সুমন্দভাষিণীকে বলছি……………..

Minority 2চিত্রা পাল: প্রিয় সুমন্দভাষিণী! গত ২৮শে জুলাই উইমেন চ্যাপ্টারে আপনি একটা বৈষম্যমূলক কাল্পনিক রচনা লিখেছেন। লেখাটি বিরক্তি প্রকাশের জন্য যথেষ্ট কারণ নিঃসন্দেহে। একটি বিশেষ সম্প্রদায় ও স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠনের উপর আক্রমণাত্মক ও বিদ্বেষমূলক প্ররোচনার জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

প্রথমেই বিনয়ের সাথে জানতে চাই, আপনি কি ওলামা লীগ বা হেফাজতি ঘরানার কোন সমাজ সংস্কারক? কত টাকা নিয়েছেন এই লেখাটি লেখার জন্য?

আপনার ভাষায় “বিশ্বের তাবদ বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে শুধু সেমিনার করে বেড়ায়, কিছুই করে না তারা, পাশের দেশের সাম্প্রদায়িক সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে হিন্দুদের উদ্ধারের আশায়”।

কি করতে বলেন তাদেরকে? ম্যাডাম, নিজের পকেট ফুটো করেই বিবৃতি দিচ্ছে তারা। সাম্প্রতিককালের পত্র-পত্রিকা দেখলেই তার সত্যতা অনুমান করতে পারবেন।  

আর কে কতো পকেট ভরছে বলে আক্ষেপ করছেন, চাইলে আপনিও পারেন পকেট ভরতে। এমন লেখা লিখলে দুদিনেই ভরে যাবে আপনার পকেট বাকীদের মতো। এতে নাখোশ হবার কী আছে! তাছাড়া পাশের দেশের সাম্প্রদায়িক সরকার তো মাত্র এক বছরের। এর আগের অসাম্প্রদায়িক সরকারগুলো  হিন্দুদের কতকানি উদ্ধার করেছেন একটু বিস্তারিত বলবেন কি? খুব বেশী উস্কানিমূলক হয়ে গেল না?

শামীমা মিতুর লেখাটি আমি পড়েছি। তার উদ্দেশ্যকে নিয়ে আমি প্রশ্ন বিদ্ধ করবো না। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে হয়তো সে এমন একটা খবর পরিবেশন করেছে। তাকে যারা হুমকি ধামকি দিয়েছে, তার একাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করছে, তার বিরোধিতা করি জোরালো ভাবে।

তবে একজন সাংবাদিকের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা অত্যন্ত জরুরী। প্রায় সপ্তাহখানেক হতে চললো, অথচ শামীমা মিতু তার পক্ষে বা পাঠকের আস্থা অর্জনে এখনো কোন সাফাই দিতে সক্ষম হননি। শামীমা মিতু যা, সাথে সাথেই করতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি করেননি। সঙ্গত কারণেই উল্লেখ করি, হিন্দুদের নিয়ে অতি উৎসুক নিউজ এর আগে আমরা বহুবার দেখেছি এবং তার ফলও পেয়েছি।

আমাদের হিন্দুদের অবস্থা এখন চুন খেয়ে দই দেখলে ভয় পাওয়ার অবস্থা। যারা হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি নিয়ে লিখতে চান, তারা লিখুন না হিন্দু বিবাহ আইন সংস্কার নিয়ে, বিবৃতিদাতাদের মতো না হয়ে রাস্তায় নামুন!! লিখুন না জোরপূর্বক অপহরণ ও ধর্মান্তকরণের মতো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে? লিখুন না মালুপাড়ার শ্বাশুড়ী বৌ-এর ধর্ষণের নেপথ্য ও পরবর্তী অবস্থা নিয়ে?

সংস্কারমূলক লেখার জন্য তো ভুরি-ভুরি সমস্যা আছে। হিন্দুদের সমস্যা পাহাড় সমান। তথ্য প্রমাণাদিসহ গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করুন। আমরাও তার সাথে সম্পৃক্ত হবো। হিন্দুরা বহু আগে থেকে সংস্কারমুখী, সেটা আপনি এড়িয়ে গেলেও নেপালের ঐতিহাসিক পশু বলি নিষিদ্ধ খবরটি সংস্কারের এক ঐতিহাসিক নজীর স্থাপন করেছে।

শুধু তাই-ই নয়, পাশের দেশের এই সাম্প্রদায়িক সরকারের আমলেই কুমারী মাতাদের অভিভাবকত্বের আইনী বৈধতা দিয়েছে। এ-সব সংস্কার একদিনে হয় না। ধর্মীয় গোড়ামী দিয়ে মানবাধিকার লংঘন এটা পুরো সমাজ থেকে বিরোধিতা করতে হবে।  সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক এসব-টার্ম মধ্যরাতের রাজনৈতিক বেশ্যা-সুশীলদের মুখ চুলকানির ভাষা। ইস্কনের ধর্মীয় গোঁড়ামি সম্পর্কে তথ্য প্রমাণাদি নিয়ে লিখুন। তারা যদি জনকল্যাণ বিরোধী কোনো কাজ করে থাকে, তার বিরুদ্ধে আপনার সাথে আমিও আছি।
ব্লগাররা দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে! তার কারণ কারা এবং কেন? সেটার দায়-ভার কার উপর চাপাচ্ছেন?

নিজের দেশ, নিজের মানুষ, নিজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ে আপনার দুর্ভাবনা দেখে আমি নিজেও উদ্বিগ্ন! কারও উপকার করতে না পারলে অন্তত অপকার করবেন না। দুর্বলকে ঘায়েল করার মধ্যে বাহাদুরী নেই। শামীমা মিতুদের উত্থান ধর্মীয় গোড়ামির জন্য হয়নি। আপনাদের মতো মেকু সেক্যুদের জন্য হয়েছে। নিজের দেশ? নিজের সংস্কৃতি? নিজের মানুষ? হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাসের মধ্যেই নিহিত আছে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর। শুধু নিরপেক্ষ ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সৎ সাহস রাখুন।
ব্যক্তিগত ক্রোধ ও আবেগের বশীভূত হয়ে এ-ধরনের উস্কানিমূলক লেখা থেকে নিজে বিরত থাকুন এবং অপরকেও নিরুৎসাহিত করুন।

প্রবাসে থাকলেও দেশের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনার জন্য অনেক-অনেক শুভ কামনা রইলো।

সুইডেন

শেয়ার করুন: