একে-অপরকে আরেকটু ভালবাসুন

নায়না শাহরীন চৌধুরী: কয়েকদিন যাবত অস্বাভাবিক কিছু খবর না চাইলেও কানে এসে পড়ছে। এবং সত্যি বলতে, আমার রুচি হয়নি সেগুলো পত্রিকা খুঁটিয়ে পড়তে বা টেলিভিশনে খুঁজতে। অনেক মেয়ের মতো আমিও বিষণ্ণতার সাথে একাকি যুদ্ধ করেছি। তাই মন খারাপের খবরগুলো এড়িয়ে চলা অভ্যাস হয়ে গেছে।

Feminismসেদিনও দেখলাম, মানসিক ভারসাম্যহীন এক মায়ের ঘটনা। এসব নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। আমি চাইনি কিছু লিখতে। কেন লিখবো, লিখে কী লাভ হবে। এখন তো মনে হয় এই মানসিক ভারসাম্যহীনতা মহামারী রূপ নিয়ে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ঐ মাগুলোকে যারা দোষারোপ করছেন, তারা কি বুকে হাত রেখে বলতে পারেন, সত্যি কী কোন স্বাভাবিক মা এরকম করতে পারেন?

সন্তান যখন মায়ের পেটে আসে, তখন থেকেই মাতৃত্ব নামক হরমোনটি প্রবাহিত হতে থাকে। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুর জন্যেও, অন্তত এ কারণে, মায়ের মনে কী পরিমাণ মমতা থাকে তা মা ছাড়া কেউ জানে না। একটি মেয়ে এমন পুরুষকে সঙ্গী হিসেবে চায় যে তার সন্তানকে বিপদ থেকে বাঁচাবে। এগুলো খুব মূল আর আদিম ব্যাপার। সেই মূল ব্যাপারটা কখন মার খেতে পারে? একটু মিলিয়ে দেখুন তো।

অনেকেই বলেন, বাচ্চা হওয়ার পর ও কেমন খিটখিটে হয়ে গেছে। কেন? একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখলে কী খুব সময় নষ্ট হবে আপনার?

আসলে বলবোই বা কাকে, যখন পরিবার-সমাজ সবাই এমন একটা স্বভাব আত্মস্থ করে ফেলেছে, যেখানে, কে কখন খেলো, কারো খোঁজ খবর নেওয়া, বাসায় যাওয়া, দুঃখ পেলে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়া, প্রাণবন্ত আড্ডা দেওয়া, সর্বোপরি মানবিকতার সংস্কৃতি উধাও হয়ে যাচ্ছে। আমরা যারা এপার্টমেন্ট নামক বস্তুটিতে থাকি, তারা ক’জন পুরো বিল্ডিঙের মানুষদের চিনি?

ভাইয়া, আপনাকে বলছি, বাসায় গিয়ে আপুর সাথে কথা হয় তো? নাকি ফেসবুক, টিভিতে রঙিন আপনার দুনিয়া? শেষ কবে বৌটার হাত ধরেছিলেন, শুধু ভালোবেসে, যৌন হরমোনের প্রভাবে নয়। হাত বাদ দিন, চোখের দিকে কবে তাকিয়েছিলেন শেষ?

প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে দেখে নিন।

আমরা কী এরপরও একটা সুস্থ মানুষ, মা, পরিবার, বা জাতি আশা করতে পারি?

Frida Kahloযখন মা বা বৌটা অস্বাভাবিক আচরণ করে, তখন রাগ ছাড়া আর কী করেছেন? গুড়ো সাবানের অ্যাড তো দেখেন। বোঝেন কিছু? গভীরে গিয়ে ময়লা সাফ করে।

একটু গভীরে যান না। গেলে তো আপনারই লাভ। আমরা কী তা করি?

ডেকি মুরগি দেখেছেন? ছোটোবেলায় আমার একটা মুরগি ছিল। সেটা ডিম পেড়ে কী কারণে যেন ২/৩টা ডিম ঠোকর দিয়ে খেয়ে ফেলতো। কেন করতো ঠিক জানি না।

মানুষ তো আর মুরগি না ভাই, একটু জানার চেষ্টা করেন না!

জানি, এতো কিছুর পরও কারো বোধোদয় হবে না। এবং যে ধরনের ঘটনা ঘটছে তার সংখ্যাটা বাড়বে। সবাই ভাববে, আমার বৌ এমন না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কী ঘটবে কেউ টের পাওয়ার আগেই ভয়াবহ সেই ঘটনাটা ঘটে যাবে।

ভাই, আমি মানছি, আপনারা শুধু সুস্থ না, রীতিমতো তার চেয়েও এক কাঠি উপরে। তবু অনুনয় করেই বলছি, সাবধানের তো মার নেই। খুব গোপনে মানসিক অবস্থাটা কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাচাই করিয়ে নিন।

মেদ ভুড়ি, টাক চিকিৎসা কত কী করালেন। এবার না হয় এটাও একটু করেন। চিকিৎসা? পারস্পরিক ভালবাসার থেকে বড় ওষুধ কি আর আছে? ঐটার ডোজ আরেকটু বাড়িয়ে দেখুন না! কষ্ট, হতাশা, বিষণ্ণতার ভূত ফুড়ুৎ করে পালিয়ে যাবে। একবার অন্তত আমার কথা মিলিয়ে নিন।

লেখক ও সঙ্গীতশিল্পী

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.