উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক (২৩ জুন): প্রতিবন্ধিত্বকে সমালোচনা না করে বরং প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতার ওপর নজর দেয়া উচিত উল্লেখ করে ইউনিসেফ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী শিশুরা সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হলে পুরো সমাজই উপকৃত হবে। প্রতিবন্ধী শিশুরা কি কি পারে না, সে কথা চিন্তা না করে তারা কি কি করতে পারে সমাজ সেদিকে নজর দিলে প্রতিবন্ধী শিশু ও সমাজ উভয়েরই উপকার হবে।
রোববার সংস্থাটির প্রকাশিত ‘বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের যোগ্যতা এবং সম্ভাবনার দিকে জোর দিলে পুরো সমাজেরই উপকার হবে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনী লেক বলেন, ‘শিশুর আগে যদি তার প্রতিবন্ধিতার দিকে তাকানো হয় তাহলে তা শুধু ভুলই নয়, শিশুটি যে যে ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে, সেগুলো থেকেও সমাজকে বঞ্চিত করা হয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের ক্ষতি মানে সমাজের ক্ষতি, তাদের লাভ মানে সমাজের লাভ।”
প্রতিবেদনটিতে দেখানো হয়েছে, কিভাবে প্রতিবন্ধী শিশুরা সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। যখন তারা সমাজে পরিপূর্ণভাবে তাদের ভূমিকা পালন করে তখন সকলেই উপকৃত হয়। উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা সকল শিশুরই সুযোগের পরিধি বিস্তৃত করে, এমনকি এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যেও তাদের আকাঙ্খা মেটানোর সুযোগ করে দেয়।
আরও বলা হয়েছে, অনেক প্রতিবন্ধী শিশুর ক্ষেত্রে জীবনের প্রথম দিন থেকেই জন্ম নিবন্ধিত না হওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে বর্জন বা এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা শুরু হয়। সরকারি স্বীকৃতির অভাবে তারা সামাজিক সেবা ও আইনি নিরাপত্তা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়, যা কিনা তাদের বেঁচে থাকা ও সম্ভাবনা বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেক বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি গুরুত্ব দিতে হলে তা দিতে হবে তাদের জন্মের সময়, বিদ্যালয়ে এবং জীবনেও।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, এনডিসি, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফ প্রতিনিধি প্যাসকেল ভিলেনোভ এবং দুই জন শিশু প্রতিনিধি-এর উপস্থিতিতে জাতীয় পর্যায়ে আজ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
ইউনিসেফ প্রতিনিধি প্যাসকেল ভিলনোভ তার বক্তব্যে সরকার এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে তাদের দৈনন্দিন পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের অংশ হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিশু বা
ব্যক্তিদের দাতব্যের উপকারভোগী হিসেবে না দেখে অবশ্যই তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে, মূল্য দিতে হবে, ও দেখতে হবে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং সহায়ক হিসেবে। আমরা সবাই যদি এই পরিবর্তনের জন্য কাজ করি তবে তা প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনে বড় মাপের পরিবর্তন আনবে’।
‘বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০১৩: প্রতিবন্ধী শিশু’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া অথবা বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ সবচেয়ে কম। এরা অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ এবং অবহেলার সবচেয়ে বড় শিকার।
প্রতিবন্ধী শিশুরা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অন্যতম বলেও উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘প্রতিবন্ধিত্বের কারণে বৈষম্য এক ধরনের নিপীড়ণ’। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, একাধিক বঞ্চনার কারণে অনেক প্রতিবন্ধী শিশু বৃহত্তর ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হয়। প্রতিবন্ধী শিশুদের সংখ্যা, তাদের কি ধরনের প্রতিবন্ধিত্ব আছে এবং এই প্রতিবন্ধিতা কিভাবে তাদের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে – এ
সমস্ত বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য নেই। ফলে অল্প সংখ্যক সরকারেরই কাছেই প্রতিবন্ধী শিশু এবং তাদের পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্যে উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ-সম্পদ বরাদ্দ করার মত নির্ভরযোগ্য সহায়ক তথ্য আছে।
ইউনিসেফ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দেশই জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ (কনভেনশন অন দ্য রাইটস অফ পারসন্স উইথ ডিসএবিলিটিস) -এ স্বাক্ষর করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথম দিকে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহের অন্যতম এবং বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার সংরক্ষণকারী দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সনদ বাস্তবায়ন করছে। এই সনদ দুটি হলো – জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ (সিআরসি) এবং জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সনদ (সিআরপিডি)।
জাতীয় শিশু নীতি ২০১১-র ৬ দশমিক ৮ এবং ৬ দশমিক ৯ ধারায় প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার এবং পাওনা সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে সকল দেশের সরকারসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, তারা যেন সবচেয়ে বঞ্চিত ও ঝুঁকির সম্মুখীন শিশুসহ তাদের সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে, অসমভাবে হলেও, অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। বিশ্ব শিশু ২০১৩ পরিস্থিতি এ ব্যাপারে আরও করণীয় সম্পর্কে কিছু সুপারিশও করেছে।
প্রতিবেদনে বৈষম্য মোকাবিলা করার জন্যে সাধারণ জনগণ, নীতি প্রণয়নকারী এবং শিক্ষাদান ও স্বাস্থ্য সেবাদানের মত অত্যাবশ্যকীয় সেবাদানকারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিবন্ধী শিশু এবং কিশোরদের সঙ্গে আলোচনা করে, তাদের জন্যে উপযুক্ত কর্মসূচি ও সেবাসমূহ পরিকল্পনা ও মূল্যায়নের বিষয়ে তাদেরকে যুক্ত করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।