নির্ঝর রুথ ঘোষ: বাংলাদেশের শিক্ষিত পুরুষ জনগোষ্ঠীর অনেকেই একটা ব্যাপার নিয়ে আশ্চর্য হন।বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে আলটপকা মন্তব্য করে বসেন সে বিষয়ে।
যেহেতু বিষয়টা “সংরক্ষিত নারী আসন” নিয়ে, তাই তাদেরকে খুব উচ্চকণ্ঠ দেখা যায়।তাদের মতে, “সম অধিকারই যদি চান, তাহলে যানবাহনে সংরক্ষিত মহিলা আসন রেখেছেন কেন?” অনেকে এই লেখাটা দেখার পরও সংরক্ষিত আসনে বসে পড়েন এবং অনুরোধ করার পরও উঠতে চান না।
বলেন, “মেয়েরা তো ঠিকই পুরুষদের সিটে বসে আছে। তাহলে আমি কেন এই সিটে বসতে পারবো না?”
বেশ, আপনি জানতে চান কেন সম অধিকার চাওয়ার পরও আমরা সংরক্ষিত আসনের দাবিদার? জানতে চান কেন মেয়েরা সংরক্ষিত আসন ছাড়াও অন্যান্য আসনে বসার অধিকার রাখে? তাহলে চলুন কিছু ফ্যাক্ট জেনে নিই।
যানবাহনে “সংরক্ষিত নারী আসন” ছাড়া যতগুলো আসন আছে, সবগুলোই সব লিঙ্গের জনগণের বসার জন্য রাখা হয়েছে। তাই এসব কমন সিটের উপর কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের অধিকারসূচক তকমা জুড়ে দেওয়া হয় না। এখানে যে কেউই বসতে পারবে। আপনি যদি ভেবে থাকেন নয়টি সংরক্ষিত আসন ছাড়া বাকিসব আসনই “পুরুষদের সিট”, তাহলে ভাবনাটা ভুল। ভুল ভেঙে সামনে এগিয়ে চলুন।
“সংরক্ষিত নারী আসন” লেখা আসনগুলো শুধুমাত্র নারীদের জন্য রাখা হয়েছে। নারীরা ইচ্ছে করলে এগুলোতে বসতে পারে, অথবা কমন আসনেও বসতে পারে। যে যেভাবে স্বস্তি অনুভব করেন আর কি।
হ্যাঁ, সম অধিকার নিয়ে আমরা সোচ্চার হই। কিন্তু তারপর আবার আমাদের জন্য আলাদা কিছু আসনও দাবি করি। কিন্তু কেন? আপাতদৃষ্টিতে দেখলে এই আসনগুলোর জন্য সব লিঙ্গের অধিকার “সম” থাকছে না, নারীদের অধিকার বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, বাসে কখনও চড়েছেন? চড়লে অবশ্যই জানেন পুরুষ এবং নারীর উঠার প্রক্রিয়া, সিটে বসার প্রক্রিয়া, সিট না পেলে দাঁড়িয়ে থাকার প্রক্রিয়া, ইত্যাদি।
যেভাবে হুড়োহুড়ি করে পুরুষ গাড়িতে উঠে, সেভাবে নারীরা উঠতে পারে না। হ্যাঁ পারতো, যদি পুরুষ হুড়োহুড়ির সময় মেয়েদের গায়ে হাত না দিতো। বলতে পারেন, “হুড়োহুড়ির সময় পুরুষের গায়েও পুরুষের হাত লাগে। এটাকে এত বড় করে দেখার কী আছে?”
হ্যাঁ, বড় করে দেখছি কারণ আমরা জানি, কোন স্পর্শ ইঙ্গিতবহুল, আর কোনটা নির্দোষ। ৯০% পুরুষের স্পর্শ হয় যৌন নির্যাতনমূলক। নাকি শতকরার হিসেবটা কম বলে ফেললাম?
অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ দয়াপরবশ হয়ে নিজের আসন ছেড়ে দেয়। তাদের মধ্যেও কয়েকজনকে দেখা যায় সুযোগ নিতে। কেমন?
