কাকলি রানী দাস: ১৯৯২ সালে আমি প্রথম ঢাকায় বেড়াতে আসি। তখন আমি ক্লাশ নাইনে পড়ি। আমার বাবা তার অফিসের কাজে মাসে-দুমাসে ঢাকায় আসতেন। তার সাথে আমার আজন্ম যোজন যোজনের দূরত্ব হলেও আমি কিভাবে যেন আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবার জন্য তাকে রাজি করিয়ে ফেলেছিলাম।
একদিন বাবা আমাকে সাথে নিয়ে বের হলেন, উদ্দেশ্য ঊনার অফিসের কাজের ফাঁকে, যাওয়া আসার পথে আমি যতটুকু পারি ঢাকা শহর দেখবো। তো এই যাওয়া আসার পথে দুপুরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমরা একটা ছোট্ট বিরতি নিয়েছিলাম, ঠিক কি কারণে এই বিরতি নেয়া হয়েছিল তা আজ আর মনে নেই।
আমরা ডাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় দেখলাম, রাস্তার পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটা বাস ছাত্রছাত্রীদের উঠিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। খুব সাধারণ কিছু বাস, গায়ে অসংখ্য উঁচু-নীচু গর্ত, দাগ, কোন কোন জানালার কাঁচও নেই। কিন্তু তাতে কী, ঐ সাধারণ লাল রঙয়ের উপর সাদায় লেখা “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়“ আর জৌলুসহীন জানালা থেকে বের হয়ে থাকা অসম্ভব সুন্দর কতগুলো মুখের ছবি আমার মাথার মধ্যে ঢুকে গেল।
এরপর বাসায় ফিরে এসে যথা নিয়মে আমি আমার আগের জীবনে ফিরে গেলাম। বাসা, স্কুল, খেলা, গল্পের বইয়ে ডুবে গেলাম, কিন্তু তারপরও ঐ ছবিটা মাঝে মাঝেই আমার চোখে ভাসতো। নিজেকে ঐ বাসের একজন যাত্রী হিসেবে দেখতে খুব ইচ্ছে হতো। তবে আমি খুব ভাল করে জানতাম আমার এই চাওয়া পূরণ করা কতটা কঠিন। কারণ আমি আমার বাবা মায়ের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান এবং আমার গায়ের রঙ কালো, যদিও সবাই মিষ্টি করে বলতো শ্যামলা, তবে তাতে আমার কালোর ঘনত্ব একটুও কমতো না।
আর একারণে আমার বাবার আদর এবং পক্ষপাতিত্বের পাল্লা কোনকালেই আমার দিকে ছিলো না। অন্যদিকে ছাত্রী হিসেবে আমি সব সময়ই মাঝারি মানের ছিলাম, কোনকালেই তাক লাগানো রেজাল্ট আমার ছিল না। তাই আমার জন্য স্বপ্নটা দেখা খুব সহজ ছিল না। এসব জেনেশুনেই আমার বাবা এসএসসি পরীক্ষার আগে আমাকে একটা নম্বর বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, `দেখি তো এই নম্বর পাস কিনা?` যতখানি না আমাকে উৎসাহ দেবার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তারচেয়ে কথাটার মধ্যে অনেক বেশি উপহাস আর তাচ্ছ্বিল্য মেশানো ছিল।
তবে আমি তার চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছিলাম এবং বেঁধে দেয়া নম্বরের থেকেও প্রায় দেড়শ নম্বর বেশি পেয়ে প্রথমবারের মতো তাকেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলাম। তিনি ঠিক কী বুঝেছিলেন জানি না, তবে এটা বুঝতে পারি, আমি যে তার অন্য সন্তানদের মতো বাধ্যগত নই, এই সত্যটা তিনি উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন। এ কারণেই হয়তো আমার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ছয়/সাত মাস আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, আমি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলেও তিনি আমাকে আমাদের বাড়ির পাশের কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও পড়তে দেবেন না।
ছোটবেলা থেকেই তাকে আমরা এমনই দেখে আসছি, তিনি মেয়েদের শুধুমাত্র সন্তান মনে করতেন না এবং সন্তানদের মধ্যে ছেলেদের প্রথম শ্রেণীতে এবং মেয়েদের দ্বিতীয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণীতে ফেলতেন। যাই হোক, পরীক্ষা শেষে আমার বান্ধবীরা যখন সোজা ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে ক্লাশ শুরু করেছে, তখন আমি ওদের দেখি আর মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াই। কী করবো, আমাদের পরিবারে আমার বাবার অমতে কিছু হবার উপায় ছিল না । তিনিই একমাত্র আয় করেন এবং তার পূর্ণ কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য আমার মা কিংবা আমাদের ভাইবোনদের শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিতেন (এবং সেটা সব সময়ই তার পছন্দে) কিন্তু কোন টাকা পয়সা দিতেন না, হাত খরচ বা পকেট মানি কী জিনিস সেটা জানার সৌভাগ্য আমাদের কখনও হয়নি।
তাই তার অমতে আমাকে কোচিং দেয়া তো দূরের কথা, আমাদের বাসার খাবার মেন্যু বদলের ক্ষমতাও আমার মায়ের ছিল না। এরমধ্যে আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুলো। এবারও আমি একটা ভাল রেজাল্ট নিয়ে পাশ করলাম। আমাদের পাড়া প্রতিবেশীরা আমার বাবাকে বলতে লাগল, `মেয়েটা ভাল রেজাল্ট করেছে, ওকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ান`। কে শোনে কার কথা?
