ম্যান্ডেলার অবস্থার কিছুটা উন্নতি, তবে আশংকামুক্ত নয়

nelson-mendela-pusten-kucno-lijecenje-slika-51035উইমেন চ্যাপ্টার (২৮ জুন): বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের চোখ এখন দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে, কোটি মানুষের মনে এখন একটাই প্রার্থনা, তা তাদের প্রিয় নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্য। ৯৪ বছর বয়সী ম্যান্ডেলাকে বুধবার থেকেই রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। ২৭ জুন বৃহস্পতিবার পুরো দিনটিই কেটেছে অনিশ্চয়তায়। এই বুঝি খুলে নেয়া হলো সাপোর্ট। বিশ্ব মিডিয়ার কল্যাণে কে, কখন হাসপাতালে ঢুকছেন, বের হচ্ছেন, সবার নখদর্পণে। প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা তার মোজাম্বিক সফর বাতিল করেছেন, কবর খোঁড়া হচ্ছে, নাতি-নাতনিরা হাসপাতাল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন ভক্তদের দেয়া ফুলগুলো, সবই কোন এক আশংকার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। মিডিয়ার বাড়াবাড়িও চোখে পড়ার মতোন। ম্যান্ডেলার পরিবার এবং দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে গোপনীয়তা রাখার অনুরোধ সত্ত্বেও তা মানা হয়নি। ম্যান্ডেলা নেই- এমন খবরও ছড়িয়েছে বার বার। তবে শেষ বিকেলে পূর্ব প্রিটোরিয়ার মেডিক-ক্লিনিক হার্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া মেডিকেল রিপোর্ট দেখে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সবার মনে।

প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে যে, আইকন ম্যান্ডেলার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে আশংকা কাটেনি। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ম্যাক মহারাজ জানান, সবশেষ মেডিকেল তথ্য সবার মনে প্রশান্তি এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, মাদিবা একজন লড়াকু। জীবনভর তিনি লড়াই করে গেছেন, মৃত্যুতেও করছেন। এর আগে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়কে ম্যান্ডেলার সবশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়।
ম্যান্ডেলার এক মেয়ে জানিয়েছেন, তিনি এখন চোখ খুলতে পারছেন এবং অবস্থা আশংকামুক্ত না হলেও পরিবারের স্পর্শে তিনি সাড়া দিচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মোজাম্বিক সফর বাতিল করে ছুটে গেছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘যাতে তাকে দেখতে পারি এবং চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করতে পারি, সেজন্যই সফর বাতিল করেছি, গতরাতের (বুধবার) তুলনায় তাকে ভাল মনে হয়েছে’। তিনি দেশের জনগণকে ম্যান্ডেলার জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন এবং কাজ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
জল্পনা-কল্পনার একটি দিন

প্রেসিডেন্ট কার্যালয় জানায়, ম্যান্ডেলার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দিনভর যা হয়েছে, তাতে তারা যারপরনাই বিরক্ত। সাবেক এই নেতার গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আবেদন জানানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে দিনভর আলোচনায় ছিলেন ম্যান্ডেলা। তাঁর মেয়ে মাকাজিভি ম্যান্ডেলা তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘বিদেশি গণমাধ্যমগুলো তার বাবার অসুস্থতা নিয়ে যা করেছে, তা খুবই আপত্তিকর। তাদের আচরণ অনেকটাই বর্ণবাদী ছিল, কিছু ক্ষেত্রে তারা সীমাও লঙ্ঘণ করেছে’। তিনি বলেন, ‘তাদের দেখে মনে হয়েছে যেন কোন সিংহ একটা মহিষকে ধরেছে, আর তারা শকুনের মতো অপেক্ষা করছে’। এর আগে তিনি বলেন, টাটার (বাবা) অবস্থা আশংকাজনক, যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। তবে একমাত্র ঈশ্বরই জানেন, কখন আসল সময় আসবে, আর তিনি চলে যাবেন। তিনি বাবার সাথেই আছেন, এখনও চোখ মেলছেন, শেষ আশাটুকু যতক্ষণ আছে, ততক্ষণই পাশে থাকবেন বলেও জানান মাকাজিভি।

এদিকে বর্তমানে আফ্রিকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সেনেগালে পৌঁছে বলেছেন, তাঁর চিন্তা এবং প্রার্থনা রইলো দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের সাথে, বিশেষ করে ম্যান্ডেলার পরিবারের সাথে। তিনি বলেন, নব্বই দশকের শুরুতে আইন স্কুলের ছাত্র হিসেবে তিনি ম্যান্ডেলাকে দেখে প্রচণ্ড উৎসাহিত হয়েছিলেন। ওবামা স্মরণ করেন যে, ম্যান্ডেলা তখন দুই যুগেরও বেশি সময় কারাগারে থেকে বেরিয়ে এসে নির্যাতক সরকারের সাথেই ঐকমত্যে পৌঁছান এবং দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ম্যান্ডেলার এই পদক্ষেপ তাকে এটাই ধারণা দিয়েছিল যে, মানুষ যখন ইতিবাচক হন, যখন ভাল কিছু ভাবেন, একসাথে কাজ করেন বৃহত্তর স্বার্থে, তখন সবকিছুই সম্ভব। ম্যান্ডেলাকে তিনি তার ব্যক্তিগত ‘হিরো’ বলেও অভিহিত করে বলেন, এখন যদি তিনি চলেও যান, তারপরও তার কর্ম যুগ যুগ ধরে মানুষকে পথ দেখাবে।

ম্যান্ডেলার লাইফ সাপোর্টের খবরে বিশ্বজুড়ে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা, মানুষ প্রার্থনা করছেন অবিসংবাদিত এই নেতার জন্য, যিনি কিনা শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা নেতাই নন, বিশ্বের আপামর নিপীড়িত মানুষের লড়াকু মনোভাবের প্রতীকও।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.