তামান্না কদর: বলছিলাম সেই ১৬ বছর বয়সী মেয়েটির কথা-যে তার মা-বাবাকে হত্যা করেছিলো? সম্প্রতি এই মেয়েটির ফাঁসির আদেশ হয়েছে। পত্রিকা মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম মেয়েটির বয়স ১৬/১৭। এই বয়সী একটি মানুষ জগতের অতো কি বোঝে!
মেয়েটি বুঝেছে, জীবন-জগতের অনেক কিছুই, নইলে মাদক সেবনে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিলো কেনো!? মেয়েটি জগতের যে নিষ্ঠুর উপলব্ধিটি আয়ত্ব করেছে তা হলো- যে মা-বাবা পরম বন্ধু হয়ে উঠবার কথা সে মা-বাবার সাথেই তৈরি হয়েছে তার বৈরি সম্পর্ক। এ উপলব্ধিটি ভয়ঙ্কর। মানুষের জীবন বিপন্ন হবার জন্যে আর অন্য কোন উপলব্ধির প্রয়োজন পড়ে না।
আমরা বর-কনেরা মা-বাবা হয়েই নিজেদের আতেল ভাবতে শুরু করি। নিজেদের শৈশব- কৈশোর একদম ভুলে যাই। কতোটা দুরন্ত-শান্ত, কতোটা বুদ্ধিমান-বোকা, কতোটা ফাঁকিবাজ-অধ্যবসায়ী ছিলাম! সেকথা আর ভাবতে চাই না। নিজেদের ধরে নিই সৎ, নিষ্ঠাবান, অধ্যবসায়ী, ভালো এবং বুদ্ধিমান হিসেবে। আর এমন একটি আদর্শে নিজেদের সাজিয়ে ছেলেমেয়েদের শাসন করার নামে মূলত শোষণ করি। কখনো বা করি মাত্রাতিরিক্ত অবহেলা, কখনো অতিরিক্ত আদর। শিশুর জন্যে শাসন, আদরের পরিমিতি অত্যন্ত জরুরী।
যে বিষয়টা ছেলেমেয়েদের প্রতি একদমই করা উচিত নয় তা হলো অবহেলা। ছেলেমেয়েদের গায়ে হাত তুলি, বকা তো দিই ই, কখনো কি এজন্যে আমরা মা-বাবারা নিজেদের ধিক্কার দিই বা সন্তানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করি? করি না। তাহলে যে মা-বাবার বড়ত্ব(!) থাকে না। মা-বাবাদের মনে রাখা উচিত তারা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে সন্তানের জন্ম দেন, ছেলেমেয়েরা পৃথিবীতে আসবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে থাকে না কোনও এক অজানা জায়গায় অবস্থান করে। আর তাই সন্তানের ভালো-মন্দ আচরণের দায় মা-বাবারই। নিজের সন্তানের ভেতর নিজেদের শৈশব-কৈশোর-যৌবন খুঁজে দেখলে সমস্যাসঙ্কুল হবার কথা নয়।
এই হত্যাকারী মেয়েটি একদিনে এমন আগ্রাসী হয়নি। দিনে দিনে মা-বাবাই মেয়েটির সমস্যাকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে না দেখে কঠোর আচরনের মাধ্যমে আরো প্রকট করে তুলেছেন ( মেয়েটির বক্তব্য স্মরণে)। না হলে মা-বাবার সাথে সন্তানের ম্যাচ না হলেও ভালোবাসার ঘাটতি থাকার কথা নয়। মা-বাবা যদি অত্যাচারী রাজা-রানীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় আর সন্তানকে বানিয়ে রাখে প্রজা তবে এই সম্পর্কে আড়াল তৈরি হবে যে আড়ালের ফলে তৈরি হবে বৈরিতা, হিংসা, ঘৃণা, ক্ষোভ।
জন্ম দিলেই মা-বাবা হওয়া যায়- এ প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মা-বাবা হওয়া কঠিনতম কাজের মধ্যে একটি। এর জন্যে দরকার সততা, নিষ্ঠা, ধৈর্য। মা-বাবা যখন সন্তানের গায়ে হাত তুলেন তখন অপরাধ হয় না এদেশে কিন্তু সন্তান যখন মা-বাবার প্রতিটি কথা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিতে চায় না, তখন রাম, রাম! শুরু হয়ে যায়। প্রতিটি মানুষ তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নিয়ে থাকতে চায়। তাই সন্তান বলেই তার উপর নিজেদের সব ইচ্ছে-অনিচ্ছে চাপিয়ে দিয়ে, গায়ে হাত তুলে অপরাধবোধে না ভোগাটা আরো একটি অপরাধ।
আরো কিছু কথা———
সন্তান যখন চায় না, সন্তান হয়ে যায়। এমন দম্পতির সংখ্যাই বেশী।
মানুষ কতোটা বড়ো হলে বুঝমান হয়?
