
তামান্না সেতু: একবছর আগের কথা, বাতিঘর নিয়ে আমাদের যা চলছে ব্রেয়াল গ্রিলের ভাষায় তার নাম ‘টিকে থাকার সংগ্রাম’। বাতিঘরকে কেউ চেনে না, বাচ্চা-কাচ্চা নাই। আমি রোজ ছয়জন শিক্ষক সাথে নিয়ে বাতিঘরে বসে থাকি। সব মিলিয়ে পাঁচ ছয়জন ছাত্রছাত্রীর ভেতর ৫০% এবসেন্ট থাকে। মানে তিনজন স্টুডেন্ট আসে।
আমি হাসিমুখে তাদের কোলে নিয়ে ক্লাস করাই এবং একটু পরপর বাথরুমে যেয়ে কাঁদি।
বাতিঘরের আলো নিভে যাবার দুঃস্বপ্ন প্রতি মুহূর্তে শোয়েবকে ম্লান করে দিচ্ছিল।
একটা বিশ্বাস ছিল, কোনভাবে যদি বাতিঘরের কথা সকলে জানতে পারে তবে তারা আসবেই এখানে। কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছানোর সামর্থ্য আমাদের ছিল না।
একবার আঁচল ঝেরে ৫ হাজার টাকা বের করলাম এবং ভাবলাম কিছু পোস্টার করি। দেয়ালে দেয়ালে লাগালে কিছু মানুষ জানতে পারবে।
এক হাজার পোস্টার করতে ৫ হাজার টাকা লাগবে জেনে আনন্দিত হয়ে কাজটি করে ফেললাম।
পোস্টার হাতে আসার পর মনে পরল -‘পোস্টার দেয়ালে লাগাতেও তো টাকা লাগে। সেটা তো নাই’ ।

আমি তখন কুয়েত এয়ারে জব করি। রোজ অফিস শেষে সোজা চলে যেতাম লালমাটিয়া। গায়ে ক্রুদের পোশাক । কোমরে গামছা বেঁধে দেয়ালে জ্বাল দেয়া আটা লাগাই আর পোস্টার সাটি। আমি ক্লান্ত হয়ে গেলে কাজটি করে শোয়েব । রাস্তার লোকজন হাসি হাসি মুখ করে আমাদের দেখে।
৫০০ পোস্টার লাগিয়ে গায়ে জ্বর নিয়ে সেই কাজে ইস্তেফা দিলাম।
সে সময় প্রচুর কাগজের পত্রিকাকে, টিভি চ্যানেলকে আমরা পটানোর চেষ্টা করতাম একটা ফিচার যদি তাদের দিয়ে করানো যায়।
কেউ আসেনি। কেন আসবে? কে বাতিঘর?
কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে বাতিঘরের। বেশকিছু টিভি চ্যানেলের নিউজেও কাল দেখলাম আমার বাতিদলকে দেখাচ্ছে। প্রতি মাসেই এখন এমন হয়। পত্রিকা থেকে ফোন দিয়ে আমাদের শিডিউল নেয় বাতিঘরে আসার জন্য!
নানান প্রশ্ন করে তারা আমাদের সাফল্য নিয়ে। আমি সুন্দর সুন্দর উত্তর দেই।
চোখের সামনে ভাসতে থাকে – শ্যামলা একটি মেয়ে আর শুকনো একটি ছেলের মুখ। যারা ক্লান্ত ভঙ্গিতে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগাচ্ছে তাদের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় !