সুমন্দভাষিণী: আর্য তার মাকে প্রশ্ন করছে, ‘মা আমাকে ঐ রুমের ইঞ্জেকশনগুলো আরো দিবে’? মা (মিনার্ভা সেঁজুতি) বলেছে, “হ্যাঁ মা, দিতে হবে”..এটা শুনে ও বলছে,” কেন মা আরো দিবে? আমার অনেক কষ্ট হয়”। মা বললো, ‘বাবা, একটা জীবাণু তোমার শরীরে ঢুকে গেছে, ডা: তোমার শরীরে এই ওষুধগুলো ইঞ্জেকশনে ভরে দিচ্ছে যেন এই ওষুধ যুদ্ধ করে পচা জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলতে পারে, এইজন্য তোমাকে একটু কষ্ট পেতেই হবে বাবা, কিন্তু তুমি যদি ইঞ্জেকশন দেয়ার সময় কান্নাকাটি করো, তাহলে এই ওষুধ বেশি কাজ করবে না’।
সেঁজুতি বলছিল, ‘আর্যকে বলেছি, তুমি এই যুদ্ধ জিতে গেলে স্কুলে যাবে, অনেক বন্ধু হবে, আমরা অনেক বেড়াবো… শুনে সে খুব খুশি হয়েছে’।
একজন মা কতটা মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে আজ তার ছয় বছরের এইটুকুন একটা বাচ্চাকে এই কথাগুলো বলছে, ভাবতেও গা শিউড়ে উঠে। ওকে শুধু অনুভব করার চেষ্টা করি। ভারতের ভেলোরের সিএমসিতে আর্যকে নিয়ে মা-বাবা দুজনই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ‘এই লড়াই বাঁচার লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে’-ঠিক স্লোগানের মতো করেই ওরা সেই চেষ্টাটুকু চালিয়ে যাচ্ছে, আমরা তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, দূর থেকে শুধু ওদের হাতটা একটু শক্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছি।
আজ আর্যসোনা কেবলই ওই দুজনের সন্তান না, আজ ও অনেকের সন্তান হয়ে উঠেছে। সবার ভালবাসা আর সহায়তায় আর্য ঠিক ঠিক একদিন ফিরে আসবে আমাদের মাঝে, আমরা এখন সেই স্বপ্নটুকু দেখার সাহস পাচ্ছি। সেঁজুতির একটা স্ট্যাটাস নিয়ে উইমেন চ্যাপ্টারে প্রকাশিত একটা লেখাকে ঘিরে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াস আজ সেঁজুতির মনের ভার অনেকখানিই লাঘব করেছে, এটা নিশ্চিত।
তারপরও খেই হারিয়ে ফেলে সে, আর্য যখন কেমো নিতে গিয়ে থর থর করে কাঁপে, অভিমানে বুক ভাসায়, তখন মা হয়ে সেই সময়টুকু পাড়ি দেয়া সত্যিই কষ্টকর, চিন্তারও অতীত।
সেঁজুতি বলছিল, ‘ওকে তো বুঝাচ্ছি… নিজেকে বুঝাতে বড় কষ্ট….শেষ কেমোটা দেয়ার সময় ও কাঁপছিল ভয়ে….. আমাকে বলছে, মা আমি ভয়ে কাঁপছি… তারপরও নিজেকে শক্ত করে ওকে বুঝিয়েছি। ইচ্ছে করছিল, কোলে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাই, কিছু করার নেই, কেমো শেষ হওয়ার পর যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল, তখন বললাম কাঁদতে কাঁদতে, বাবা, আমাদের এই ছোট ছোট কষ্টগুলো সহ্য করতে হবে, নইলে আরো বড় কষ্ট হবে। মা, ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট পেতে দিচ্ছি না, ভালোর জন্যই তোমাকে ইঞ্জেকশন দিতে দিচ্ছে’।
যে যার মতোন করে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আর্যর। অনেকেই এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কাঙ্খিত সবটুকু টাকা সেঁজুতির হাতে আমরা পৌঁছাতে পারবো।
আর প্রাণভরে চাইবো, আর্য’র কষ্টটা যেন কমে যায়, ও যেন হাসতে হাসতে এই যুদ্ধ জয় করে, মায়ের ভাষায়, ‘জীবাণুগুলোকে’ একেবারে ধ্বংস করে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারে, আমরা সেই হাসিখুশি আর্যকে দেখতে চাই আবারও।
ভাল থেকো বাবা, ভাল থেকো আর্যসোনা, আর বসুধার মতোন কঠিন শক্তি নিয়ে সব সহ্য করে যাও সেঁজুতি, আর্য একদিন ফিরবেই, কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বে তোমার আদরের ‘পাভেল করচাগিন’। আমরা সেই ক্ষণটুকু দেখার অপেক্ষায়।