ঐশীর বোঝবার মতো বয়স হয়েছিলো তখন?
একটা সন্তান কখন মা-বাবা হন্তারক হয়, এর উত্তর খোঁজার দায়িত্ব কি পুলিশ, উকিল, বিচারকদের নেই? সমাজপতিরা ভাববে? প্রধানমন্ত্রী ভাববে? সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ভাববে? সুশীল সমাজ ভাববে? লেখকরা ভাববে? ভাবনার দায়িত্বটি কার?
প্রকৃতপক্ষে ভাবনার দায়িত্বটি সবার। শধু ভেবে বসে থাকলেই হয়? আমরা কিন্তু বড়োজোর ভাবনা পযর্ন্তই, কখনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারি না। সমাজে মাবাবা হত্যার মতো মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা আর যাতে একটিও না ঘটে এর জন্যে আমরা কী উদ্যোগ নিচ্ছি?
হ্যাঁ এমন ঘটনা হঠাৎই হয়। আর হঠাৎ ঘটে যাওয়া এমন একটি ঘটনা যে ঘটিয়েছে তার বয়স তখন যা ছিলো তাতে কি এমন কঠোর সাজা দেয়া যায়? ঐশী জন্মেই এসব করা শুরু করেছিলো? মা-বাবার কোনো দায় ছিলো না, দায় ছিলো না তার প্রতিবেশ, পরিবেশ এর? এসবের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছে আইন প্রয়োগকারীরা? সন্তান মানুষ করতে পারবো কীনা এটি মাথায় রেখে সন্তান জন্ম দেয়া উচিত এমন একটি ভাবনা আমরা কবে ভাবতে পারবো?
ধারাবাহিক খুনগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে এখন নিপাতনে সিদ্ধ। ঐশীর আফসোস সে এই নিপাতনে সিদ্ধ খেলাটি খেলতে পারেনি।
আমার মেয়ে যদি আমাকে এ বয়সে এভাবে মারতো আর মরবার পরও যদি আমার যোগাযোগের কোনো ক্ষমতা থাকতো তাহলে বলতাম- আমার অবুঝ মেয়েটিকে অত বড়ো শাস্তি দিও না।
ছোটদের দোষের দায় কিন্তু ছোটদের নয়, বড়োদের। আমরা বড়োরা অতি চালাক। সকল সময় ছোটদের ওপর দায় চাপিয়ে বেঁচে যেতে চাই। জন্মের পর একটু বুঝে উঠার পর থেকেই আমাদের শিশুরা এভাবেই দায় নিয়ে বেড়ে উঠে। আর আমরা বড়োরা বড়ত্ব নিয়ে সকল সময় ধোয়া তুলসী পাতা।
আইন প্রয়োগকারীগণ আমাদের বুক ভাঙ্গে। আপনাদের সমাজ ভাঙ্গে না।
oyshi r age jodi 10 hoy tobo oke mritodondo dea ochit