যখন‬ তুমি সাইবার হ্যারাসের শিকার

Prova
মারজিয়া প্রভা

মারজিয়া প্রভা: যখন‬ মেয়ে তুমি সাইবার হ্যারাসের শিকার, কীভাবে লড়বে তার বিরুদ্ধে? আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই পোস্ট। প্রত্যেকটা স্টেপ ফলো করেছি। 

আমার চারপাশে যেসব নারীরা সাইবার ইউজার, সোশ্যাল সাইটে নিয়মিত ঢুঁ দেন, তাদের কেউ কোনদিন নিরাপদ সাইবার জীবন কাটাতে পারেননি। রিয়েল লাইফ, সেলফোন ছেড়ে পারভারটের দল এখন ভিড়ছে সোশ্যাল সাইটে। খুব সহজে, দারুণভাবে মেয়েদেরকে হ্যারাস করা যায় এখানে কিনা!
এক মেয়ের ফেক আইডি খুলে যা তা মেসেজ পাঠানো হত, তার পরিচিত মানুষের কাছে, মেয়ে সুইসাইড করে। পরিচিত এক জুনিয়রের বাজে ছবি ছড়ানো হয় বলে এখন সে হতাশায় ভূগছে। ফেক আইডি থেকে বসে মাঝে মাঝে টুকটাক বার্তা দেয়, নিজের নামে আর রিয়েল আইডি খুলার সাহস পায় না।
আমার জীবনে নোংরা অভিজ্ঞতা কম না। বুকের সাইজ জানতে চাওয়া আর উত্থিত পুরুষাঙ্গের ছবি পাঠান একদম ছেড়াবেড়া স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। পরিচিতজনও ছিল এর মধ্যে। ব্লক করেছি। লাভের লাভ কিছু হয়নি!
এখন সময় প্রতিবাদের। নিজে আইনি লড়াই লড়ছি এখনও এই নিয়ে। আমার আশেপাশের মেয়েরা সবাই সেই লড়াই লড়ুক, তাই চাই। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদ করলেই, এই সাইবার ক্রাইম বন্ধ হতে বাধ্য।
‪#‎কীভাবে‬ বুঝবে তুমি সাইবার হ্যারাসের শিকারঃ
গালভরা এক নাম আছে, সাইবার হ্যারাসের। সাইবার বুলিং বলে। কখন তুমি সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছ চোখ বুলিয়ে নাওঃ
১। তোমাকে বাজে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ।
২। সরাসরি সেক্স করতে চাইছে/
৩। উত্থিত পুরুষাঙ্গের ছবি পাঠাচ্ছে।
৪। বুকের সাইজ বা তোমার দেহ নিয়ে মন্তব্য করছে।
৫। খানকি, বেশ্যা, মাগি এই টাইপ স্ল্যাং ইউজ করে মেসেজ দিচ্ছে।
৬। তোমার নামে ফেক আইডি খুলছে।
৭। তোমার অনুমতি ছাড়া কোন পেইজে তোমার ছবি ব্যবহার করছে। ( কয়েক বছর আগে, পাত্রপাত্রি পেইজ খুলত বিভিন্ন ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা, সেখানে মেয়েদের অনুমতি ছাড়া ছবি ব্যবহার করা হত )।
৮। তোমার কোন ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা, স্ক্রিনশট ছড়িয়ে দিতে চাইছে বা দিচ্ছে।
৯। তোমার ছবি ফটোশপ করে অশ্লীল এবং উলঙ্গ করছে।
১০। তোমার নামে বাজে কথা দিয়ে কোন পেইজ বা গ্রুপে হেয় করছে।

‪#‎করণীয়ঃ‬
১। সর্বপ্রথম পরিবারকে জানাও। পরিবারে কাউকে না জানাতে পারলে, খুব কাছের কাউকে জানাও।
২। যে এইসব করছে বা যারা করছে, তারা পরিচিত হলে আপোষের ব্যবস্থা নিতে পার ( যদি ভাব আপোষ করে লাভ আছে)।
৩। আপোষ করে যদি না পার, এবং ভাব যদি আপোষ করে কোন লাভ নেই আইনি ব্যবস্থা নিবে অবশ্যই।

‪#‎আইনি‬ ব্যবস্থা কিভাবে নিব?
সবচেয়ে প্রথম কাজ হচ্ছে সাধারণ জিডি করবে, লোকাল থানায়।

