প্রিয়াংশু চাকমা: ধর্ষণ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইন্সার্জেন্সি দমনে রাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী যুদ্ধাস্ত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে চিরতরে বিলুপ্ত করে দেয়ার জন্য একটি কৃত্রিম যুদ্ধাবস্থা বজায় রেখেছে এই রাষ্ট্র। সহিংস দমননীতির মাধ্যমে পরিচালিত তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির নামে আদিবাসীদের উপর হত্যা, গণহত্যা, জ্বালাও-পোড়াও নীতির পাশাপাশি একটি শক্তিশালী যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে আদিবাসী নারী ও মেয়েশিশুদের উপর ধর্ষণ নির্যাতনের ঘটনা বহু বছর ধরে চলে আসছে।
সকল ধর্ষণ এবং ধর্ষণ পরবর্তী অবস্থাকে নতুন সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে ডাইভার্ট করার ঘটনায় পাহাড়ে মোতায়েন রাখা বিভিন্ন সরকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত-পালিত সেটেলার বাঙালীরাই জড়িত।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোন ঘটনারই দায়ী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়না। এজন্যই আমরা বলি, উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রই এসব বাঙালী ধর্ষকদের আদিবাসী নারী ও মেয়েশিশুদের ধর্ষণের জন্যই লেলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনেক সুশীল বাঙালী আমাদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলে থাকেন- “ধর্ষক ধর্ষকই, ধর্ষকের কোন জাত নেই, ধর্ম নেই।”
শুধুমাত্র বাঙালীত্বের কারণেই তাঁরা ধর্ষকের পক্ষাবলম্বন করে পক্ষান্তরে ধর্ষণকারীদেরই উৎসাহিত করেন।
২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে কমপক্ষে ৩৪ জন আদিবাসী নারী ও মেয়েশিশু ধর্ষণ, নির্যাতন এবং ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন তথাকথিত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ৩২ জন সেটেলার বাঙালী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী সেটেলার দ্বারা ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হন ৩৫ জন আদিবাসী নারী ও মেয়েশিশু।
সবগুলো ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সকল ধর্ষকের জাত একটাই, তাহলো বাঙালী এবং সকল ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুদের জাত একটাই, তারা সংখ্যালঘু জুম্ম আদিবাসী।
সংঘটিত এসব ঘটনায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় আর গ্রেফতার হলেও অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যায়। ফলে তারা আবারও অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহিত হয়। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে এ ধরনের ঘটনা কিছুটা হলেও কম হতো।
আমার ফেসবুকের চার হাজার বন্ধুর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ বাঙালি। আমি জানি তারা সবাই ভালো বাঙালি। সবার চিন্তা চেতনা মঙ্গলজনক এবং প্রগতিশীল। আর যে ধর্ষকগুলো দিনের পর দিন জুম্ম নারীদের ধর্ষণ করে যাচ্ছে, তারাও কিন্তু বাঙালী। পাকিস্তানী হায়েনা না।
না ভাই, ” ধর্ষকের কোন জাত নেই, ধর্ম নেই” এই কথা আমাকে আর বলতে আসবেন না।
ভালো কাজের সুমান যেমন বলে বলে বেড়ান, নিজের অর্জন বলে দাবি করেন। খারাপ কাজের দুর্নামও আপনাকে শুনে শুনে বেড়াতে হবে। এবং তা নিজের না বলে চালিয়ে দিলে তো হবেনা।
এই যে জাতি বিদ্বেষ, ঘৃণা মানুষের মনে শেখড়ের মত কিভাবে ছড়ায় সেটা সুবোধ বাঙালী বা কাউকেই বুঝিয়ে বলতে হবেনা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নয়ন, ধর্ষক প্রতিনিধি দিয়ে হয়না সেটাও সুবোধ বাঙালি বা কাউকেই বোঝাতে হবেনা।
তারপরও কিভাবে অন্য জাতির কাছ থেকে শান্তি, সম্প্রীতি, বিদ্বেষহীনতা আশা করেন?
আজ পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ কি এই ধর্ষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে জোর গলায় কিছু বলেছেন? প্রতিবাদ করতে বা প্রতিবাদে শামিল হতে আমাদের সাথে রাস্তায় নেমেছেন?
বরং অনেকেই আমরা প্রতিবাদ করলে “ধর্ষকের কোন জাত নেই, ধর্ম নেই” বলে নিজের দায়িত্ব খতম করেন। আমরা রাস্তায় নামলে তাচ্ছিল্য করে বিদ্রুপের হাসি হেসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখেন। মনে রাখবেন, আপনারা পাকিস্তানীদের যেমন ঘৃণা করেন। এমন সময় আসবে আমরাও বাঙালীদের জন্মের ঘৃণা ঘৃণা করব। সে আমরা মরি বা বাঁচি, এখানে থাকি বা ভিনদেশে থাকি।
Please take down the photograph of the wounded person. If she is a victim, then we are victimizing her even more. Thanks.
Thanks. Its already done.