মারজিয়া প্রভা: শহরের বড় বড় সুপারশপ, রেস্তোরাঁয় দৈনন্দিন ভ্যাট দিয়েই যাচ্ছেন, কখনও ২% , কখনও ১৫%। কিন্তু একবারও কি ভাবছেন যাদের ভ্যাট দিচ্ছেন, তারা আসলেই কি ভ্যাট অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান নাকি! যদি তা না হয়, তাহলে আপনার পকেট থেকে দেওয়া সরকারকে দেওয়া ভ্যাট (ভ্যালু এডেড ট্যাক্স) কখনই সরকারের কাছে যাচ্ছে না, যাচ্ছে ওদের পকেটে। এই লোকগুলাই যখন ত্যালত্যাল মুখে বলছে “ আবার আসবেন ম্যাম/ স্যার”। গা জ্বলে বৈকি।
কিন্তু উপায় তো হাতের কাছেই আছে। চলুন সেই উপায়গুলো জানি।
ভ্যাট অ-অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণঃ
যে রিসিট বা মেমো পাচ্ছেন কেনার শেষে, সেখান থেকে ভ্যাট রেজিস্ট্ররেশন নং টা চেক করুন। সবসময় ওটা ১১ ডিজিটের হবে। ২০১২ সালের পূর্বে ছিল ১০ ডিজিট, এখন প্রত্যেককে ১১ ডিজিট দেওয়া হয়েছে। তাই ১১ ডিজিট না হলে ওরা দ্বিতীয়বার অনুমোদিত হয় নি। তাই তারা ভ্যাটের যোগ্য না।
যাদের নাম্বার ১১ ডিজিটের, তাদের রেজিস্ট্রেশন বৈধ কি না তা চেক করতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটের এড্রেস http://www.nbr.gov.bd/ ।
যদি প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা আসে, তাহলে প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পাওয়ার জন্য বৈধ।
যদি “No result Found” আসে তাহলে অবৈধ।
যদি অবৈধ হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়াঃ
১১ ডিজিটের প্রথম দুই ডিজিট চিহ্নিত করবে কোন কাস্টমসের বিভাগে আওতায় পড়বে। তারপর সেই বিভাগের কাস্টমসের কাছে মেইল করতে হবে দ্রুত। অভিযোগ ও রিসিটের ছবি সহ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেইলের রেসপন্স পাওয়া যাবে। তাঁরা ভীষণ একটিভ ।
কাস্টমস এবং ভ্যাট প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, ভ্যাট রেজিঃ নং এর প্রথম দুই ডিজিট
- ১৭ হলে ঢাকা পশ্চিম, সেক্ষেত্রে মেইল করতে হবে [email protected] এই এড্রেসে
- ১৮ হলে ঢাকা উত্তর, সেক্ষেত্রে অভিযোগ করতে হবে [email protected], [email protected]
- ১৯ হলে ঢাকা দক্ষিণ, অভিযোগ মেইল এড্রেস [email protected]
- ২১ হলে ঢাকা পূর্ব, অভিযোগ এড্রেস [email protected]
- ১১ হলে রংপুর [email protected]
- ১২ হলে রাজশাহী – [email protected]
- ১৪ হলে যশোর – [email protected]
- ১৫ হলে খুলনা – [email protected]
- ২২ হলে সিলেট – [email protected]
- ২৩ হলে কুমিল্লা – [email protected]
- ২৪ হলে চট্টগ্রাম – [email protected]
এত মেইল আইডি মনে থাকবে না, সহজ সিস্টেম কি নেই ?
যারা স্মার্টফোন ইউজার তাদের জন্য একদল যুবক জুবায়ের হোসেন, নিশান ইশতিয়াক এবং আসিফ কামাল তুর্য একটি Android বেসড অ্যাপ বানিয়েছে , যার নাম VAT checker ( ভ্যাট চেকার)।
এই অ্যাপটি আপনাকে জানিয়ে দিবে ভ্যাট রেজিঃ ভ্যালিড কি না!
যদি ভ্যালিড না হয়, তাহলে তা নিজ নিজ সেক্টরের কাস্টমস এবং ভ্যাট প্রশাসনে নিয়োগকর্তার কাছে মেইল পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিবে।
এই অ্যাপ সম্পূর্ণ ফি। বাংলায় লেখা।
আপনি আপনার অভিযোগ বাংলা বা ইংলিশে লিখে, রিসিটের ছবি দিয়ে মেইল করবেন।
VAT Checker ( ভ্যাট চেকার) ডাউনলোডের লিঙ্কঃ https://play.google.com/store/apps/details?id=com.enamelbd.vatchecker
গত ২১ অক্টোবর ২০১৫ তে এই অ্যাপ দিয়ে চেক করে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় নামকরা প্রতিষ্ঠান বনলতা ক্যাফে শপকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অ্যাপ ডেভেলপররা নিজেরা এই ভুয়া প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে। তাদের ভ্যাট রেজিঃ নং ছিল ৯ ডিজিটের। তারা দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমারদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছিল।
খবরটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টিভির সংবাদে প্রচারিত হয়।
আসলে আমি আপনি মিলেই দিন-বদল করতে পারবো, প্রতিবাদ করে অন্যায় বন্ধ করতে পারবো। খালি দরকার একটু চোখ কান খোলা রাখা। অনেক সময় বিল দেওয়ার আগে দেখিই না ভ্যাট রেজি আছে কি নেই, থাকলেও ভ্যালিড কিনা। না দেখে, বিল দিয়ে, রিসিট ফেলে দিয়ে চলে আসি।
এই অভ্যাস বদল করতে হবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের বিলের কাগজে উল্লেখ থাকবে ভ্যাট রেজিঃ নং। না থাকলে সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনি খতিয়ে দেখবেন, ভ্যাটের চালানপত্র দেখতে চাইবেন এবং সন্দেহজনক কিছু পেলে ভ্যাট চেকার অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ করবেন।
তো ? চলুন, স্মার্টফোন অ্যাপটি ডাউনলোডের মাধ্যমে শুরু করি সেই প্রতিবাদ।