এর মধ্যে আমাদের এক আত্মীয় আমাকে বাবাকে বুদ্ধি দিলেন ফরিদপুরে একটা মেয়েদের কলেজে প্রথমবারের মতো ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স কোর্স শুরু করেছে, আর এখানে যদি আমি ভর্তির সুযোগ পাই তবে পাশ করে কলেজে মাস্টারির কাজ করতে পারবো, আবার মহিলা কলেজের কড়া নজরদারীর মধ্যেও থাকতে পারবো, সর্বোপরি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী বলে বিয়ের পাত্রী হিসেবে কিছুটা হলেও বাজারদর বাড়বে।
আমার বাবা ভাবলেন, ভালই তো, ঘাড় থেকে কালো মেয়েকে পার করার কাজটা সহজ হবে। এদিকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির কথা বলতেই একটা রাম ঝাড়ি খেলাম। যথা সময়ে আমাকে ফরিদপুরের সারদাসু্ন্দরী মহিলা কলেজে ভর্তি করা হলো। কলেজ হোষ্টেলে আমার বন্দি জীবনের শুরু হলো। আমি সব সময়ই খুব ঘরমুখী স্বভাবের একজন মানুষ। কিন্তু যখনই এভাবে আমার গণ্ডি সীমিত করে দেয়া হলো তখন আমার ঘরমুখী মনও বিদ্রোহী হয়ে উঠলো।
তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা বিশাল আকাশের সাথে কলেজ নামের এই ছোট্ট একটুকরো মেঘের তুলনা করলেই আমার কান্না পেত। একথা বাসায় বলতে মেঘের গর্জনের মতো উত্তর আসে, `এখানেই তোমাকে পড়তে হবে, নইলে তোমার পড়াশোনা বন্ধ`।
এরমধ্যে বন্ধু বান্ধবদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম জমা দিয়েছি, আমার বাবার হাতে পায়ে ধরে পরীক্ষা দিতেও এসেছি। তিনি আমাকে নিয়ে এসেছিলেন, কারণ তিনি ভাল করেই জানতেন, আমি এক অক্ষরও পড়িনি, বিশ্ববিদ্যালয় কী জিনিস জানি না, পরীক্ষার জন্য কী পড়তে হবে তাও জানি না, চান্স পাবার প্রশ্নই উঠে না। ঈশ্বরও বোধ হয় মুচকি হেসেছিলেন এই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে। পরীক্ষার দুইদিন আগে থেকে আকাশ পাতাল জ্বর। তারপরও কাকাতো দিদি মুক্তিদি আমাকে প্রায় কোলে করে হোম ইকনোমিক্স কলেজে নিয়ে গেলেন পরীক্ষার দেয়বার জন্য।
পরীক্ষা দেয়া তো দূরের কথা, প্রশ্নের লেখাগুলোই আমার চোখের সামনে সমানে নাচছিল, সাইন করেই চলে এসেছি। ফলাফল আবার সেই মহিলা কলেজ। এবার যেন আমার স্বপ্নটার দুটো ডানাই ভেঙ্গে গেল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম মহিলা কলেজের এই বন্দী জীবন আমার জন্য নয়, একটু খোলা আকাশ দেখার জন্য একটু খোলা বাতাসে নিঃশ্বাস নেবার জন্য আমি মরে যাচ্ছিলাম। জানতাম, এখান থেকে আমি হয়তো একটা ডিগ্রি পাবো, কিন্তু কোনদিন নিজের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।
তবে আমার বাবার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবার পরিণামও আমি জানতাম, সত্যি আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও আজীবনের ভীতু আমার মনে এতো সাহস কোথা থেকে এসেছিল জানি না, বিছানা-বালিশ গুছিয়ে বাসায় চলে এসেছিলাম। ঐদিনটা আমার জীবনের কঠিনতম দিনেগুলোর মধ্যে একটি। আমার মনে আছে আমার মা, যে আমার পাশে সব সময় ছায়ার মতো থাকত, আমার সব কাজে যার সব ধরনের সহযোগিতা ছিল সেই মাও আমাকে বললো, আমি ভুল করেছি।
