মারজিয়া প্রভা: বাচ্চাকালে আমাকে কেউ খেলায় নিত না। বিকাল হলেই ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য নিচে পাঠিয়ে দিত। আম্মু বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকত একটুক্ষণ। সেই অল্প সময়ে মেয়েরা আমাকে এক দুটা কক পিটাতে দিত, আমার টাইমিং কোনদিন কাজের ছিল না। আম্মু ঘরে ঢুকে যেত, আমি খেলায় বাদ পড়ে যেতাম।
সপ্তাহখানেক যেতেই, আমি আর উৎসাহ পেতাম না খেলতে। ভাইয়ের সঙ্গে ঘরে তখন ক্রিকেট খেলতাম। ছোট্ট ঘর, ব্যাটে লাগলেই সিক্স। প্রথা ছিল, ওয়ারড্রবে বল লাগলেই আউট। বিশাল ওয়ারড্রব, বল লাগতোই।
ভাইয়া বড় হয়ে গেলে, আমার খেলার সঙ্গী হারিয়ে যায়। আমি তখন শাড়ি পেঁচিয়ে, টিচার টিচার খেলা শুরু করি। ১০ টাকা দিয়ে স্লেট চক নিয়ে আসি। সামনে থাকা অদৃশ্য ছাত্রদেরকে পড়াতাম। নিজেই রেস্পন্স করতাম। আরও বড় হলে, ভাইয়াকে নিয়ে মা কোচিংয়ে যেত, আমি বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ গান ছেড়ে, কখনও নিজে সুচিত্রা সেন, কখনও নিজেই কাজল, কখনও সম্পূর্ণ নতুন নায়িকার রোল প্লে করতাম।
এই একলা একলা মেয়েবেলা কেটে গেল একদিন। বড় হয়ে গেলাম আমি। এখন আর একলা একলা খেলি না আমি।
তিন চার বছর আগের একটা ঘটনা।
আমাদের ফ্ল্যাটের এক মেয়ে ছাদে খেলছে। আমাদের ফ্ল্যাটের এক বড় ছেলে, কাছে ডেকে, কেন জানি ইচ্ছে করে বার বার ওর বুক হাতাচ্ছে, ওকে বিশ্রীভাবে বসাতে চাচ্ছে। আমি ছিলাম না সেখানে, অন্য এক বড় আপু ছিল। ওই ছেলেটাকে যা তা কথা বলে, মেয়েটাকে ছাড়িয়ে আনে। মেয়েটার ছাদে খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
আজ দেখা হলো লক্ষ্মী বাবলি মেয়েটার সঙ্গে। বিশাল বড় ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। কেমন আছো জিজ্ঞেস করতেই বললো,
“ খুব চাপ আপু, স্কুল থেকে ফিরেই ম্যাথ কোচিং যেতে হবে”। কতদিন মেয়েটা ছাদে যায় না, খেলে না। হয়তো দম বন্ধ হয়ে আসে তার, হয়তো নি:শ্বাস নেয়া হয় না বুকভরে, সেই খবরও আমরা রাখি না। এই শহরে, এতো কোলাহলে কে কার খবর রাখে!
ওরও এইভাবে একলা একলা মেয়েবেলা কেটে যাবে একদিন! এভাবেই কেটে যায়।