাতে। এদিকে ইতালির জাল পাহারা দিচ্ছেন বুফন অন্যদিকে স্পেনের জাল পাহারা দিচ্ছেন ইকার ক্যাসিয়াস। দুজনই ফুটবল বিশ্বের দুই অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। দুই গোলরক্ষক নিজেদের পরীক্ষায় শতভাগ সফল। ৯০ মিনিটের নির্ধারিত খেলা শেষ হয়ে ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত খেলাতেও কেউই কারো জালে জড়াতে দেয়নি একটি গোলও।

ইউরোপের কোন ফুটবল দলকেই নিচু করে দেখার সুযোগ নেই সেটি আবার প্রমাণ দিলো ইতালি। মুহুর্মুহু আক্রমণ ও পালটা আক্রমণের মধ্য দিয়ে খেলা চলছিলো। সমানে সমান দু দলের মধ্যে বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রেও কেউই একচ্ছত্র ছিলোনা। ৫৩% ও ৪৭% বল আয়ত্বে রাখার পরিসংখ্যানে আপাতদৃষ্টিতে স্পেনকে কিছুটা এগিয়ে থাকতে দেখা গেলেও প্রথমার্ধে স্পেনই অনেকটা চাপের মধ্যে ছিলো। ইতালির একের পর এক আক্রমণ ও গোলমুখে শর্টে বিপাকে পড়ে গেলেও সম্পূর্ণ কৃতকার্যতার সাথেই নিজের দলকে রক্ষা করেছেন ক্যাসিয়াস। অপরদিকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই স্পেন মরিয়া হয়ে ওঠে গোল করার জন্য। ইতালির খেলোয়াড়রা স্পেনের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়লেও নিজের জাল খুবই নৈপুণ্যতার সাথেই রক্ষা করেছেন বুফন। স্পেনের একের পর এক সম্ভাবনাময় আক্রমণকে নিস্ফল করে দিয়েছেন। ফলাফল নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে কেউই জয়ী বা পরাজিত নয়।

শুরু হয় ফলাফল নির্ধারণী অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা। ১৫ মিনিট করে দুই ভাগের খেলায় দুই দলই তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বল জালে জড়াতে। কিন্তু সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। যদিও স্পেনের অনেক আক্রমণের ফলাফল লক্ষ্যভ্রষ্ট শর্ট না হলে হয়তো দু-একটি বল জালে জড়ালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকতো না। কিন্তু বিধাতা যেনো একেবারেই দুই গোলরক্ষকের পক্ষ নিলো আজ। স্পেনের লক্ষ্যভ্রষ্ট শর্টের বাইরেও কয়েকটি বল সাইড বার ও ক্রস বারে লেগে ফেরত আসে। ফলাফল অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও কেউই কোন গোল করতে পারেনি। খেলা গোলশূণ্য।

এরপর শুরু হয় টাইব্রেকার। এবারেও দুই দলের সফলতা সমানে সমান। নিজেদের জন্য বরাদ্দ ৫ টি শর্টের প্রতিটিতেই গোল করেন খেলোয়াড়রা। ফলাফল ট্রাইব্রেকারের প্রথম পর্বে ৫-৫ গোলে খেলা অমিমাংশিত। দ্বিতীয় পর্বে লিওনার্দো বনুচ্চির শর্টটি ক্রসবারের উপর দিয়ে না গেলে হয়তোবা স্পেনের জয় অরো কিছুটা স্নায়ুক্ষয়ী হতো অথবা ফলাফলও অন্যরকম হতে পারতো। বনুচ্চির শর্টটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হতেই স্পেন শিবিরে জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক পরে নাভাসের শর্ট থেকেই স্পেনের জয় নিশ্চিত হয়। স্নায়ুক্ষয়ী এমন ম্যাচ শেষে স্পেনের খেলোয়াড়রা ইতালির খেলোয়াড়দেরকে যোগ্য সম্মান দিতে ভুলেনি। এ যেন ফুটবলের জয়।

এই জয়ের মধ্য দিয়ে স্পেন ২০১৩ কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে নিজেদের স্থান করে নেয়। রবিবারের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে গত দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ও হ্যাট্রিক শিরোপা প্রত্যাশী ব্রাজিল। ফুটবল ভক্তরা আরো একটি কালজয়ী ফুটবল ম্যাচ দেখার প্রত্যাশা করতেই পারে।

শেয়ার করুন: