সুপ্রীতি ধর: সাম্প্রতিক সময়ে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার খবর শুনে শুনে মনটা বিষিয়ে উঠেছে। দিনভর মাথায় একটি বিষয়ই ঘুরেফিরে আসে। দেশে কি ধর্ষণের মহোৎসব চলছে? ভাবি যে, শহরের কেন্দ্রে গিয়ে নিজের শরীরের কাপড় খুলে দাঁড়িয়ে ধর্ষকদের আমন্ত্রণ জানাই, ‘আয় কতো ধর্ষণ করবি তোরা, কতবার করবি? তোদের ধর্ম তোদের এই শিখিয়েছে? তোদের ক্লান্তি লাগে না? সেই একাত্তর থেকে ২০১৬, একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছিস, আগে তোদের বাপ-দাদারা করতো, এখন তোরা করিস, এরপর তোদের ছেলেরা করবে। এভাবেই চলতে থাকবে একটি দেশের ইতিহাস। এতো হতে পারে না। হতে দেয়া যায় না।
এক পরিসংখ্যানে জানলাম, ২০১৫ সালে সারাদেশে ৮৫ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ২৬ জন, হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে, ১১ জন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, ধর্ষণের চেষ্টা ১৬ জনকে, ৫টি অপহরণ, ৬টি শারীরিক ও যৌন হয়রানি এবং দুটি পাচারের ঘটনা ঘটেছে।
এতো গেল আদিবাসীদের খবর, যা মূলধারার পত্রিকায় স্থানই পায় না তেমনভাবে। সেনাবাহিনীর কব্জায় থেকেও এতোসব ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত, সেখানে কুমিল্লা সেনানিবাসের সুরক্ষিত জায়গায় সোহাগী তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ফেলে গেল ধর্ষকরা, এতোটা সময় নিলো, কেউ টেরও পেল না? আশ্চর্য লাগছে না আপনাদের?
একজন মেয়ে যখন মা হয়, তখন কতোটুকু শক্তি তার লাগে একটি তিন কেজি-চার কেজি ওজনের বাচ্চা প্রসব করতে? তাও আবার হাত-পা-মুখ-মাথাসহ? আর শিশুটি যদি উল্টা হয়ে থাকে মায়ের পেটে, তখন সেই বাচ্চাকে স্বাভাবিক পন্থায় বের আনার বিষয়টি গ্রামের ধাত্রীরা ভালো করেই জানেন। কী ভয়াবহ কষ্ট সেই মাকে পেতে হয়, এটা যে জানে, সেই জানে।
পুরুষদের বলছি, আপনারা তো কখনও মা হতে পারবেন না, তাই জানবেনও না, বাচ্চা প্রসবের সময় মায়ের কষ্ট কী পরিমাণ হয়! এখনকার মেয়েরা এই কষ্ট নিতে চায় না, তারা অপারেশন করে সন্তান জন্ম দেয়, পরমূহূর্তেই হাসিমুখে ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে। পুরুষরা ভাবে, বাহ, কত সহজ তো বিষয়টা! মূহূর্তের আনন্দের ফসল তাহলে এভাবেই জন্ম নেয়?
হে পুরুষকুল, ধর্ষণের নামে আপনারা যে যোনিপথ আজ ক্ষতবিক্ষত করছেন, সেই পথ দিয়েই কিন্তু বেরিয়ে ছিলেন আপনি এবং আপনার মতো ধর্ষকদল। সেদিন যদি আপনার মা আপনাকে পৃথিবীতে না আনতো? অথবা জন্মের পরপরই মুখে দুধ তুলে না দিয়ে লবণ খাইয়ে দিতো, তাহলে? আজ যে মেয়েদের জীবনের আলো আপনারা নিভিয়ে দিচ্ছেন, বা তাদের জীবনে কালিমা লেপে দিচ্ছেন নিজেদের যৌনাকাঙ্খা চরিতার্থ করতে, সেই মেয়েটিও তো একদিন মা হতো বা হবে ভবিষ্যতে। হয়তো আপনাদের মতোন কতক কুলাঙ্গারও জন্ম দেবে।
আজ মেয়েদের উচিত, একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া, আর তারা ছেলে সন্তান জন্ম দেবে না। ভ্রুণ অবস্থাতেই মেরে ফেলবে।
জিজ্ঞাসা করুন নিজের মাকে, যে মেয়েরা দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তাদের যোনি আর স্তনের সাথে আপনার মায়ের যোনি বা স্তনের কোনো পার্থক্য আছে কীনা! জিজ্ঞাসা করুন। একটি মেয়ে মানেই যদি ভোগের বস্তু হয়, যৌনাঙ্গ সর্বস্ব হয়, তবে তো আপনার মা-বোনও তাই, তাই না? তাহলে পারবেন মা-বোনকে ধর্ষণ করতে? আপনাদের যে অবস্থা, তাতে আমার মনে হয়, সেই বাছবিচার করার বোধও আপনাদের লোপ পেয়েছে।
আজ ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাকে জানেও মেরে ফেলেছে। এসব পুরুষের পারভারসন কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে আজ। আর ঘটনাটি সেনানিবাসের ভিতরে ঘটায় তনুর পরিবারও পড়েছে বিপদে। অনেক মিডিয়ার মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, কারণটা অবশ্যই আমরা জানি। কিন্তু মিডিয়া কেন সেই কথা শুনবে?
একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী মূল আঘাতটা এনেছিল এই নারীদের নিগ্রহের মাধ্যমেই। একটা জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে, তাদের সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে চাইলে, সর্বোপরি তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইলে সেই জাতির নারীদের ওপরই নির্যাতন হয় বিশেষভাবে। এটা হয়ে আসছে যুগে যুগে প্রতিটি যুদ্ধে। ধর্ষণ হচ্ছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তাহলে কী ধরে নেবো আমাদের দেশে পুরুষরা নারীদের প্রতিপক্ষ ভেবেই একের পর এক প্রতিশোধ নিচ্ছে?
নইলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এভাবে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে কেন ধর্ষণ-সংস্কৃতি?
ধর্ষণের কারণ হিসেবে নারীদের পোশাককে দায়ী করা হচ্ছে। একটা তিন বছরের বাচ্চাকে যখন ধর্ষণ করা হয়, তখন ওই শিশুটির পরনে কোন পোশাকটি থাকে? বা বৃদ্ধা নারীকেও যখন রেহাই দেয়া হয় না, তার পরনে কোন পোশাকটা থাকে, যা দেখে পুরুষদের ঈমাণদণ্ড খাড়া হয়ে যায়? আর সেটিকে তখন শান্ত করতে বেছে নেয়া হয় এই অস্ত্র? তনু তো হিজাব পরেছিল নিজেকে রক্ষা করতে বা মুসলমান মেয়ে হিসেবে নিজের ধর্ম রক্ষা করতে। ধর্ষকদের যে কোনো ধর্ম নেই, বাচ্চা মেয়েটা বুঝলো না। ওদের লোলুপ দৃষ্টি যে হিজাবের মতোন বাড়তি কাপড়ও ভেদ করে ভিতরে ঢুকে পড়ে, তাতো ধর্ম দিয়েও আটকানো যাচ্ছে না। এখানে ধর্ম না, প্রয়োজন রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
হেফাজত নেতা শফী যখন নারীদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করেছিল, তখন সরকার থেকে শুরু করে আপামর জনতা কেন ফেটে পড়েনি? কেন এই বক্তব্যকে সকলে নিজের ঘাড়ে টেনে নেয়নি? ভাবেনি যে, এই কথাটা তার ঘরের মেয়েদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? উপরন্তু সরকার থেকে সেই শফীকে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে, জায়গা-জমি দিয়ে হাত করা হয়েছে। তলে তলে কতো টাকার হিসাব-নিকাশ হলো, আমরা জানতেও পারলাম না। শুধু বুঝতে পারছি, দেশে এখন অন্যরকম এক একাত্তর-অবস্থা বিরাজ করছে।
আদিবাসী-সংখ্যালঘু-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সব মেয়েই আজ অনিরাপদ। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ঘরে-বাইরে। এর কতক খবর আমরা জানতে পারছি, বেশিরভাগই থেকে যাচ্ছে অজানা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুটপাট হচ্ছে, ব্যাংকের গচ্ছিত ধনসম্পদ বেহাত হচ্ছে, ভিন্নমতকে থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। সর্বক্ষণ হত্যা-খুন-গুম-অপহরণের ভয় নিয়ে মানুষ এখানে বাস করছে আজ।
সোহাগীর মৃত্যুতে মধ্যবিত্ত সমাজের টনক নড়েছে, কারণ সে নাট্যকর্মী ছিল, সে কলেজে পড়তো, তার সুন্দর মুখশ্রী মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু একই বিবেক ঘুমিয়ে থাকে শত শত আদিবাসী মেয়ের লাঞ্ছণার খবরে, শত শত সংখ্যালঘু পরিবারের উচ্ছেদের খবরে।
প্রতিবাদী সংস্কৃতি আজ বিত্তবান আর বিত্তহীনদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে গেছে। শুধু সোহাগী তনু কেন, কোনো তনুই যেন এভাবে হারিয়ে না যায়, সেজন্য জোরালো একটা আন্দোলন হওয়া প্রয়োজন ছিল না কী! যতোটুকু আগামী কয়দিনে হবে, তাও দুদিন পর থেমে যাবে, অভিজ্ঞতা থেকেই জানি। নির্ভয়ার ঘটনায় পুরো ভারত জেগে উঠেছিল, কারণ তাদের অধিকাংশই সরকারের কাছে মাথা বিক্রি করে দেয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে জাস্ট শো-অফ হবে দুদিন, তারপরই শেষ। আর বিষয়টা যেহেতু সেনাবাহিনীর করায়ত্তে, কাজেই ইতি টানতে সময় লাগবে না।
আজ পর্যন্ত একটা ধর্ষণ মামলারও কোনো সুরাহা হয়নি, গ্রাম্য সালিশে ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকেই উল্টা দোষারোপ করা হয়, মেয়েটি একদিকে ধর্ষণের শিকার হয়ে মরমে মরে থাকলেও তাকে তিলে তিলে মারার ব্যবস্থা করে দেয়া হয় সেই ধর্ষকের সাথেই বিয়ে দিয়ে। কী আশ্চর্য মানুষের বিচারবুদ্ধি! এর কারণ হচ্ছে, মেয়েরা সোচ্চার হচ্ছে না, গ্রামের মেয়েরাও যদি লাঠিয়াল হয়ে উঠে নিজেদের বা নিজ কন্যাদের বাঁচাতে, তাহলে ভয় পেতে বাধ্য ওসব নরপুঙ্গবরা। ওসব শফি-টফি তখন কোথায় পালাবে!
তাই বলছিলাম কী, পুরুষমাত্রই যদি লোলপুদৃষ্টি ভরা ধর্ষক হয়ে থাকে, তারা যদি আমাদের প্রতিপক্ষই ভেবে থাকে, তারা যদি ধরেই নেয় আমাদের মাথা-আমার মন-আমার বুদ্ধি-বিবেচনা-মেধা বলে কিছুই নেই, যা আছে সবটাই এক যোনি আর স্তন, তাহলে সেই পুরুষ পুঙ্গবদের বলছি, সাহস থাকলে আসো, ধর্ষণ করো। ধীরে ধীরে আমরাও পাল্টা ধর্ষণ করতে শিখে যাবো, তোমার শিশ্নের জোর কিভাবে কমাতে হয়, তাও জানি, শুধু কায়দাটা আয়ত্ত করা বাকি! সেদিন বেশি দূরে না, যেদিন আমরা এটাও শিখে নেবো। সেদিনও আজকের মতোই আমন্ত্রণ জানাবো ধর্ষকদের।
পুরাটা লেখাই পড়লাম।
হুম বুঝতে পারলাম মনে হয় আমরাই দুনিয়ার সব চাইতে খারাপ । তাই নয় কি সুপ্রতি দি
নৈতিকতার চর্চা আর আইনের কঠোর শাসন ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ নাই।
আমেরিকায় আর ইন্ডিয়ায় পুরুষদের কোন দন্ড দাঁড়ায় সেটা আমার জানার খুব ইচ্ছে। 😀
সমাজ সভ্যতা আজ কোথায় চলেছে,,,,এই সমাজ আর ভাল কিছু উপহার দিতে পারে না,,,,,পাল্টাতে হবে,,,,আসুন উন্নত নৈতিকতার জন্ম দিই ।
very analytic and constructive writing- your problem solving way is also interesting.
মূলে ফিরে যেতে হবে। ধর্ষন বন্ধ করার কঠোর বিধান আছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করুন। পারবেন?
যা দেখে পুরুষদের ঈমাণদণ্ড খাড়া হয়ে যায়?
It should be purushder shivalinga khara hoye jai.
Lenja is very difficult to hide
আমি বিস্মিত ,স্বম্ভিত, লজ্বিত এমন পৈশাচিক কাজটিও কি ঐ নর পশুগুলি করতে পারল আমার এই মাতৃভূমিতে ? আমি আবার ৭১ হতে চাই আমি ধ্বংশ করে দিতে চাই ঐ পশুদের সমূলে , আমি আমার মায়ের, বােনের, স্ত্রীর সম্ব্রম বাচাতে চাই, অধিকার চাই
নরপশু
নারীকে ধর্ষণ করতে হবে একথা ইসলামের কোন পাতায় লেখা আছে আমাকে বলতে পারবেন? যেখানে বেগানা নারীকে দেখা হারাম করা হয়েছে? একটা যুবতি নারীর দেহে যা আছে একটা ৩ বছরের শিশু নারী তা আছে। একটা যুবতি নারীকে দেখলে পুরুষের ঈমানদন্ড নয় বরং যৌন দণ্ড দাঁড়িয়ে যায়। যদি ঈমান দন্ড দাঁড়াত তাহলে ধর্ষণ নয় বরং বোন ডেকে আড়ালে যেতো। ঈমানদার কাকে বলে সেটা জেনে তার পরে ইসলামের দোষারূপ করেন। জ্ঞানপাপিদের মতো অযথা ইসলামকে দোষারূপ করবেন না। দেশে নারীকে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে চান? তাহলে নারীকে যারা ব্যবসার পণ্য হিসাবে ব্যবহার করে তাদের প্রতি সোচ্চার হোন। আমরাও আপনাদের সাহসের জোর দেখি।
সুপ্রীতি দি, আপনার শিরোনাম দেখে খটকা লাগল। ধর্ষণ পুরুষকুল করছে না, করছে কা-পুরুষকুল। আসলে কাপুরুষদের দায় কেন সমাজ নিবে? সমাজ জেগে ওঠো।