মেয়ে তুমি বাঁচো, ঘুরে দাঁড়াও

কানিজ আকলিমা সুলতানা: আমার মেয়েটা ভীষণ গুণী, আপা। নিজের মেয়ে বলে বলছি না। ও আমাকে মায়ের শান্তি দেয় ! মেয়ে বড় হওয়ার পরে আমি বলতে গেলে সংসারের কাজ ছেড়েই দিয়েছি। ওই সব করে। ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনাটাও চালিয়ে গেছে। এখন চাকরির চেষ্টা করছে। পেয়ে যাবে। মুরুব্বিদের দোয়া আছে না!

Free 1– বলেন কী আপা! আমিতো এমন একটা মেয়েই খুঁজছিলাম! বুঝেনই তো, এতো বড় একটা সংসার, বয়সও হয়েছে।একা হাতে আর সামাল দিতে পারছি না। এখন একটা মনের মতো বউ দরকার।আমি আর কয়দিন! এখন বউ আসলে তার হাতে সব ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে মুক্তি!

-আমার ভাই কপাল ভালো! অনন্যা এক স্ত্রী মিলেছে! কাজ শেষে বাসায় গেলেই কেমন একটা শান্তি শান্তি ভাব। চাকরি সংসার সন্তান আত্মীয় পরিজন সব নিখুঁতভাবে সামাল দেয় মহিলা! ভোরে ওঠে কাজ শুরু করে আর মধ্যরাতে সব কাজ শেষ করে ঘুমাতে যায়। আবার কত সিম্পল! চাহিদা নেই। নিজের রোজগারের টাকাও নিজের জন্য জমায় না!

– মা, তুমি সবার সেরা! জানো মা, তোমার মতো টিফিন কেউ দিতে পারেনা। সবাই আমাকে খাবার শেয়ার করতে বলে! আমার টিচাররাও তোমার অনেক প্রশংসা করে! আমার পড়াশোনা, স্বাস্থ্য নিয়ে তুমি ভীষণ কেয়ারিং। আমাকে নিয়ে টিচারদের কোনো সমস্যা পোহাতে হয় না।

– আমার সব আছে। আত্মীয় স্বজন পরিবার আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আশেপাশের সবাই কত শ্রদ্ধা করে! আমার উপর সবাই নির্ভর করে।এমন একটা জীবনইতো আমি চেয়েছিলাম। ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসপূর্ণ একটা জীবন!

কিন্তু এতো কিছুর পরেও ইদানিং মনের মধ্যে একটা অভিমান জমে আমার। শারীরিক খাটুনিটাও আর ভালো লাগেনা। দায়িত্ব নিয়েছিলাম অনেক। কিন্তু এখন দায় হয়ে গেছে সেটা। যেন আমাকেই সব করতে হবে! আজব মানুষগুলো! আমাকে এতো ভালোবাসে অথচ আমার ক্ষয়ে যাওয়া ওদের চোখে পরেনা। ইচ্ছে করে সব ছেড়ে পালিয়ে যাই। দূরে, অনেক দূরে।

Kaniz apa
কানিজ আকলিমা সুলতানা

-তোমাকে বুঝবার কেউ নেই গো মেয়ে।সংসার খুব আজব জায়গা। তোমার ভালোবাসার মানুষেরা নিজের অজান্তেই তোমার সবটুকু নিয়ে নিবে! বিনিময়ে তোমাকে প্রশংসা দিবে। ভালোবাসা দিবে। এতো দিবে যে একসময় তুমি চূড়ায় উঠে যাবে। চূড়া থেকে তুমি দেখবে তোমার পায়ের নীচে প্রাণ নামক জমিনটা অনেক দূরে। তোমার মাথার উপরে স্বপ্নের ফ্যাকাসে আকাশ। চারদিকে কেবল শূন্যতা। অভিমানের বাষ্পে ছাওয়া চোখে জীবনকে ঝাপসা মনে হবে তোমার। তখন তুমি পালাতে চাইবে।সংসারের আষ্টেপৃষ্ঠের বন্ধনে তোমার দম বন্ধ হয়ে আসবে। তখন তুমি হত্যা করতে চাইবে নিজ আত্মাকে, নিজের সকল অর্জনকে।

অতঃপর মৃত নগরীর সেপাইরা তোমার জীবনে ঘটনা খুঁজবে, ঘটনার পিছনের ঘটনা খুঁজবে। ওরা কেবল খুঁজে পাবেনা তোমার কাঁধের জোয়ালটাকে। তোমার কাঁধের ঘা, তোমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ, তোমার নিজস্বতার মৃত্যু, তোমার শ্বাসনালীতে জমা অভিমানের শ্লেষ্মা- সবকিছু ওদের চোখ এড়িয়ে যাবে।

বাঁচো গো মেয়ে। শুধু সংসারের জন্য নয়, তোমার নিজের জন্যও বাঁচো। সব ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই আবার ঘুরে দাঁড়াও।

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.