তানিয়া মোর্শেদ: মানবজমিন পত্রিকায় একটি ভুয়া খবর বের হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান পরিষদ নাকি বাংলাদেশে গরু হত্যা নিষিদ্ধের আহবান করেছে! শিরোনাম পড়লেই বোঝা যায় এটা ভুয়া খবর।
গত চার দশকে বাংলাদেশ থেকে চল্লিশ লক্ষ (না কি ৫০?) হিন্দু দেশ ছেড়েছেন। অন্য সময়ের কথা যদি বাদও দেই, বর্তমান সরকারের আমলেই যে হারে হিন্দু মানুষের জমি-বাড়ী- সম্পত্তি দখল, নারী-পুরুষ-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা, মন্দির ধ্বংস-আগুন দেবার খবর জানা যায় তাতে কোন হিন্দুর এমন সাহস হবে ৯৫% মুসলমানের দেশে গরু হত্যা বন্ধের আহবান করার? কোনো পাগলও এমন কথা বলবে না। খবরটি হিন্দুদের উপর আক্রমণের জন্য উস্কানী ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ জানলাম পিনাকী ভট্টাচার্য না কি এই খবরে আরো রং চড়িয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে।
আমার প্রশ্ন, মানবজমিন আর পিনাকীর এই উস্কানীমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি এখন পর্যন্ত? না হলে, এখনো নয় কেন? কেউ আদালতে মামলা করেছেন কি? না হলে, নয় কেন? বুঝেছি, বাংলাদেশে মুসলমানদেরই শুধু ধর্মানুভূতি আহত হয় আর ইসলামের বিরুদ্ধেই শুধু উস্কানীমূলক কথা বলা যায়, কাজ করা যায়!
বাংগালী মুসলমানের গরু খাওয়া, কাটা ও তার গল্প নিয়ে আগেও লিখেছি অনেক। এই বিষয়টা এত বেশী বিরক্ত করে আমাকে যে এনিয়ে লেখা আমার বই-এও দিয়েছি। এই বিষয়ে এত অভিজ্ঞতা আছে যে লিখে শেষ করা যাবে না।
প্রথমেই আবারো বলে নেই, দুই দশকেরও বেশী প্রবাসী জীবন আমার। সব সময়ই বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষিত, বাংলাদেশের “ক্রীম” বলা হয় যাদের তাদের মাঝেই বসবাস আমার। ধারণা করা হয় শিক্ষা মানুষকে কিছুটা হলেও আলোকিত করে। আমার অভিজ্ঞতাগুলো পড়লে মানুষ বুঝবেন হয়ত, কতটা আলোকিত বাংলাদেশের মুসলমান সমাজ (পুরো না হলেও অনেক বড় অংশ)! প্রবাসে নিমন্ত্রণ “দাওয়াত” নামে পরিচিত। সপ্তাহান্তে অধিকাংশ মানুষ দাওয়াত দেন বা পেয়ে থাকেন। এই সব দাওয়াতে গরুর মাংস প্রায়ই থাকে অন্যান্য অনেক পদের মাঝে। বাংলাদেশের হিন্দুরা এসব দেখে অভ্যস্ত। আমার মত এক বা দুই জন মানুষ গরুর মাংস সার্ভ করে না যদি একজনও হিন্দু কেউ থাকেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটা খেয়াল করি সব সময়। প্রায় ১৮/১৯ বৎসর আগে একবার করেছিলাম, খাসীর মাংস না পেয়ে। মাংস না হলে কিসের দাওয়াত এটা প্রায় অলিখিত নিয়ম বাংগালী মুসলমানদের মাঝে। তাই বাধ্য হয়ে একবারই করেছিলাম। যত দূর মনে পড়ে তা টেবিলে আনিনি। অন্য জায়গায় আলাদা করে রেখেছিলাম।
আজ আমি এতোটাই একলা চলতে অভ্যস্ত যে এখন যদি খাসীর মাংস না পাই, তবে মাংসহীন খাবার সার্ভ করতে আমার একটুও বাঁধবে না। বলছিলাম দাওয়াতের কথা, এসব জায়গায় বা অন্য সময়ও মুসলমানরা এতটাই স্বাভাবিকভাবে গরু খাওয়া, মারা, রাঁধা, কোরবানীর গল্প করেন হিন্দু মানুষের সামনে এবং কখনো কখনো সাথেও যে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। অনেক সময় মেজাজ হারিয়ে ইচ্ছে করে সরাসরি বলে বসি, “এতটাই অসভ্যতা যদি আপনার সাথে শুকরের মাংস খাওয়া কোনো মানুষ করে তবে আপনার কেমন লাগবে?”