যে নারীকে আসন ছেড়ে দেওয়া হলো, ঐ নারীর আশেপাশেই উপকারীর ভেক ধরা পুরুষটি দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর সময়ে-অসময়ে নারীর গায়ে হেলে পড়ে, হাত লাগায়, পুরুষাঙ্গটি ঠিক নারীর মুখের সামনে এনে দাঁড়িয়ে থাকে।
এই যদি হয় উপকারের নমুনা, তাহলে সিট ছেড়ে দেওয়ার দরকার কী ছিলো? সিটে বসার পরও তো নারীটা নিরাপদ বোধ করতে পারছে না!
এ সম্পর্কে একটা ঘটনার কথা না বলে পারছি না। ওরকম অভিজ্ঞতা আমার ওটাই প্রথম, ওটাই (আশা করি) শেষ।
ছয় নাম্বার লোকাল বাসে চড়ে গুলশান থেকে মগবাজার আসছি। বসেছি সংরক্ষিত নারী আসনের একটিতে। আমার ঠিক পাশেই দাঁড়ানোর জায়গা। সেখানে অন্যদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন যুবক। সে আমার ঠিক বাম পাশে দাঁড়িয়ে আছে, মুখ আমাদের রো-এর দিকে। তার গায়ে একটা টি-শার্টের উপর একটা শার্ট জড়ানো। একটু পর সেই যুবক তার শার্ট সরিয়ে ভেতরের টি-শার্টটাকে আরেকটু উন্মুক্ত করলো। সেদিকে চোখ যেতেই চমকে গেলাম। টিশার্টে ব্রা এবং প্যান্টি পরা একজন তরুণীর ছবি প্রিন্ট করা। ছেলেটা এমনভাবে দাঁড়িয়েছে যে, তার শার্টের কারণে আশেপাশের কেউ টিশার্টের প্রিন্ট দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু যেহেতু সে আমাদের দিকে মুখ করে রেখেছে, তাই আমাদের রো-এর তিনজন মহিলাই ছেলেটিকে দেখতে পাচ্ছি।
তিনজনই আমরা নিজেদের মাঝে তাকাতাকি করে বিস্ময়ের অনুভূতি প্রকাশ করলাম।
কিন্তু কারও রুচি যদি এরকম টিশার্ট পরে ঘোরাঘুরি করার মতো হয়, আমরা কী করবো? ছেলেটার থেকে চোখ ফিরিয়ে তিনজনই অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। এক পর্যায়ে ছেলেটা ওর ডান হাতটা খুব নাড়াচাড়া করতে শুরু করলো। আপনি যতই অন্যদিকে মনোযোগ দিতে চান না কেন, পাশে কেউ যদি নড়াচড়া করে, আপনি একবার হলেও তাকাবেন। আমিও তাকালাম। তাকিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ধাক্কাটা খেলাম। ছেলেটা প্রিন্টের তরুণীটির স্তন আর যৌনাঙ্গের উপর হাত বুলাচ্ছে। এবার সরাসরি ছেলেটার দিকে তাকালাম। কিন্তু চোখাচোখি হওয়ার পরও ওর চোখে কোনো লজ্জা নেই, আছে একজন মেয়েকে টিজ করার কুৎসিত আনন্দ।
এ তো গেলো বসে থাকা অবস্থায় মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার চিত্র। তাহলে চিন্তা করুন, একজন নারী দাঁড়িয়ে থাকলে তার উপর কেমন হয়রানি নেমে আসে?
যানবাহনে তো আর “নারীদের দাঁড়ানোর জন্য সংরক্ষিত জায়গা” নেই। তাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একই জায়গায় দাঁড়াতে হয়। ফলে সামনে, পেছনে, কিংবা পাশ থেকে পুরুষের হাত, পা, বাহু এগিয়ে আসে নারীর দিকে।
এসব ক্ষেত্রে অনেক নারীই পুরুষকে সরে দাঁড়াতে বলেন। তখন কী ঘটে? পুরুষ উল্টো মেজাজ দেখিয়ে বলে, “লোকাল বাসে উঠলে ধাক্কা লাগবেই। এত সমস্যা হলে প্রাইভেট কারে যান না কেন?” এই মন্তব্যকে সমর্থন দেওয়ার মতো অনেক মাথামোটা পাবলিক দেখা যায়। এরা সবাই ঠিকই বুঝে যে, পুরুষটা বাজেভাবে নারীকে স্পর্শ করেছে দেখেই নারী তাকে সরে দাঁড়াতে বলেছে। কিন্তু বুঝেও তারা স্বজাতির পক্ষে দাঁড়ায়।
অনেক নারী এইসব উল্টো প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আশংকা থেকে পুরুষকে সরতে বলার মতো সাহস পান না। লজ্জা তাদেরকে আঁকড়ে ধরে রাখে। নিজেরা সরে যান। কিন্তু সরে যাবেন কোথায়? অন্য পাশেও তো লোলুপ আগ্রহ নিয়ে আরেকজন পুরুষ দাঁড়ানো!
