মাসকাওয়াথ আহসান: একজন মায়ের হাতে দুটি সন্তান খুন হবার স্পর্শকাতর ঘটনাটি মিডিয়াকে জানানোর ক্ষেত্রে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মা এবং সন্তানদের নাম পরিচয় গোপন রাখতে পারতো। বিদেশে কখনই এটা করতো না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেও তার পরিচয় ও ছবি প্রকাশ আইন-শৃংখলা বাহিনী করতে পারে না।
মিডিয়া এথিকস, রাইট টু প্রাইভেসি এগুলো সম্পর্কে আমাদের সম্যক সচেতনতা নেই। তাই এই খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে মিডিয়া নৈতিকতা ভেঙ্গেছে। একটি ঘটনা তদন্ত হবার আগেই; শুনানি, মনোচিকিৎসকের পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপনের পর আদালত রায় দেবার আগেই আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মিডিয়া আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করে যেন ফতোয়া দিয়ে দিয়েছে শাস্তির।
একটি ঘটনার অগ্র-পশ্চাত কিছু না জেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণ দোররা মেরে বা পাথর ছুঁড়ে অভিযুক্ত আসামীকে হত্যা শুরু হয়ে গেছে।
রাশিয়ার একটি কেসস্টাডিতে দেখা যায় একজন ন্যানী(শিশু পরিচর্যাকারী) চারবছরের একটি শিশুকে হত্যা করে হাতে নাতে ধরা পড়েছে। সে খবরটি মিডিয়ায় এসেছে বিশেষজ্ঞ অভিমত ভিত্তিক হয়ে যে ঐ ন্যানী স্কিজোফ্রেনিয়ার রোগী ছিলো।
আর যারা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন তাদের মাঝে অন্ততঃ এটুকু সচেতনতা থাকা জরুরি, একটি ভয়াবহ ঘটনাকে নানা আঙ্গিকে বারবার তুলে ধরলে সমাজের মনোজগতে মারাত্মক ক্ষত তৈরী হয়। মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজের হুল্লোড়ও যেমন সমাজ-মানসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে একপর্যায়ে সমাজে পিটিএসডি (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ অর্ডার), বাইপোলার ডিজ-অর্ডারসহ নানারকম মানসিক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মেট্রোপলিটানে বসবাসকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি আশংকাজনক ফলাফল বেরিয়ে এসেছে। প্রতিটি মেট্রোপলিটানে বসবাসকারীদের প্রতি ১০ জনে ৪ জন কোন না কোন মানসিক রোগে ভুগছে। অভিযুক্ত আসামী, সাংবাদিক, পুলিশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মাঝে সেই ৪ জন আছে বলাই বাহুল্য।
ঐ গবেষণা পর্যবেক্ষণে আরো উঠে আসে, দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য রোগের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মত স্বাভাবিক না ভেবে মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটাকে অসম্মানজনক মনে করা হয়।
ব্যাপারটা এমন যে, জ্বর হলে ওষুধ খাওয়া যাবে, কিন্তু মনের জ্বরের জন্য ওষুধ খেলে পাগলেরা পাগল বলবে! সঠিক সময়ে মানসিক চিকিৎসা না হলে সমাজে অস্বাভাবিক অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকে। আর রোগ চিহ্নিত না হওয়ায় এলিট ফোর্স-সাংবাদিক-সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে যাচ্ছে নিয়মিত।
সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারী বা গণ-মানুষ বা আমজনতার দায়ীত্বশীলতা আমের মতই পক্কন বা পঁচনশীল বলিয়াই সংবাদ মাধ্যমের জন্ম। তাহাই জখন পঁচিয়া আছে তখন আঁটি হইতে গাছ হইতে কতক্ষন?