সুতরাং, এই কারণেই, শুধুমাত্র এই কারণেই আমি তোমাদেরকে ঘৃণা করবো না, দেবো না তোমাদের প্রাপ্য পুরস্কার-যেটি তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে আশা করেছিলে। যদিও তোমরা সেটি পাবে, তবে ঘৃণার প্রতিদানে ক্রোধ হলো সেই মুর্খতা যেটি তোমাদেরকে সেই পশু হিসেবে সৃষ্টি করেছে। তোমরা চেয়েছিলে, আমি আমার নিজের দেশের নাগরিকদের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস ছুঁড়ে দেই, তোমরা চেয়েছিলে আমি আমার নিরাপত্তার জন্য বিসর্জন দেবো আমার স্বাধীনতা। পারবে না, হেরে গেছো তোমরা। একই খেলা তোমরা খেলতে পারবে না।
আমি আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে আজকেও দেখলাম; মনে হল, দীর্ঘ অনেকগুলো রাত এবং দিনের পরে। সে সবসময়ের মতোই আজকেও অপরুপা ছিলো, ঠিক তেমনই সুন্দরী ছিল, যেমনটা সে ছিল শুক্রবার রাতে, যেমনটা সে ছিল ঠিক ১২ বছর আগে- যখন আমি প্রথমবার তাঁর প্রেমে পড়ি।
হ্যাঁ, আমি শোকে ভেঙ্গে পড়েছি – এইটাই একমাত্র অতি ক্ষুদ্র জয় যেটি তোমরা পেয়েছো। আমি তোমাদের এই জয় স্বীকার করি। এবং সেই সাথে আমি এটিও জানি যে এই শোক খুব বেশিদিন থাকবে না। আমি জানি সে প্রতিদিন আমাদের সাথে থাকবে, এবং এমন একটি স্বর্গে সঙ্গ দেবে আমাদের, যেখানে তোমাদের কোন প্রবেশাধিকার থাকবে না, যেখানে থাকবে শুধুই মুক্ত আত্মারা।
আমরা শুধুমাত্র দুটি মানুষ-আমি এবং আমার ছেলে, আমার ১৭ মাস বয়েসি ছেলে। কিন্তু আমরা সারা পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর থেকেও বেশি শক্তিশালী। কারণ আমি তোমাদের জন্য আমার সময় উৎসর্গ করবো না, এমনকি আমার ঘৃণাও নয়। বরং আমি সময় উৎসর্গ করবো আমার শিশুপুত্রের ঘুম ভাঙ্গাতে, প্রতিদিনের মতই আজকেও সে তাঁর প্রিয় খাবারটি খাবে, আমরা এক সাথে খেলতে যাবো, সব কিছুই প্রতিদিনের মতোই থাকবে আমাদের। এবং আমার এই শিশু পুত্রের প্রতিদিনের, সারা জীবনের এই আনন্দই তোমাদের পরাজয়, কারণ তোমরা এমনকি এই শিশুর ঘৃণাটুকুও পাবে না কখনো।
(জঙ্গিদের কাছে ফরাসি সাংবাদিক Antoine Leiris এর লেখা চিঠি, যিনি প্যরিসে জঙ্গি হামলাতে তাঁর স্ত্রীকে হারিয়েছেন। বাংলায় অনুবাদ করেছেন নির্ঝর মজুমদার)