মেয়ে, তুমি কবে করবে বিয়ে……

যৌন মর্ষকাম, বাংলাদেশ ও ভারতহালিমা তুস সাদিয়া: আমাকে প্রায় প্রতিদিনই আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে বিয়ে নিয়ে নানা কথা শুনতে হয়। মোটামুটি প্রায় সবারই এক চিন্তা, মেয়ে কালো-মোটা, বয়স ২১ পার করে ফেললো! বিয়ে হয় না কেন? বর পায় না মনে হয়! সেদিন শুনলাম আমার নিজের আপন চাচা খুবই চিন্তিত আমার বিয়ে নিয়ে এবং তিনি আমার বাবাকে পরামর্শ দিয়েছেন আমার বিয়ের ভালো সম্বন্ধ না আসলে যাতে আমার অসহায়ত্বের কথা বর্ণনা করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়!

স্বল্প-পরিচিত লোকজনের তো পরামর্শের শেষ নেই!

বিয়ে কবে করবা? তোমার বান্ধবীর তো বিয়ে হয়ে গেল! তোমার ছোট বোনেরও তো বিয়ে হয়ে গেল!

আমিঃ দেরি আছে।

মানিনা, মানবো না! কেন দেরি আছে?

আমিঃ আমার পড়াশোনা শেষ হতে এখনও তিন বছর বাকী।

! তিন বছর পর বিয়ে করবা?

আমিঃ না, তারপর ক্যারিয়ারটাকে একটু গুছিয়ে নিব, আরেকটু সময় লাগবে।

বুড়া হয়ে যাবা তো! ২০ এর পরই মেয়েদের বিয়ে করার আসল সময়

আমিঃ হাসি মুখে চুপ করে থাকি

চাকরি করে কি করবা! জামাই তো খাওয়াবেই তোমাকে! চাকরি করলে বাচ্চা দেখবে কে! রান্না করবে কে!

আমিঃ আবারো চুপ করে থাকি

, বুঝেছি! সমবয়সী বয়ফ্রেন্ড ! তাই দেরি করে বিয়ে করবে?

আমিঃ জ্বী না, আমিই দেরি করতে চাই।

আহারে! বুঝেছি, তোমার বয়ফ্রেন্ড এর দেরি হবে বাসায় বল এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখবে, নাহয় কাবিন! পরে দেখা যাবে এই ছেলে তোমাকে বিয়েই করল না! তখন কই যাবা!……………………………………………………

এভাবে কথা-উপদেশ-বাণী চলতেই থাকে, আর আমি শুনতেই থাকি আর তাল দিতেই থাকি। তাল দেয়ার সময় আমার আসলেই যে উত্তরগুলো দিতে ইচ্ছা করেঃ

— বান্ধবী-ছোট বোন বিয়ে করেছে এটা তাদের সিদ্ধান্ত ! আমাকে আমার সিদ্ধান্ত নিতে দিন !

— একটা ছেলে শুধু তার বউ কে খাওয়াতে চাকরি করে না, আর কোনো মেয়েই জামাইর টাকায় ফুটানি করতে বড় হয় না, পড়াশোনা করে না। তার নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে, নিজের ভাবনা-চিন্তা থাকে।

— বাবা-মাও মেয়ে নিয়ে কখনো পানিতে পড়ে না যে আপনাকে খুঁচিয়ে মেয়ের কাবিন/এনগেজমেন্ট করাতে হবে!

— আমি নিজে কবে বিয়ে করব-কাকে বিয়ে করব সেটা নিয়ে আমি আমার বয়ফ্রেন্ড এর উপর কখনোই নির্ভর করিনা। সুতরাং আপনার উপর নির্ভর করারতো প্রশ্নই আসে না! এটা সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব ব্যপার। আমি কারো কিছু করায়, না করায় পানিতেও পড়ে যাই না আর সাঁতারও কাটি না।

— আর কারো সাথে কারো বয়ফ্রেন্ডের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলার আগে একশবার ভাবুন। অন্যের সম্পর্ককে শ্রদ্ধা করতে না পারুন, লাথি দিবেন না দয়া করে। নিজের পা আস্ত ফিরে নাও পেতে পারেন অনেক সময়, তখন যেন অন্যকে দোষ দেবেন না!

বিয়ে নিয়ে আমার এত সাফাই গাইতে হয়েছে যে ব্যাপারটা আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেই, চাইলেই আমি একটি পাবলিক স্ট্যাটাস দিতে পারি। দয়া করে প্রগতিশীল-বখে যাওয়া মেয়ে বলে গালি দেয়ার আগে নিজের চরকায় তেল দিন।

সব শেষে এত কথা বলার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী,

এবং ক্ষমা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

শেয়ার করুন: