শামীমা মিতু: টিশার্ট, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, স্পোর্টস সু আর পিঠে র্যাকেট ভরা ব্যাকপ্যাক। এই পরেই মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে প্রায়ই সকালে যেতাম ব্যাডমিন্টন খেলতে।বাসা থেকে রাস্তায় বের হলে লোকজন যেন এলিয়েন দেখার মতো তাকিয়ে থাকতো। কারণটা সম্ভবত আমার একহাতে ধরা বাচ্চার হাত!
আমাকে অনেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছে, বাচ্চা আপনার? কতদিন হলো বিয়ে হয়েছে? তাদের বিস্ময়টা স্পষ্ট বুঝতে পারতাম। কোনো সন্তানের মাকে এভাবে দেখে অভ্যস্ত না আমাদের দেশের মানুষ।
মাকে যেন হতে হবে কেমন! আমাদের সমাজ যেন ছক বেঁধে দিয়েছে, মা হয়ে গেলে এই পোশাক পরতে হবে, এইভাবে চলতে হবে, এইভাবে কথা বলতে হবে সবকিছু। মায়েদের রাস্তার মাঝে গান গাইতে গাইতে বৃষ্টিতে ভেজা মানা! অনেক চাওয়া পাওয়া মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা। শহরের মায়েরা তাও অনেক কিছু করতে পারেন, এখনো গ্রামে, যদিনা সে খেটে খাওয়া নারী হয়, তাহলে তার জন্য সবকিছুই করা মানা!
আমার মা প্রায়ই একটা কথা বলতো, আরে আমাকে এইসব মানায় না, মা হইছি, নানী হইছি!
দেশে থাকতে পাহাড়ের টানে ছুটে যাওয়াটা ছিল নেশার মতো। একজন তো মেসেজ পাঠালো এই লিখে, ‘মেয়ের দিকে তাকিয়েও তো অন্তত এইভাবে ছেলেদের সাথে যেখানে-সেখানে ঘুরতে যাওয়া বন্ধ করতে পারেন!’
তার মানে মা হলে কখনো-সখনো স্বামী সন্তানকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন, কিছু ব্যাকপ্যাক নিয়ে বনে জঙ্গলে হারিয়ে যাবেন তা হবার নয়! তাও আমার শাশুড়ি-শশুর, আত্মীয়স্বজন ছিল না, কথা বলার, আমাকে নিয়ে ফিসফিস করার। এখনো অনেক পরিবারে আছে যেখানে সবাইকে না খাইয়ে মা খেতে পারেন না!
এমনিতেই আমাদের সমাজ মেয়েদের জন্য অনেক সীমাবদ্ধতা, তার উপর মা হলে সেই মেয়ে যেন ভিন্ন গ্রহের প্রাণী হয়ে যায়! কিন্তু মা তো একজন মানুষ, খেয়াল রাখি তার উপর চাপিয়ে দেয়া স্যক্রিফাইস যেন আমরা আদায় না করে নেই। সমাজ যা বলুক সন্তান হিসেবে চাইলে আপনি পারেন মায়ের ‘মানবীসত্তা’কে ফিরিয়ে দিতে।