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হয়ত ৯০%বা তারচেয়েও কম পরিমাণ নারী নির্যাতনকারী পুরুষকে লক্ষ্য করে চিৎকার করা, সাবধান করে দেওয়া, বা প্রতিবাদ করার মতো সাহস অর্জন করতে পারেন। আবার এর চেয়েও কমসংখ্যক নারী চড় থাপ্পর মারার সাহস করে উঠতে পারেন।
নারীর লজ্জার কারণেই পুরুষরা দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে। এ কারণেই যানবাহনে এত যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে।
এবার বলুন, “সংরক্ষিত মহিলা আসন” কেন দেওয়া হবে না? বাসের সব সিট যখন পুরুষের দখলে থাকে, তখন গিজগিজ করা পুরুষের মাঝে দাঁড়িয়ে একজন নারী কেন যৌন নির্যাতনের শিকার হবে? তাই সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা পুরোপুরি যৌক্তিক।বর্তমানে নয়টি আসনকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হলেও, আমার মতে, সংরক্ষিত আসন আরও বাড়ানো উচিৎ। যতক্ষণ পর্যন্ত নারী না উঠছে, পুরুষ বসুক ঐ সিটে, সমস্যা কোথায়? কিন্তু মহিলা দেখলে অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে।
যদি পুরুষরাআমাদের “সংরক্ষিত মহিলা আসন”কে অযৌক্তিক বলতে চান, তাহলে নিজেদের আচরণ ঠিককরে আসুন। আপনারা হয়রানি না করলে আমাদেরও আপনাদের পাশে দাঁড়াতে, বসতে কোনো সমস্যা নেই। একজন ভদ্র-সভ্য পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমি যদি নিজেকে নিরাপদ মনে করি, তাহলে বাড়তি সুবিধাযুক্ত “সংরক্ষিত মহিলা আসন”-এর দরকার কী?
৮ মার্চ আমার এক মুখবই বন্ধুকে দেখলাম “সংরক্ষিত মহিলা আসন” নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে। বলেছে, “পুরুষগণ কিন্তু নারীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলতে আগ্রহী! নারীরাও তাই চায়! কেবল বাসে উঠে পুরুষের পাশে খালি সিট থাকতেও সংরক্ষিত আসন খুঁজে!পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ রেখে পথচলা মানেই পাশাপাশি বাসে বসে পথ চলা নয়! এভাবে আরো অনেক আচরণই আমাদের নারী-পুরুষকে আলাদা ভাবতে শিখায়!”