১৯/২০ বৎসর আগে একজন বলেছিলেন যে একবার (রেঁস্তোরায়) একজন হিন্দু মানুষ শুকরের মাংস খেয়েছিল তাদের সামনে। সবাই যার যার নিজের খরচে এক সাথে খাচ্ছিলেন। আমি সেই মানুষকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বাংলাদেশের মুসলমানরা (বেশ কিছু মানুষ এক সাথে খাচ্ছিলেন তারা) কি গরুর মাংস খেয়েছিলেন? উত্তর তো জানাই আছে! আমি বলেছিলাম, তাহলে সেই মানুষটির শুকরের মাংস খেতে কি অসুবিধা?
একবার বাংলাদেশীদের এ্যাসোসিয়েশনের, সিলিকন ভ্যালীতে থাকতাম তখন, কোনো এক অনুষ্ঠানে যাই (প্রথমবার ছিল সেটা)। সুকমল’দাকে বলেছিলাম। তিনি তাঁর বন্ধুকে (পশ্চিমবঙ্গের) নিয়ে এসেছিলেন। খাবারের লাইনে গিয়ে দেখি মুরগীর মাংস শেষ। শুধু গরুর মাংস আছে, আর কিছু নেই! আমি রাগে, দুঃখে, অপমানে অস্থির হয়েছি। কথাও শুনিয়েছিলাম। তাতে কি লাভ? এরপরে অনেক জায়গায় অসংখ্যবার দেখেছি এসব! দাওয়াতে, পিকনিকে, পট লাকে এদের মাথাই থাকে না এসব! আমি একা কথা বলে যাই।
একবার বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত (সে সময়কার) আমার যেখানে বসবাস সেই স্টেইটে এসেছিলেন কোনো কাজে। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি বাংলাদেশ, দেশের সংস্কৃতির ব্যাপারে খুব আগ্রহী। তিনি আমাদের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন সম্পর্কে জেনেছিলেন কোনো ভাবে। নিজে থেকেই আমাদের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। আমাদের সংগঠন এদেশের রেজিস্টার্ড এবং আমাদের অধিকাংশ কাজ বাংলাদেশে সেকারণেই। একজনের বাসায় নৈশভোজের সময় দেখা করার কথা। সংগঠনের সবাই খাবারের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। কেউ রান্না করে, সবাই খরচ ভাগ করে ইত্যাদি করে। একজন বলে বসলেন, যেহেতু মুরগীর বিরিয়ানী, কাবাবও মুরগীর ভালো লাগবে না। তিনি গরুর কাবান কিনে আনবেন। আমি স্পষ্ট করে বলেছিলাম, খারাপ লাগলেও মুরগীর কাবাবই আনতে হবে।
তাতেও যখন হয় না, আরো স্পষ্ট করে বলেছিলাম, খাবারের টাকা সবাই শেয়ার করছি আমরা এরমধ্যে “…” আছে। কিভাবে গরুর কথা বলেন? শেষ মুহূর্তে দেখেছিলাম, কাবাবের দুটো ডিশ এনেছেন। গরু ও মুরগী! বুঝেছিলাম, বাংগালী মুসলমান যত উচ্চ শিক্ষিতই হোক, যত প্রতিষ্ঠিতই হোক দেশে কি প্রবাসে, “মানুষ” হতে অনেক দূর যেতে হবে!
সেই মানুষেরই পরিবারের একজন বয়স্ক সদস্যা আছেন যিনি কথা কথায় গরু খাবার গল্প করেন হিন্দু মানুষের সামনে। আমি প্রতিবার নিজের মুখ বন্ধ রাখি, শুধুমাত্র তার বয়সের কারণে। জানি বললেও তিনি শোধরাবেন না। আমার বয়সী মানুষরাই যদি সচেতন না হয় সেখানে আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে কি আশা করবো?
এ বাড়ীতে আসার পর একবার গানের আসর করেছিলাম বাড়ীতে। নিজে একাধিক পদ রান্না করলেও পট লাক করেছিলাম। একাই হয়ত পারতাম। কিন্তু চেয়েছিলাম ও ভেবেছিলাম, গানের আসর যেন চালু হয় অনেকের মাঝে, কেউ যেন এটাকে “নিমন্ত্রণ” না ভাবে, পট লাক হলে অন্যরাও উৎসাহী হবে নিজেদের বাড়ীতে গানের আসর করতে, পট লাক হলে কেউ বেশী প্রেশার অনুভব করবে না নিজের উপর ইত্যাদি। একজন রেঁধে এনেছে মাংস। আমি নিজেই খাসীর মাংস রেঁধেছি। মাছ আর ডাল রেঁধেছি। আমি জিজ্ঞাসা করে জানলাম, গরুর মাংস! আমি বাটিটা অন্য জায়গায় রেখে দিলাম। শুধু বলেছিলাম, আমি এটা সার্ভ করবো না। সে লজ্জিত হয়েছিল। হয়ত ভেবেছে এতজন হিন্দু মানুষ দেখে বুঝি আমি সার্ভ করিনি। সে হয়ত জানে না, একজন হিন্দু থাকলেও আমি সার্ভ করি না, করবো না।
বাড়ীতে রেড মিট খুব কম খাওয়া হয়। হলেও খাসীর মাংস। কদাচিৎ যদি গরুর মাংস রাঁধি, খেয়াল রাখি দীপ্তকে লাঞ্চে যেন সেটা না দেই। একবার দীপ্তর লাঞ্চে পাস্তায় গরুর কিমা দিয়েছিলাম, বারে বারে বলেছিলাম, ও যেন খেয়াল রাখে ওর কোনো বন্ধু যেন চামচ না ঢুকায় ওর লাঞ্চে। মাঝে মাঝে বন্ধুরা চেখে দেখে লাঞ্চ কারো কারো। যারা গরু খায় না তাদের সাথে বাইরে খেতে গেলে যেন গরুর মাংস অর্ডার না করে দীপ্ত তা ওকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছি। এটা হচ্ছে মিউজুয়াল রেস্পেক্ট।
ক’দিন আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “মা কেউ যদি পর্ক অর্ডার দেয় মুসলমান কারো সামনে তা হলে কি অসুবিধা?” আমি বলেছিলাম, অসুবিধা নেই। তবে পারলে না খাওয়াই ভালো। যেমন ভেজিটেরিয়ান মানুষের সাথে খেতে গেলে মাংশের ডিশ অর্ডার না করাই ভালো, গরু না খাওয়া মানুষের সামনে গরু না খাওয়াই ভালো। এগুলো হচ্ছে মিউচুয়াল রেস্পেক্ট।
বাংগালী মুসলমান যে ভাবে গরু খাওয়ার গল্প করে হিন্দুদের সামনে, শুকর খাওয়ার গল্প যদি এক কণাও কেউ করতো তাদের সামনে তা হলে সেই মানুষের খবর ছিল! ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মাথায় শুকর খাওয়া হারাম এমন ভাবে ঢুকানো হয় তার এক কণাও যদি “ঘুষ খাওয়া হারাম” প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ঢুকানো যেতো!
Think positive be optimistic. Don’t force other to have food or drinks they don’t like. That’s the spirit of humanity. Have your food according to your food habit no matter other table is serving what. MacDonald and other fast food shops are braking all meat items in same pan do you ever think about it? Americans are highly educated people than us. We order what we want. If there is no problem why in family occasion matters? You are staying in USA for long time hope you understand more critical problem has been facing migrated people’s like you. Help each other, respect each other’s value that is more important and introduce all Guests about your served dish this is more important.