এবছর প্রকাশ্যে চুমু, তাহলে আগামীতে প্রকাশ্যে সঙ্গম হয়ে যাক!

kiss 1ড. সীনা আক্তার: ভার্সিটিতে থাকতে আমাদের মনে হলো ‘নীল’ ছবির কথা কতো শুনি, কিন্তু জিনিসটা আসলে কী! তিন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম এই জিনিস না দেখলে কেমনে হয়! তো, অনেক কষ্টে আরেক বন্ধুর মাধ্যমে একটা VHS ক্যাসেট যোগাড় করলাম, কিন্তু দেখবো কী করে!

সেসময় নেট ছিল না, হলে ভিসিআর যোগাড় করে দেখার মতো দুঃসাহস ছিল না। ঠিক হলো ঢাকায় আমার এক আত্মীয়ের বাসায় দেখা হবে।সে বাসার সকলেই সকালে অফিসে/কাজে যায় এবং বিকালে ফেরে। ফোন করে ব্যবস্থা করলাম এবং তিন মেয়ে সকালে আত্মীয়ের বাসায় হাজির হলাম।

আমরা এতোটাই উত্তেজিত ছিলাম যে ঐ বাসার সবাই আমাদের এই মিশন নিয়ে কী ভাবছে তা খেয়ালও করিনি। যাই হোক, সবাই কাজে বের হলে আমরা টিভিরুমের পর্দা টেনে, দুরু দুরু বক্ষে ক্যাসেটটা চালালাম …। সেই সময়ের অনুভূতি আজকের অনেকেই হয়তো বুঝবে না, আদিখ্যেতা ভাববে। তা ভাবুক।

ওরে খোদা… ৪-৫ মিনিট দেখার পরই আমার আর রুচি হলো না ঐ জিনিস দেখার। আমি উঠে গেলাম। আমার দুই বন্ধু আরো কিছুক্ষণ দেখলো। বিষয়টা আমার এতোটাই অসহনীয় মনে হয়েছিল যে দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতেও ইচ্ছা হলো না। আমি জানি এই জিনিস অনেকে আনন্দ নিয়ে দেখে, কিন্তু আমার জীবনে সেই প্রথম এবং সেই শেষ। তবে যারা দেখেন তারা প্রাইভেটলি দেখেন, প্রকাশ্যে না।

সেক্স এবং সম্পর্কের ব্যাপারে বিশ্বের অনেক দেশই যথেষ্ট উদার, কিন্তু কোন দেশই প্রকাশ্যে সেক্স বা সঙ্গমকে অনুমোদন দেয় না। সামাজিক সুস্থতার জন্যই এর অনুমোদন নেই। এমনকী পর্ণো দেখার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ মেনেই তা দেখতে হয়, যেমন অপ্রাপ্ত বয়স্ক কারো সামনে বা একসাথে পর্ণো দেখা মানে সেক্স ক্রাইম।

চুমু’র অনেক প্রকারভেদ আছে কিন্তু যে চুমু নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চু চু হচ্ছে তা প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের চুমু, বাচ্চাদের আদর করে দেয়া চুমু নয় মোটেও। প্রকাশ্যে এই চুমু আমাদের সংস্কৃতির অংশ না। সময়ের স্রোতে ভবিষ্যতে এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলেও হতে পারে, হালে অনেককিছুই তো হচ্ছে, কিন্তু চুমু বা সেক্স এখনো হয়নি।

kiss 2সংস্কৃতির বিবর্তন হয় ধীরে ধীরে, হঠাৎ করে না। আয়োজন করে প্রকাশ্যে চুমা-চুমি মানে এটা আমাদের সংস্কৃতিতে চাপানো হচ্ছে। স্পষ্টতই এটা আমাদের সংস্কৃতির ওপর একধরনের নিপীড়ন, কারণ জোরপূর্বক কিছু মানেই নিপীড়ন। তাও আবার অন্য দেশের, অন্য সংস্কৃতির ধার/চুরি করা একটা ধারণা দিয়ে।

আমি জানি এই চুমা-চুমি’র পক্ষে অনেকেই যুক্তি দিচ্ছেন এবং আমার মতো বিপক্ষদের ধুয়েও দিচ্ছেন। কী আর করা! সকলেরই মতামত দেবার অধিকার আছে। আমি বরং আগামী বছরের আয়োজন নিয়ে চিন্তা করি! আপনারও শামিল হতে পারেন আমার সাথে। 

ইভেন্ট: ২০১৭ সালের ভ্যালেনটাইন দিবসে পুলিশ প্রহরায় নারী-পুরুষের সঙ্গম! এই আয়োজনেও অনেকে হয়তো যাবেন এবং অনেকে এর পক্ষে যুক্তি দেবেন: সঙ্গম হচ্ছে স্বর্গীয়, সঙ্গমের জন্যই সমাজ টিকে আছে, যারা এর বিরুদ্ধে বলছেন তারা কি সঙ্গম করেন না? ইহা ছাড়া কি কারো চলে? তাহলে এই ইভেন্ট হতে পারবে না কেন? ধর্ষণ হতে পারলে সঙ্গম হবে না কেন। অনেক যুক্তি।

আমার মতো তখনও যারা এর বিরুদ্ধে বলবে তারা হচ্ছে ব্লা…ব্লা…ব্লা…।

সবাইকে পয়লা ফাল্গুনের আর ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা!!

শেয়ার করুন:

কথায় আছে দুইদিনের বৈরাগী ভাতকে বলে অন্ন। সদ্য দেশত্যাগী অতি উত্সাহীরা বিদেশের মাটিতে পা রাখতে না রাখতেই সব কিছুতেই একধরনের সোন্দর্য্য দেখতে পান। তারা নুতন দেশের শহরগুলোতে লাল-নীল্ বাতি দেখে সেই ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইলো’ গানের জগতে বসবাস করছেন।

এখানে ড. সীনা আক্তার যা লিখেছেন, “সংস্কৃতির বিবর্তন হয় ধীরে ধীরে, হঠাৎ করে না। আয়োজন করে প্রকাশ্যে চুমা-চুমি মানে এটা আমাদের সংস্কৃতিতে চাপানো হচ্ছে। স্পষ্টতই এটা আমাদের সংস্কৃতির ওপর একধরনের নিপীড়ন, কারণ জোরপূর্বক কিছু মানেই নিপীড়ন। তাও আবার অন্য দেশের, অন্য সংস্কৃতির ধার/চুরি করা একটা ধারণা দিয়ে।”

আমি তাঁর (ড. সীনা আক্তার) সাথে ১০০ ভাগ একমত। আমি মনে করি কারো কোনো পারপাস সার্ভ করার জন্যে না হলে এই ধরনের উদ্ভট ইভেন্ট খোলার কোনো কারণ নেই।এটা উদ্যোক্তাদেরকে তো বটেই, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। দেখতে হবে, এরা সমাজকে কতোটা অধপতনের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে এবং আমরা এদেরকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের পথপ্রদর্শক সাজতে দেবো কিনা।