স্বামী সমাজ ও আমাদের বাড়িয়ে দেয়া হাত

IMG_20150410_155800নায়না শাহরীন চৌধুরী: স্বামীর সমার্থক শব্দ কি প্রভু? আমি ঠিক জানিনা। হিন্দু সাধুদের স্বামী সম্বোধন করা হয়। পারিবারিক জীবনে আমরা যাদের স্বামী জানি তাদের এই “স্বামী” শব্দটি কি ঐ প্রভুমূলক শব্দ থেকে এসেছে? হয়তো।

স্বামী ব্যাপারটায় বাঙালী মেয়েদের এতোটাই প্রভুভক্তি যে স্বামী দুশ্চরিত্র জেনেও, স্বামীর মার খেয়েও নানান উপায়ে মনকে বুঝ দেয়, ‘লোকটা হাজার খারাপ হোক…অমুক তো করে না…তমুক তো করে না’।

দিনের পর দিন শারীরিক-মানসিক নির্যাতন সহ্য করে হাসি মুখে ফেসবুকে ছবি তোলে। স্বামী নামক বিভীষিকাটি যেমনই হোক, মানুষ তার কদর্য দিক জানবে কেন? কী সাবধানে আমরা মেয়েরা আড়ালে রাখি সব দুর্গন্ধ। আসলেই কি আমাদের সহ্যশক্তি বেশী, নাকি মানুষের কথা শুনে আমাদের ঢেঁকি গিলতে গিলতে গলা বড় হয়ে গেছে।

চাকরিজীবী এক মেয়ে, সারাদিন বাইরে খেটে বাসায় ফিরে সংসারের সব কাজ করে, আর প্রভু…মানে স্বামীজী খেয়ে দেয়ে নিজের প্লেট ধুয়ে রাখতেও তার সম্মানে লাগে। আপনার সাথে গল্পগুজব করুক বা নাই করুক, দুঃখে কষ্টে সহানুভূতি দেখাক বা না দেখাক, সময় দিক বা না দিক, রাতের কর্মটিতে সবসময় আপনার আপত্তি টিকবে, তা ভাবা সত্যি অন্যায়!

আর যখন-তখন চাকরি ছেড়ে দেবার হুমকি সুলভ আদেশ তো আছেই। এই স্বামীধনটি হয়তো জানে না, বা জানলেও পাত্তা দেয় না, যে তার দাসী…মানে স্ত্রীর কাছে নেহায়েত সে একটি সাইনবোর্ড।

বাঙ্গালী মেয়েদের যতোই দোষারোপ করুন না কেন এই সুশীল অগ্রগামী সমাজে, একটা ‘বিবাহিত’ সাইনবোর্ড বহু পুরুষ নামক গা ঘিন ঘিনে তেলাপোকার হাত থেকে আমাদের বাঁচায়। বাঙ্গালী মেয়েরা যথেচ্ছা যৌনাচারে বিশ্বাসী নয়। তারা বিছানা ও মননে এক পুরুষ নিয়েই তৃপ্ত থাকতে চায়। তাই এই বিবাহিত সাইনবোর্ডের স্বামীটিকে এই নিরাপত্তার স্বার্থে “স্বামীজি”ও করে তোলে। হোক না তার স্বামী বহুগামী। তাও সে ‘দেবতা’।

আপনি যদি চাকরি না করেন, তাহলে তো স্বামী মহাশয়ের নজরে, সিরিয়াল দেখা ছাড়া আর কিছু করেন না। তাঁর চোখ, গোছানো ঘর দেখে না, গরম খাবার দেখে না, যত্নে রাখা শিশুটিকে দেখে না।

মজার ব্যাপার হলো, সহ্য করতে করতে মেয়েটির যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন তার পাশে কেউ দাঁড়ায় না। পিত্রালয় থেকে ‘অ্যাডজাস্ট(!)’ করতে বলে, বন্ধুরা নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে গুজগাজ ফিশফাশ করে। তখন ঐ মেয়েটা আর সাহস পায় না বড় একটা ঝড় তুলতে। মেয়েটার মনের ভেতরের ভিতু শিশুটা একা কাঁদে, দেওয়ালে মাথা ঠোকে, কিন্তু মুক্তি না পেয়ে একদিন নিঃশেষ হয়ে যায়।

আমরা কি পারি না, আমাদের আশে পাশে এই ‘বাচ্চা’ মেয়েদের একটু খোঁজ নিতে। ওদের সাহস দিতে। কিছু না পারি, অন্তত মুখের কথাই বলি, ‘আমি তোমার পাশে আছি’। এইটুকুও তো অনেক, তাই না?

লেখক ও সঙ্গীত শিল্পী    

 

শেয়ার করুন: