তামান্না ইসলাম: আমি ক্যালিফোর্নিয়ার যে শহরে থাকি, সেটি বেশ নিরিবিলি ছোট্ট শহর। নিস্তরঙ্গ জীবন। এই শহরে মাসে দুমাসে একটি স্থানীয় পত্রিকা বের হয়, শহরের নিস্তরঙ্গ জীবনের মতই নিতান্ত এলেবেলে পত্রিকা, যার চুম্বক খবর গুলি হচ্ছে “মেদ ভুঁড়ি কি করি?” বা “চামড়া টান টান করার ১০১ টি উপায়” ধরনের অখাদ্য সব বিষয়।
হাতের কাছে নেহায়েত পড়ার মতো কিছু না থাকলেই কেবলমাত্র কদাচিৎ সেই পত্রিকার পাতায় চোখ যায়। আজ হটাৎ করে সেই পত্রিকার পাতায় ছোট্ট একটা চার লাইনের খবর পড়ে হোঁচট খেলাম। আমার ছেলে যে প্রাইমারী স্কুলে পড়তো সেখানে কিছুদিন আগে একটি ফান্ড রেইজিং হয়েছে, উদ্দ্যেশ্য ভারতে হিউম্যান ট্রাফিকের এক প্রধান কেন্দ্রস্থল থেকে মেয়েদের বাঁচানো। নাম তার “সোনাগাছি”।
বইয়ের পাতায় বহুবার পড়েছি। বইয়ে পড়া জায়াগাগুলা কেন যেন আমার খুব পরিচিত লাগে। যদিও কখনোই ভারতে যাইনি, তবুও যেমন গড়ের মাঠ, গড়িয়াহাটা, বালিগঞ্জ পরিচিত লাগে, ঠিক একই ভাবে সোনাগাছিকেও পরিচিত লাগে, ওখানকার মেয়েগুলোর করুণ মুখ চোখে ভাসে। মনটা ভালো হয়ে গেলো সেই চার লাইনের সংবাদে।
আমরা কবে পারবো টানবাজারের মেয়েদের জন্য পুনর্বাসনের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিতে? জানি দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। বিশ বছর আগেও একটা ছেলে বা মেয়ের প্রেম ছিল বা আছে শুনলে সেটা গোপন করে বিয়ের ব্যাবস্থা হতো।
এখনকার ছেলে মেয়েদের সেই লুকোছাপা নেই, প্রেম, শারীরিক সম্পর্ক সব কিছুর জানাজানির পরও সুন্দর বিয়ে, সংসার সবই হচ্ছে।
আমরা কি আশা করতে পারি, যে কিশোরী বা তরুণীটি নিজের সমস্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে, শুধু বাঁচার তাগিদে এই ভয়াবহ জীবন বেছে নিয়েছে, তার দিকে সমাজ একদিন বাঁকা চোখে তাকাবে না, সে ফিরে পাবে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন?
টানবাজার তো আমি যতদূর জানি ১৬ বছর আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে শামিম ওসমানের নেতৃত্বে। কাকে পুনর্বাসন করার কথা এখানে বলা হচ্ছে তাহলে? কোন বিষয়ের উপর লেখার আগে সে বিষয়ের উপর কিছু পড়াশুনা করা আবশ্যক!