আমার সব ভাইবোন আমাকে এড়িয়ে চলে, আমার সাথে কথা বলেনা, আর আমার দুঃসাহস দেখে আমার বাবা বিস্ময়ে হতবাক এবং বাকরূদ্ধ হয়ে গেছিল। যাকে আমি সারা জীবন কারণে- অকারণে শুধু বাঘের মতো হুংকার দিতে দেখেছি, সেই বাবার এই শান্ত মূর্তি দেখে সত্যি আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভয় পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু এই ভয়ই আমাকে শক্তি যুগিয়েছিল।
এরপর শুরু হয় আমার সংগ্রাম, তখন দ্বিতীয়বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবার জন্য তখন মাত্র ছয় কি সাত মাস সময় আছে। আর সম্বল বলতে শুধু ইন্টারমিডিয়েটের পাঠ্য বইগুলো। বাসায় সাহস করে একটা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি গাইডের কথাও বলতে পারি না, কারণ আমার বাবা প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে স্বরূপে ফিরেছেন, আমাকে দেখলেই তর্জন-গর্জন শুরু করেন, হাতের বই টেনে ছুঁড়ে ফেলে দেন, আমার পড়ার সময়ে ফুল ভলিউমে টিভিতে হিন্দি সিনেমার গানের অনুষ্ঠান `গীতমালা` দেখেন।
বাধ্য হয়ে উনি বাসায় থাকলে আমি রান্নাঘরের পাশে রান্নার কাঠ রাখার রুমে পড়ি। ভাল করে পড়তে পারি না, কারণ চুলার ধোঁয়ায় পুরো রুম ভরে যায়, চোখে পানি আসি, ঝাপসা দেখি। তারপরও পড়তে চেষ্টা করি – নইলে যে আমার স্বপ্নেভঙ্গের সাথে সাথে আমার পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যাবে। মা আমার এক মেসোকে দিয়ে একটা ভর্তি গাইডও কিভাবে যেন জোগাড় করে দিলো। আমার সংগ্রামের আরেক সাথী হলো সোমা, আমার বাসার পাশেই ওদের বাসা, আমরা স্কুল, কলেজে একসাথে পড়েছি। সোমাও আমার মতো ওর বাবার অমতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চায় বলে ওর বাবাও ওর উপর নাখোশ ছিল – তিনিও আমার বাবারই কার্বন কপি কিনা।
মাত্র তিনমাস আমরা দুজন সোমাদের বাসায় হারুন স্যারের কাছে পড়েছিলাম, স্যারের টাকাও আমরা ভাগ করে দিতাম। এই টাকা এবং ভর্তি ফরমের টাকা আমার মা কোথা থেকে জোগাড় করেছিলেন আমি আজো জানি না। এরপর পরীক্ষার সময় এলো। আমার বাবা বললেন, তিনি আমাকে ঢাকা নিয়ে যাবেন না এবং এই বাবদ কোন পয়সা কড়িও দেবেন না। যখন দেখলন তার এই কথার পরও আমি আর সোমা গুটগুট করে জিনিসপত্র গুছিয়ে ঢাকার যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং আমার মায়ের কাছে জানলেন আমি ঢাকায় গিয়ে সোমার বড়বোন মিথুন আপার ইডেনের হোস্টেলে থাকবো, তখন ভীষণ অবাক হলেন।
কারণ যেই আমি পাশের দোকান থেকে একটা ছোট্ট জিনিস কেনার জন্যও মা কিংবা বড়বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি সেই আমি বাবা মাকে ছাড়া শুধুমাত্র সোমার সাথে ঢাকা আসার মত অবিশ্বাস্য কাজ করতে যাচ্ছি। তবে তিনি এটাও বুঝতে পারলেন যে, তিনি না নিয়ে গেলেও আমি ঠিকই যাবো। তার শেষ অস্ত্রটাও যখন বিফলে গেল তখন বাধ্য হয়েই অল্পকিছু টাকা দিলেন। আমরা দুইজন ঢাকায় গেলাম, পরীক্ষা দিলাম, এবং ফিরে এলাম।
