লুতফুননাহার লতা: একটা চাপ ধরা ব্যথা নিয়ে বুকে, ঘুমাতে গেছি প্রায় শেষ রাতে। এটিএন নিউজের একটা লিংক কেউ পোস্ট করেছেন ফেসবুকে যেখানে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর একটি বইয়ের লেখক, প্রকাশক, মুদ্রক, ও সম্পাদক তিনজনকে গ্রেফতারের ভিডিওসহ সংবাদটি আছে। শামসুজ্জোহা মানিক ভাইকে দেখিনি কোনদিন, কিন্তু ক্যামেরার কল্যাণে, টিভির কল্যাণে এই সজ্জন মানুষটিকে দেখে নিজের মাথা নত হলো।
ছি:! এ সব কী করছি আমরা! এই আমাদের সভ্যতা! ছি:! ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গনজাগরণের অকুতোভয় ব্লগার ছেলেগুলোকে এরেস্ট করে যখন সন্ত্রাসিদের মত জিনিসপত্র সামনে রেখে ছবি ছাপা হয়েছিল, কম্পিউটারগুলো সামনে রেখে ওদের ছবি দিয়েছিল, তখনো সেই নির্লজ্জ আচরণ আর অবস্থান দেখে মাথা হেঁট হয়েছে।
জনাব শামসুজ্জোহা মানিক কি লিখেছেন পড়িনি, তবে যেভাবে তাকে দেখানো হলো তা নিতান্ত অন্যায়। মন খারাপ হবার মতই। বাংলা একাডেমির একুশের বই মেলা থেকে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ বসে আছে এমন একটা ছবিও দেখলাম। কিন্তু অবাক কাণ্ড একদম নিরব বাংলা একাডেমী। নিরব একাডেমির পরিচালক শামসুজ্জামান খান। নিরব সারা দেশের যত বুদ্ধিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শত শত একুশের পদক প্রাপ্ত কাঙাল কবি সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক সব! সব নিরব।
এ এক মহা তামাশা! একজন লেখকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্র হয় কী করে! একটু আগে অন্য একটা লিংক থেকে পড়লাম উনি যা লিখেছেন বা অনুবাদ সংকলন করেছেন। দেশের মানুষ পড়ে দেখুক তা সত্যি কি না। আমি মনে করি প্রত্যেকের তা পড়া উচিত! জানিনা সরকার তাঁদেরকে এরেস্ট করে চাপাতিওয়ালাদের হাত থেকে বাঁচালেন কিনা!
দেশের বর্তমান সরকার চাইছেন ঝুট ঝামেলা ছাড়াই শান্তিতে দেশ চালাতে। তাতে যদি মত প্রকাশের স্বাধীনতা যায়, যাবে! ভাইবার বন্ধ হয়, তো হবে। অভিজিৎ, অনন্ত , দীপন হত্যা হয় তো হবে। হত্যাকারীকে এরেস্ট করে বিপদে পড়তে রাজী নন তারা।
বরং আমরা যারা জান জীবন দিয়ে সারা দেশ উজাড় করে ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নামে , মুক্তিযুদ্ধের নামে যুদ্ধাপরাধীর বিচার চেয়ে প্রিয় দলকে ক্ষমতায় এনেছি তাদেরই উচিত একটু চুপ চাপ থাকা। এতো কচলানোর দরকার কি!!!
(ইতরের দেশ: নবারুণ ভট্টাচার্য)
আমি একটি ইতরের দেশে থাকি
এখানে বণিকেরা লেখকদের উদ্ভাবন করে
এবং লেখকেরা উদ্ভাবিত হয়।
আমি একটি ইতরের দেশে থাকি
যে দেশের বুদ্ধিজীবী অধ্যুষিত সরকার
শীতের ইথারের মধ্যে
গরীব মানুষদের ঘর ভেঙ্গে দেয় –
আমি একটি ইতরের দেশে থাকি
যেখানে অবশ অক্ষরমালা চিবুতে চিবুতে
কবিরা গরু হয়ে যায়-
উল্টোটাও যে হয় না এমনও বলা যায় না।
আমার ভাগ্য আমি নিজেই ভেঙ্গেছি
তাই বাতিল স্টিমরোলারের
কাছে বসে থাকি
বসে থাকি আর
রাস্তা বানাবার গল্প শুনি।