“বর নারায়ণ!”

অনুপা দেওয়ানজী: গতকাল একটা বিয়ে বাড়ির নিমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। গোধূলি লগ্নে বিয়ে তাই বিয়ের আনুষ্ঠনিকতা দেখছিলাম। কন্যা সম্প্রদানে বসেছেন কন্যা কর্তা স্বয়ং। নানা নিয়মের পরে পুরোহিত কনের পিতাকে বললেন, এবারে বরের পা ধরে মন্ত্র পড়বার জন্যে।
বিয়ের আসরে নানা ধর্মের নানা অতিথি।

Thoughtsদৃষ্টিকটু এই দৃশ্যটি অনেকের কাছেই অস্বস্তি ও পীড়াদায়ক লাগছিল। কিন্তু কেউ কেউ সগর্বে বলতে লাগলো না না আজ বর তো শুধু বর নয় আজ তো বর স্বয়ং নারায়ণ।
কেউ কেউ বললো, এ প্রথা তুলে দিলে কি হয়?
কেউ বা আবার বললো, কন্যাদায় থেকে মুক্তির জন্যে নারায়ণের পা ধরতে আপত্তির কী থাকতে পারে?
আমি বসে বসে ভাবছিলাম, সত্যিই কি কন্যাদায়! কন্যাদের দায় করে রেখেছিল কারা? কালের পরিক্রমায় সে দায় থেকে কন্যারা আজ অনেকাংশে বেরিয়ে এসেছে এবং ঘরে বাইরে স্বামীর চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করছে।
বর কি সত্যি নারায়ণ!  ধর্মমতে, নারায়ণের স্ত্রী হলেন লক্ষ্মী! তাহলে কেন বররুপী নারায়ণ বিয়ে করতে যাওয়ার সময়ে মাকে বলে মা তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি! আর বউরূপী লক্ষ্মীকে বলে, তোমার ভাত কাপড়ের ভার আজ থেকে আমি নিলাম!
নারায়ণ কি লক্ষ্মীকে এ কথা বলেছিলেন! কোথাও তো পাইনি! তাহলে এটা কেন মানা হয়!                                                                               
নারায়ণের পা যদি কন্যাকর্তা ধরতে পারে, তাহলে লক্ষীর পা ধরার কোন নিয়ম রাখা হয়নি কেন?
আসলে লক্ষী তো মেয়ে, তাই সে স্বর্গ বা মর্ত্য সবখানেই সমান।
এই নিয়মের আসল কারণ মেয়েপক্ষকে ছোট করে রাখা বা তাদের মাথা হেঁট করে রাখা। ছেলে ভুলানোর মত দেবী পুজা করে লাভ কী? যদি তার প্রয়োগ না থাকে ব্যবহারিক জীবনে?
এই নিয়ম বন্ধ করতে হলে বর আর কনেকেই এগিয়ে আসতে হবে।
বর যদি কনের পিতার সম্মানার্থে এর প্রতিবাদ করে, আর কনেও যদি বলে আমার বাবাকে যদি আমার বরের পা ধরে আমার বিয়ে দিতে হয়, সে বিয়ে আমি করবো না, তাহলে উভয় পক্ষের চাপে পড়ে পুরোহিত এই বিয়ে না দিয়ে যাবেটা কোথায়?”

হয়তো একদিন এ নিয়মের পরিবর্তন ঠিকই আসবে, কিন্তু যতদিন না হচ্ছে, ততদিনের জন্য কনেদের বলি, তোমরা এই আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসো।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.