নারীসত্ত্বা বনাম সানি লিওন দ্বন্দ্ব

Sunny 2অনন্য আজাদ:  পুরুষের শরীর দেখা গেলে কেউ বলে না পুরুষটি অসভ্য। কিন্তু নারীর কাপড়ের ফাঁক দিয়ে এক ইঞ্চি শরীর দেখা গেলেই পুরুষ চিৎকার করে ঘোষণা দেয় সেই নারীটি অসভ্য মাগী। অতীতে বাঙলায় শরীর ছিল সৌন্দর্য এবং বর্তমানে কামের বস্তু।

নারীর শরীর দেখা গেলেই পুরুষদের শিশ্ন খাঁড়া হয়ে যায়। নারীটিকে একবার পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। পুরুষরা একবারই চায়, কারণ তারা ভেবেই নেয় যে নারীর শরীর একটু আধটু দেখা যায় সে নারীটি মাগী। সুতরাং নারীটিকে পাওয়া সহজ এবং একবারই যথেষ্ট। এগুলো বিকৃত চিন্তাভাবনা এবং বর্তমানে এই চিন্তাধারার মানুষের সংখ্যা বেশি।

পুরুষের চোখে, নারী হচ্ছে মাল। মাল যে কোন সময় ও যে কোন ভাবে হাতায় নেয়া যায়। নারীরা পুরুষের কাছে খাওয়ার বস্তু। নারীদের ছোঁয়ার জন্য পুরুষরা কী পরিমাণ ব্যাকুল ও উত্তেজক সেটা নারী পুরুষ সকলেই জানে। কিন্তু ভাব দেখায় ভাঁজা মাছটাও উলটে খেতে জানে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষরা অসভ্য বেয়াদপের মত আচরণ করে অথচ তারা ঠিক করে দেয় কোন নারীকে সভ্য এবং কোন নারীকে অসভ্য বলতে হবে। পুরুষদের মান সম্মান বলতে কিছু নেই। কিন্তু তারা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে। কাকে সম্মানিত বলা যাবে এবং কে অসম্মানিত সেটা নির্ধারণ করে। ব্যাপারটি খুবই হাস্যকর।

সম্প্রতি ধর্মান্ধ মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে, বলিউড স্টার সানি লিওনকে বাঙলাদেশে প্রবেশ করতে দেবে না। প্রয়োজন পড়লে তারা ঢাকা এয়ারপোর্টে হামলা চালাবে। তারা আরও বলে, ৯০% মুসলমানদের দেশে কোন পতিতা থাকতে পারবে না। কী হাস্যকর কথাবার্তা!
আজ পর্যন্ত কোন ইসলামি মানুষের মুখে ভালোবাসার কথা শুনলাম না। অথচ তারা বলতে থাকে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। তারা চাপাতিকে ভালোবাসে, মানুষ হত্যা করতে ভালোবাসে, কোপাতে ভালোবাসে, অথচ তারা দাবি করে তারা শান্তিকামী!

Sunnyপ্রথমে বুঝতে হবে সানি লিওনকে কারা বানায়? পুরুষরা বানায়। পতিতালয় কারা বানায়? পুরুষরা বানায়। পতিতা শব্দটি ব্যবহার করে কারা? পুরুষরা।

বর্তমানে সানি লিওন বলিউড স্টার। তিনি তো বাঙলাদেশে সেক্স কারখানা খুলতে আসছেন না, তাই না? সুতরাং এগুলো হাস্যকর। সানি লিওনের হিন্দি মুভি দেখতেন পারবেন, পর্নোমুভি দেখতে পারবেন, তাকে দেখে বীর্যপাতও ঘটাতে পারবেন আর দেশে এলে সমাজ নোংরা হয়ে যাবে বলা, হিপোক্রেসি। সিস্টেমের প্রতিবাদ না করে এইসব বলা খুবই যুক্তিহীন।।

একদা সানি লিওন পর্নোমুভি করত। বর্তমানে তিনি বলিউড নায়িকা। বাঙলাদেশে কি যৌনকর্মী নেই? তাহুলে ৯০% মুসলমানের দেশে কীভাবে পতিতালয় থাকে? হেফাজতে ইসলাম তো কখনো বাঙলাদেশের পতিতালয় উচ্ছেদের কোন আন্দোলনের ঘোষণা দেয় নি। তাহলে সানি লিওনকে নিয়ে তাদের এত কী সমস্যা? পতিতালয় উচ্ছেদ করলে তাদেরই বেশি সমস্যা হবে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখার জয়েন্ট কনভেনারের সাথে আমি নিজে সানি লিওনের আইটেম সং দেখেছি, তিনি সানি লিওনের শরীরের খুব ভক্ত। সানি লিওনের পর্নোমুভি দেখে তিনি অসংখ্যবার বলেছেন, ইশ, একবার যদি পেতাম! তিনিও সেই সব পুরুষের মতই। তারচেয়েও বড় ঘটনা হল, তিনি সানি লিওন যেন বাঙলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে স্ট্যাটাস ও বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিচ্ছেন। অথচ যারা ইসলামি ও ছদ্মবেশী, তারাই আজ ইসলাম রক্ষার জন্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এইসব মানুষের কারণেই দেশে রক্তপাত ও অশান্তির সৃষ্টি হয়। অথচ সব দোষ নাকি নাস্তিকদের!

(লেখকের অনুমতিসাপেক্ষে ফেসবুক থেকে নেয়া)

শেয়ার করুন: