
আপেল মাহমুদ: অনেকদিন আগে একটা ইনডিয়ান শর্টফিল্ম দেখছিলাম। ফিল্মের ঘটনাটা মোটামুটি এরকম, কোন এক বিজয় দিবসের দিন একটা ৭-৮ বছর বয়সের ছেলে রাস্তায় জ্যামের মধ্যে পতাকা বিক্রি করছে। ১ টা পতাকা ৫ টাকা। জ্যামের মধ্যে আটকে থাকা গাড়িগুলোর কাছে যেতেই সবাই বিজয়ের আনন্দে বাচ্চাটার কাছে পতাকা কিনছে। কার, মাইক্রো, মোটরসাইকেল, সাইকেল আরোহী সবাই। নিমেষেই তার সব পতাকা বিক্রি হয়ে গেল।
ছেলেটা খুশি হয়ে যখন পতাকা বিক্রির টাকাগুলো নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল তখন একটা নেশাখোর ছিনতাইকারী বাচ্চা ছেলেটাকে মেরে তার সব টাকা কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। বাচ্চাটা কেঁদে কেঁদে বাড়িতে গেলে তার বাবা পুরো ঘটনাটা অবিশ্বাস করে। মনে করে তার ছেলেটা তাকে বোকা বানাচ্ছে। ছেলেটাকে প্রচণ্ড মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। টাকা না নিয়ে আসলে বাড়িতে ঢোকা নিষেধ, খাওয়া দাওয়া নিষেধ।
ছেলেটা সারারাত বাইরে কাটায়, না খেয়ে। রাতের শেষে যখন প্রচন্ড ক্ষুধায় ডাস্টবিনে খাবার খুঁজছিল তখন সে সেখানে বেশ কয়েকটা পতাকা খুজেঁ পায় যেগুলো দিনের বেলা সে বিক্রি করেছিল। সে পতাকাগুলো মুছে পরিস্কার করে।
পরদিন সকালে ছেলেটা আবারো সেই পতাকাগুলো নিয়ে রাস্তার জ্যামে আটকে থাকা মানুষগুলোর কাছে যায়। না, আজ আর কেউ পতাকা কিনছে না। খুব অনুনয় বিনয় করেও একটা পতাকাও বেচতে পারেনা। এমনকি ৫ টাকায় ২ টা পতাকা দিতে চাইলেও কেউ নেয়না। বাচ্চা ছেলেটা অবাক হয়ে যায়। গতকালকেই সবাই আগ্রহ নিয়ে যে পতাকা কিনলো আজকে আবার তারাই সেই পতাকা দেখে এড়িয়ে যাচ্ছে। কী অদ্ভূত!
আসলেই অদ্ভুত! আমার ফেইসবুক টাইমলাইন লাল সবুজে ভরে গেছে। পলিটিক্যাল নেতারা পর্যন্ত লাল সবুজের প্রোফাইল পিকচার দিচ্ছে। খুব সকালে ‘যদি রাত পোহালেই শোনা যেত শেখ মুজিব মরে নাই’ গান শুনে ঘুম ভাঙ্গছে। এখনো একটার পর একটা দেশের গান বাজতেই আছে। সবাই আজ দেশের গান শুনছে। রাস্তায় আজ সবার হাতে পতাকা, গায়ে লাল সবুজের পোশাক।
অদ্ভুত, সবকিছু শুধুই আজকের জন্য। কাল আর কেউ দেশের গান শুনবে না, পরবে না লাল সবুজের পোশাক। পতাকা কিনবে না কেউ। আমাদের পলিটিক্যাল নেতারা যেমন শেখ মুজিবের কাছ থেকে শুধু ‘মুজিব কোট’ টা নিয়েছে, তেমনি আমরাও নিয়েছি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পোশাকি আনন্দটা, আদতে চেতনার জায়গায় আমরা সবাই অন্ত:সার শূন্য।