কিশোয়ার লায়লা: আমার যখন দিনের সকাল, তখন বাংলাদেশের সেই দিনটি শেষের পথে। দেশের বেশিরভাগ ঘটনা তখন কালো কালিতে লেখা হয়ে যায়। আমি ঘুম ভেঙ্গে ফেইসবুকে মোটামুটি সব সংবাদ এমনকি কিছু সংবাদের বিশ্লেষণও পড়তে পাই। যাকে বলে, একেবারে ‘রেডিমেড’ খাবার খাওয়া!
আজ সকালে উঠে শুরুতেই মনটা ভাল হয়ে যায় ফেইসবুকে ঢুকে। আমার এক দেবরের স্ত্রী সন্তানের মা হয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে নতুন মুখটির পাশে। কী সুন্দর দৃশ্য! দেখেই প্রাণটা ভরে গেলো। তখনও বুঝিনি ফেইসবুকের নিউজ ফিডে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে!
একটু নিচে যেতেই সাংবাদিক নাদিরা কিরণ আপার স্ট্যাটাস! এ কী পড়ছি? বনশ্রীর দুই শিশু হত্যাকারী তাদেরই আপন ‘মা’? স্ট্যাটাস শেষ না করেই প্রথম আলোর অনলাইনে চলে গেলাম! সত্যিই তো ঠিক লিখেছেন নাদিরা আপা। এ ও সম্ভব?
ঐ ‘মা’ নাকি র্যাবের কাছে স্বীকারও করেছেন? মেয়েটিকে যখন হত্যা করে, তখন ও জেগে ছিল। আর ছেলেটি ঘুমন্ত! কিভাবে সম্ভব আমি ধারণাই করতে পারছি না। মেয়ে সন্তানটি নিশ্চয়ই একবার অন্তত মা বলে ডেকেছিল? কারণ সে তো তার মা-ই। যখন তার ছোট্ট প্রাণটি নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল, তখন? তখনও ঝাপসা চোখে ও তার মা’কেই দেখে গেছে! আর ঘুমন্ত শিশুটি? সে তো জগতের সবচেয়ে আপন চেহারার যে মানুষটিকে চিনতো, সে তো মা। সে কি শেষ সময়ে একবারের জন্য হলেও চোখ খুলে দেখেছে সে আপন চেহারাটা? আমি ভাবতে পারছি না।
কাল রাতে ঘুমোতে গেছি উত্তরায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ সুমাইয়ার তাঁর সন্তানদের বাঁচাতে না পারার কষ্টের সংবাদ পড়ে। শুনেছি মানুষ ডাকাত পড়লে বা সন্ত্রাসী হামলায় পড়া কাউকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনা ভয়ে। কিন্তু আগুণের ভয়ে কেন এগিয়ে এলো না কয়েকটা মানুষ?
দগ্ধ সুমাইয়ার কথায় যারা এগিয়ে এলো না, তারা আদৌও কী ক্ষমা করতে পারবে নিজেদের? নিজেদের সন্তানদের মুখ দেখে কী সেই দগ্ধ শিশুগুলোর মুখ মনে করবে না? একটা পরিবার ধ্বংস করার কিছুটা দায়ভার কি তাদের ওপরও বর্তায় না? মনে মনে ভাবি, কিসের দায়ভার। এই আবেগ যদি তাদের থাকতোই, তাহলে সুমাইয়া আজ এই আহাজারি নিয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতো না।
এখন জানা যাবে, বনশ্রীর সেই ভদ্রমহিলা মানসিকভাবে অসুস্থ। হয়তো সত্যিই তাই। কিন্তু আর কতদিন কোন মানুষকে আমরা বিকারগ্রস্ত, মানসিকরোগী, সাইকো কিংবা ভারসাম্যহীন বলে পার পাওয়াবো নিজেদের?