বললাম, “কেন খুঁজি জানো? পাশে বসলে ৯০% পুরুষ চান্স নেয়। এটা যেদিন বন্ধ হবে, আমরা বাসের শেষ সিটে বসা শুরু করবো, সমস্যা নেই।”
আরও অনেক মেয়েকেই দেখলাম নিজের হয়রানির অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সংরক্ষিত আসনের যৌক্তিকতা তুলে ধরছে। এমনই একজনের মন্তব্য ছিলো, “কাঁধে কাঁধ রেখে চলা যায় যদি সেই স্পর্শ অশুচি না হয়। কাল অটোতে বসে একটাকে লাথি মারসি। পায়ে পা ঘষতে চাইছিলো”। এই মন্তব্যের বিপরীতে বন্ধু বললো, “একদিন তুমিও পা ঘষে দিও। কোন পুরুষ ঘষার আগে তুমি দিও”।
কিছুক্ষণ তাজ্জব হয়ে রইলাম এই মন্তব্য পড়ে। মানে, বিকৃত যৌনতা বন্ধ করার কোনো চেষ্টা চলবে না? উল্টো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মেয়েদেরও এই পথে হাঁটতে হবে? বন্ধুটি যদি এই মন্তব্য মজা করেও বলে থাকে, সেটাও ঠিক হয়নি। কারণ এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মজা করা মানায় না। সব বিষয় মজার জন্য নয়।
আমি এই কথাগুলো বলার পর বন্ধুর মন্তব্য হলো, “বন্ধ করার প্রচেষ্টা কীভাবে সম্ভব, পুরুষদের এড়িয়ে চলা? আলাদা হয়ে যাওয়া? পা এর সাথে পা লাগিয়ে দেওয়াটা পুরুষের ক্ষেত্রে যৌনতার স্বাদ মনে হলেই আপনি আমি কেন সেভাবে ভাববো! আপনার কিংবা আমার বা অন্য কারও পা কি কোন যৌনাঙ্গর পর্যায়ে পরে? যদি নাই পরে তবে আপনি পা ঘষে দিয়ে পাল্টা আঘাত করলে দোষ কি? তাছাড়া একটা পুরুষের সামনে যদি আপনি স্বাভাবিক না হতে পারেন, আড়ষ্ট হয়ে ভয়ে ভয়ে থাকেন কিংবা যদি বুঝিয়ে দেন আপনি দুর্বল, তবে পুরুষরা সুযোগ খুঁজবে।”
আমি চিন্তা করলাম, প্রতিটা লাইনের বিপরীতে আমার যুক্তি তুলে ধরবো। বন্ধুটি হয়ত বিস্তারিতভাবে চিন্তা না করেই এইসব কথা বলছে। আমার মন্তব্য যদি তাকে নতুন করে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে, মন্দ কী? আমি ঠিক এভাবে বললাম,
১) বন্ধ করার প্রচেষ্টা কিভাবে সম্ভব, পুরুষদের এড়িয়ে চলা? আলাদা হয়ে যাওয়া?
উত্তর: মেয়েরা পুরুষদের এড়িয়ে চললে বা আলাদা হয়ে গেলে কীভাবে পুরুষের বিকৃত যৌনতা বন্ধ হবে, বুঝলাম না। এতে তো পুরুষের বিকৃত আচরণ রয়ে যাচ্ছেই। বরং মেয়েরা যদি বারবার নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে চায়, সেটা তো তাদের উপরই চাপ পড়ছে। তাই না?
বন্ধ করার প্রচেষ্টা একমাত্র পুরুষের দ্বারাই সম্ভব। তাদেরকে নিজেদের আচরণ ঠিক করতে হবে। যৌন অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে।
২) পা এর সাথে পা লাগিয়ে দেওয়াটা পুরুষের ক্ষেত্রে যৌনতার স্বাদ মনে হলেই আপনি আমি কেন সেভাবে ভাববো!
উত্তরঃ কখনও কারও যৌন হয়রানিমূলক স্পর্শ পেয়েছো? না পেলে আমার উত্তর সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারবে না।
একজন পুরুষ যখন আমার পায়ে তার পা লাগিয়ে “সুখ” নেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন যেভাবে সে পা ঘষছে, এটা স্বাভাবিক ধাক্কার স্পর্শ নয়। তাই অবশ্যই আমার কাছে ব্যাপারটা অস্বাভাবিক অনুভূত হবে।
৩) আপনার কিংবা আমার বা অন্য কারও পা কি কোন যৌনাঙ্গর পর্যায়ে পরে?
উত্তর: পা, হাত, পেট, পিঠ, ঊরু ইত্যাদি কিছুই প্রাইমারি যৌনাঙ্গ নয়। কিন্তু এই অঙ্গগুলোর প্রত্যেকটাকেই যৌনানুভূতি জাগানোর জন্য ব্যবহার করা যায়, জানো তো? তাই যে আমার এইসব অঙ্গে অযাচিত স্পর্শ করছে, সে খুব ভালো করে জেনেই করছে যে, এই স্পর্শ তার মধ্যে কাম জাগাবে। আর আরেক জনের কাম জাগানোর পাত্র হলে আমার কেমন লাগতে পারে? এটা কি সুখের বিষয়, নাকি গা ঘিনঘিনে অনুভূতির ব্যাপার?