যাইহোক, যথাসময়ে পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুলো। একদিন সকালে সংবাদপত্র দেখে আমার বড়বোন চিৎকার করে আমাকে ডেকে বললো, ’এ্যাই ওঠ, তুই আর সোমা দুইজনেই চান্স পেয়েছিস’। আমি খুব খুশী হয়েছিলাম, একে তো চান্স পেয়েছি, তারপর আবার দুইজনেই একসাথে। তবে আমার খুশী পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি, কারণ আমার বাবা আবার বীর বিক্রমে ঘোষণা দিয়েছেন, আমি চান্স পেয়েছি তো কি হয়েছে, তিনি আমাকে ভর্তি করাবেন না।
এরপর শুরু হলো মায়ের একার যুদ্ধ। প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন, আমার বাবার বন্ধু বান্ধব, কলিগ, বাসার দুধওয়ালা, বাড়ির পাশের দোকানদার, পরিচিত, অর্ধ পরিচিত, অপরিচিত যাকেই সামনে পান তাকেই অনুরোধ করেন যেন তারা আমার বাবাকে একটু বোঝান।
অনুরোধ করে বলেন, `আমার মেয়েটা নিজের চেষ্টায় চান্স পেয়েছে, ওকে ভর্তি করাতে বলেন প্লিজ`। আমি সব চুপচাপ দেখছিলাম, কাউকে কিছু বলার বা অনুরোধ করার মতো ধৈর্য্য আমার অবশিষ্ট ছিল না। আসলে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সত্যি চান্স পাবার পরও আমাকে ভর্তি করানো হবে না।
আমি ঠিক করে ফেললাম, বাসা থেকে টাকা না দিলে না দেবে, আমি আমার একমাত্র সোনার কানের দুল আর গলার চেইন বিক্রি করে ভর্তি হবো এবং টিউশনি করে পড়াশোনা করব। আমাকে শেষ পর্যন্ত অবশ্য কানের দুল বিক্রি করতে হয়নি, আমার মায়ের কঠিন এ্যাডভোকেসির কারণে এই কথা আমার বাবার অফিসের বড় বসের কানে পৌঁছে যায়। বউ, মেয়েসহ দুনিয়ার সবার কথা অগ্রাহ্য করলেও, নিজের বসের কথা অগ্রাহ্য করার মতো বোকা তিনি ছিলেন না, তাই ভর্তি কাহিনীও আর বেশি লম্বা হয়নি।
তিনি নিজে আমাকে নিয়ে ঢাকা এসে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন, হলেও উঠিয়ে দিয়ে গেছেন। আমি একটি ছোট্ট শহরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সামান্য মেয়ে। আগের মতো এখনও আমি – কোন কোন ক্ষেত্রে মাঝারিমানের এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্নমানের একজন মানুষ। জীবনের যেকোন স্বাভাবিক বা ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জিনিসও আমি কখন স্বাভাবিক বা সহজভাবে পাইনি, আমাকে সংগ্রাম করে অর্জন করে নিতে হয়েছে এবং আমি জানি বাকি জীবনও এর ব্যতিক্রম হবে না।
সমস্যা নেই, আমার দুটো কড়া পড়া কর্মঠ হাত আছে, বুক ভরা সাহস আছে, আর হৃদয়ভরা ভালবাসা আছে – বাকি পথ চলতে আশা করি অসুবিধা হবে না। তবে আজকের এই আমি একদিনে তৈরি হইনি, আমার জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ যার হাত ধরে আমি পার হয়েছি, সে আমার মা।
আমি জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়াসহ এই ক্ষুদ্র আমার জীবনের যাকিছু ক্ষুদ্র অর্জন তার এক চিমটি ছাড়া সবটুকু কৃতিত্ব আমার মায়ের প্রাপ্য। জানি না, এক জীবনে তার এতো ঋণ আমি কিভাবে শোধ করব??