সালেহা ইয়াসমীন লাইলী: সরকারের নতুন বেতন স্কেল ঘোষণায় আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, আমাদেরও উচিত এবার আন্দোলনে যাওয়া। নিশ্চয় আমাদের জন্য কোন ভাতার ব্যবস্থা করবে না সরকার। তবু আমাদেরও যেভাবেই হোক সরকারের খাতায় নাম লেখাতে হবে।
হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যেমন খাতায় নাম লেখিয়ে সরকারের তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। আমরা তেমন না পারি কিছু তো একটা করতে হবে। সেটাই হোক আমাদের আন্দোলন।
প্রায় দুই বছর ধরে যেদিনই বেতন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে একটু একটু করে। বেতন পরিকল্পনা হয়েছে, মূল্য বেড়েছে, সংসদে সমালোচনা হয়েছে মূল্য বেড়েছে, মন্ত্রিসভায় গেছে, মূল্য বেড়েছে। এখন কার্যকর হয়েছে, মূল্য আরেক দফা বেড়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমার এক আনা্ও আয় বাড়ে নাই। কিন্তু প্রতিবার মূল্য বৃদ্ধির ধকল আমাকে কেন সইতে হচ্ছে? দুই টাকার মূল্যমান কমেছে বলে ৫ টাকা বাজারে ছাড়ছে সরকার। আমার কাছে দুই টাকার দাম আগের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।
বাস, সিএনজির ভাড়া, রিক্সা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, কাপড়, খাবার ওষুধের বিশেষ সুবিধা পেতে আমার মতো যারা সরকারের বেতন বৃদ্ধির বাইরে পড়ে আছি তাদের জন্য রেশনিং কার্ড সার্ভিস চালূ করবে না কেন সরকার? আমার মতো মানুষগুলোর জন্য কি কিছুই করার নেই? কিছু লোককে মালামাল করে দিয়ে দেশে মানুষে মানুষে বৈষম্য বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।
দেশের কতজন মানুষ সরকারী- বেসরকারী বেতনের আওতায়? কৃষক-কামার-তাঁতী-জেলে ও গার্মেণ্টস কর্মীরাও তো আমাদের কাতারে। আর ব্যবসাসহও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করে। আর সবচেয়ে মেধাবী মানুষগুলোই এনজিওসহ প্রা্ইভেট সেক্টেরে নিবেদিত। সরকারের বেতম বাড়ানোর ঘোষণার আগে কেন অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়া হয় না? তাদের কথা কি একবার ভাবে সরকার?
শুধুমাত্র সরকারের সুবিধাভোগীরাই সরকারকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে না। একজন কৃষকের ভোটও যেমন দাম রাখে, তেমনি একজন সচিবের ভোটও সমান মূল্যমানের। কিন্তু সুবিধা পাচ্ছে শুধু সেই সরকারের খাতায় নাম লেখা সচিব। তাহলে দেশের এতো অগুনতি মানুষ সরকারের লোক নয়? তাদের ভোট যদি দামি হয়, মানুষ হিসেবে তারা কেন দামি হবে না? তারা কী খেয়ে বাঁচবে, সেকথা ভেবেছে কেউ একবারও?
এখন দেখা যাচ্ছে, বাজেটের ধকল সামলাতে আমা্দের এবার সিঁদ কাটতে শিখতে হবে। ট্রেনিং নিতে হবে ব্যাংকের ভোল্ট ভাঙ্গার। অজ্ঞান পাটিতে যোগ দিতে হবে। সরকারি চাকুরেদের পকেট কাটতে হবে। বুকে ছুরি ধরে টাকা কেড়ে নিতে হবে। এসব করে জেলে যেতে হবে। সেখানে একবার গেলে আমরাও সরকারী লোক হয়ে যাবো। তখন আর দুই টাকার দাম বাড়বে না। আমাদের কাছেও দুই টাকা ও পাঁচ টাকা সমান মূল্যমানের হবে।