উইমেন চ্যাপ্টার: সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এখন কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে? বেশ কিছুদিন ধরেই ফেসবুকে নিয়মিত না হওয়ায় এড়িয়ে গেছি অনেক ইস্যু। তবে চোখ এবং মন কোনটাই এড়ায়নি। সবার মন্তব্য দেখেছি, শুনেছি, পড়েছি আর ছি: ছি: করেছি একা একাই। আমাদের রুচিবোধের দৈন্যতা এখন কোথায় গিয়ে ঠেকলো তাহলে?
ফেসবুকে চোখাচোখি হয় না বলে কী নিজেকে আড়াল করা যায়? যতোই মুখোশ পরে থাকি না কেন, কোনো না কোনো ঘটনায় ঠিকই তা খসে পড়ে। বেরিয়ে আসে আমাদের পারিবারিক শিক্ষায় লালিত নিজস্ব রূপটি। কখনও তা সুন্দর, কখনও বা কদর্য।
অনলাইন পত্রিকা বাংলানিউজে প্রকাশ হওয়া মেহেদী হাসানের লেখাটি নজর কেড়েছিল। তার অনুমতি না নিয়েই লেখাটি এখানে প্রকাশ করা হলো এ কারণেই যে, প্রতিবাদের জায়গাটা আমাদের প্রায় সবা্রই একইরকম।
মেহেদী হাসান পিয়াস: “সামাজিকতারও নাকি ভাষা আছে। ভাষার ব্যবহার ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজের পরিচায়ক হয়ে ওঠে। চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধে অবক্ষয় ঘটলে সামাজিকতার ভাষাতেও অবনতি ঘটে। মানুষের চিন্তা-চেতনা, ভাব, মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটে আচার-আচরণ, রুচি-অভ্যাসের মধ্য দিয়ে।
আচার-আচরণও এক ধরনের ভাষা। আচরণ যেমন ব্যক্তির ভাষা, তেমনি আচার হলো সমাজের। ফলে ভাষার ব্যবহারই অনেক সময় সমাজের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়!
ইদানিং রুচি-অভ্যাস, আচার-আচরণ, চিন্তা, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে অসামাজিকতার মাত্রা বেড়েছে বা বেড়ে চলেছে।
অভিনয়শিল্পী হওয়ায় তারকা হিসেবে শিমুকে আমরা কমবেশি সবাই চিনি, অনেকে হয়তো জানেন। শুক্রবার ফেসবুকে শিমু-নজরুলের বিয়ের সুন্দর একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কেউ কেউ সে ছবিতে মন্তব্য বা লাইক দেওয়ায় ছবিটি আমার পেজেও আসে। তারকা হওয়ায় শিমুর বিয়ের ছবিটি পরিবার-পরিজন, ভক্ত-অনুরাগী, বন্ধুরা ছড়িয়ে দেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, খেয়াল করে দেখলাম ছবিটি শেয়ার হচ্ছে অন্য একটি কারণেও। কারণটি খুবই জঘণ্য, নিন্দনীয়, লজ্জার এমনকি অপরাধমূলকও!
শুভেচ্ছা বা অভিনন্দন জানানো তো দূরের কথা, সরাসরি বর্ণবাদি এবং চরম পুরুষতান্ত্রিক আক্রমণ করা হয়েছে নতুন দম্পতিকে। গায়ের রঙ কালো হওয়ায় বর নজরুল ইসলাম এবং শিমুকে অপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ করে মন্তব্য করা হয়েছে। মন্তব্যের ধরন দেখে মনে হয়েছে, মন্তব্যকারীদের কেউ কেউ শিমুর বন্ধুও হয়ে থাকবেন! নিন্দা-প্রতিবাদের মুখে যদিও অনেকে মন্তব্য মুছে ফেলেছেন এরই মধ্যে।
ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ!…। একবিংশ শতাব্দিতে এসে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী লজ্জার, অপমানের। এসব মন্তব্য নারী হিসেবে তো বটেই, মানুষ হিসেবেও শিমুকে অপমান করা হয়েছে চরমভাবে। শিমুর বরের বেলায়ও তাই। অন্যদিকে এসব মন্তব্য ঘৃণ্য বর্ণবাদি দৃষ্টিভঙ্গী চেতনার যেমন প্রকাশ ঘটেছে, তেমনি প্রকাশ ঘটেছে চরম পুরুষতান্ত্রিক লাম্পট্যের।
যারা সচেতন বা অসচেতনভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গী লালন করেন তাদের প্রতি নিন্দা-প্রতিবাদ জানানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। এসব মন্তব্য দেখে চুপ করে থাকা বা নির্লিপ্ত থাকাটাও এক ধরনের অশ্লীলতা।
সামাজিকতা-অসামাজিকতা দু’টোই সহাবস্থান করছে সমাজবদ্ধ ব্যক্তি, চক্র, গোষ্ঠীর মাঝে। ভাল-মন্দ, সামাজিকতা-অসামাজিকতার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। নিরন্তর দ্বন্দ্বের ফলেই এগিয়ে যায় সমাজ-সভ্যতা। এই এগিয়ে যাওয়াটা এমনি এমনি ঘটে না। সমষ্টিক সচেতন প্রয়াসে এগিয়ে নিতে হয়। আর সেটা একমাত্র সমাজবদ্ধ মানুষের পক্ষেই সম্ভব। জীব জগতের অন্য প্রাণী থেকে মানুষের পার্থক্য এখানেই।”