৪) যদি নাই পরে তবে আপনি পা ঘষে দিয়ে পাল্টা আঘাত করলে দোষ কী?
উত্তর: পা ঘষে কখনও আঘাত দেওয়া যায়? লাত্থি মেরে দেওয়া যায়। আমি যদি পাল্টা আঘাত করতেই চাই, লাথি মারতে হবে। তুমি কেন ঘষার কথা বলেছো, আমি নিশ্চিত না।
৫) তাছাড়া একটা পুরুষের সামনে যদি আপনি স্বাভাবিক না হতে পারেন, আড়ষ্ট হয়ে ভয়ে ভয়ে থাকেন কিংবা যদি বুঝিয়ে দেন আপনিদুর্বল, তবে পুরুষরা সুযোগ খুঁজবে।
উত্তরঃআমি কোনো পুরুষের সামনে অস্বাভাবিকভাবেও থাকি না, আড়ষ্ট হয়েও থাকি না, আমার আচরণের মাধ্যমে কোনোভাবেই এটা প্রকাশিত হয় না যে আমি দুর্বল। তারপরও কি আমি হয়রানির শিকার হই নাই? হয়েছি, কিন্তু সাথে সাথে প্রতিবাদ করায় পুরুষরা ভয় পেয়েছে। কিন্তু ঘটনা তো ঘটে গেছে। সেই দাগ রয়ে গেছে। তাহলে?
এরপর বন্ধুটি আর পাল্টা মন্তব্য করেনি। ধরে নিয়েছি, আমার মন্তব্য কিছুটা হলেও তার মনে চিন্তার উদ্রেক করেছে। হয়ত সে এখন নতুন আঙ্গিকে পুরো বিষয়টা নিয়ে ভাবছে!
এভাবে দয়া করে আপনারাও (যেসব পুরুষ এবং নারীর মনে সংরক্ষিত আসনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে) ভাবতে শিখুন। হালকা চালে চিন্তা করে, কোনো বিষয়ের গভীরে না গিয়ে, সমস্যা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ না করে হুট করে মন্তব্য করা উচিৎ নয়।
শুধুমাত্র নারীদের জন্য আলাদা বাস আছে। ঢাকা শহরে বেশিরভাগ সময়ে খালি বা অর্ধেক সিটিং হয়ে চলাফেরা করে। অফিস যাওয়া বা আসার সময়ে পুরুষেরা যুদ্ধ করে বাস পাবার জন্য, মহিলা বাস খালি আসে। পুরুষের জন্য শুধুমাত্র পুরুষবাহী কোন যানবাহন আছে কি?
নারীর অধিকার বা পুরুষের সমকক্ষতা (যোগ্য হলে পুরুষের চেয়েও অধিক মর্যাদা) অজর্নে অবশ্যই সমর্থন রইলো কিন্তু আজকাল নারীবাদি লেখা পড়লেই মনে হয় পুরুষ বিদ্বেষের ছড়াছড়ি।
ধন্যবাদ।
এই লেখায় পুরুষদের প্রতি বিদ্বেষ দেখানো হয়নি। পুরুষদের যেসব আচরণের কারণে নারীরা অনিরাপদ বোধ করে, সেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটাকে বিদ্বেষ বলছেন? তাহলে কি এই খারাপ কাজগুলোর প্রতিবাদ না করে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে হবে?
শুধুমাত্র নারীদের জন্য কেন বাসের ব্যবস্থা আছে, সেটা আমার লেখাটা পড়লেই বুঝার কথা। পুরুষদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু মেয়েরা যেহেতু পুরুষদের হয়রানি করে না, তাই শুধু পুরুষদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা নেই। তাই আলাদা বাসের ব্যবস্থা করলে সেটা পুরুষদের চরিত্রের জন্য কতখানি লজ্জাকর, বলুন তো?
If boys has any doubt or jealusy about women’s 9 sits, they can also apply to gobernment for 9 sits for boys. But no right to tell about it.