‪#‎জিডি‬ করতে ভয় লাগে ?
কিসের ভয় ? জিডি কোন আইনি প্রক্রিয়া না। ফ্যামিলি চাপ দিচ্ছে এসব না করতে। বুঝাও জিডি প্রত্যেকটা নাগরিকের অধিকার। তোমার ৫০০ টাকা হারালেও তুমি জিডি করতে পার, তোমার ঘড়ি হারালে তুমি জিডি করতে পার। এটা তোমার নাগরিক অধিকার।
তোমাকে দেশে কেউ কখনও হ্যারাজ করার অধিকার রাখে না। তুমি উড়নচণ্ডী, ঘুরে বেড়াও, ফেমিনিজম, ধর্ম নিয়ে লিখ। যা ইচ্ছা করো। কেউ তোমাকে হ্যারাস করার কোন অধিকার রাখবে না।
তাই স্বাধীন নাগরিক হিসেবে, তোমাকে কেউ হ্যারাস করলে তুমি নিশ্চিন্তে লোকাল থানায় জিডি করবে। কোন প্রব্লেম হবে না। কোন দুশ্চিন্তা নেই। তুমি কেবল তোমার নাগরিক অধিকারকে রক্ষা করছ।

‪#‎জিডি_করতে‬ কি লাগে আপু ?
কিচ্ছু না।
১) জাস্ট একটা আবেদন পত্র লিখবে। বাংলায় লেখা আবেদন পত্র থাকবে
বরাবর
অফিসার ইন চার্জ
তোমার লোকাল থানা
বিষয়ঃ
জনাব/ স্যার/ মহোদয় ,
আমি ( তোমার নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, ভোটার আইডি )। যদি তুমি ফেসবুকে হ্যারাজের শিকার হও, তোমার ফেবু আইডির লিংক, যে হ্যারাজ করছে তার আইডির লিংক বা সেই পেইজের লিংক যেখান থেকে হ্যারাজ হচ্ছ । অন্য কোন সোশ্যাল সাইটে হলে অন্য লিংক। বিস্তারিত বর্ণনা। একদম খুঁটিনাটি সহ। তুমি কি টাইপ নিরাপত্তা চাচ্ছ তাও উল্লেখ করবে।
এই আবেদন পত্র দুই কপি করবে। একটা তোমার কাছে, একটা থানার কাছে।
২) মেসেজ, পেইজ, ছবির স্ক্রিনশট প্রিন্ট করে দিবে আবেদন পত্রের সঙ্গে। একদম দ্বিধা ছাড়া। তোমার কথা থাকতেই পারে সেখানে, সেটাও দিবে। যাতে থানার কর্মকর্তারা বুঝে কি ঘটনা ঘটেছে আসলে।
৩) থানায় খুব ভদ্রতা সহকারে, মার্জিত ভাবে , সুন্দর ভাষায়, নিজের বক্তব্য পেশ করবে।
৪) জিডি তে কোন টাকা লাগে না। আমি আদাবর থানায় করেছি কোন টাকা লাগে নি। তাও হাতে ১০০-২০০ রেখ, তোমার থানার কি হয় সেটা তুমি বুঝে ডিল করবে।

জিডি করলাম, এখন কি করব ?
এখন ও কাজ শেষ হয় নি। জিডির ইনভেস্টিগেশনে দায়িত্বরত অফিসারের ফোন নং পাবে। তার সঙ্গে কথা বলবে। তিনি তোমাকে হেল্প করবেন কি করতে হয়। খুঁটিনাটি বলবে।

‪#‎Cyber‬ Nirapotta ( সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়)
CyberNirapotta https://www.facebook.com/cybernirapotta . আইসিটি , তথ্য প্রযুক্তি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় কাজ করেছে। এরা বেসরকারি পর্যায়ে তোমার সাইবার হ্যারাজের ঘটনা খতিয়ে দেখবে এবং ব্যবস্থা নিবে। এই কাজ করতেই এখানে অনেক অনেক শ্রমিক কাজ করে।
১) তোমার রাখা জিডি কপি স্ক্যান করাও।
২) পুরা ঘটনা পুনরায় লিখ ( ইংরেজিতে)। জিডির স্ক্যান কপি, স্ক্রিনশটের JPG ফরমেট সহ ইমেইল কর [email protected]
৩) তারাই পরে ইনফরমেশন লাগলে যোগাযোগ করবে।
৪) এরা ফেসবুকে ভীষণ একটিভ। মেসেজ দিলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপ্লাই দেয়। আমার আস্থা যুগিয়েছিল এরাই প্রথম। থ্যাংকস Cybenirapotta

‪#‎আরও‬ একটি কাজ করতে পারঃ
তোমার জিডি কপি নিয়ে চলে যাও বিটিআরসির অফিসে। ঠিকানাঃ
Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC)
IEB Bhaban (5,6 & 7 floor)
Ramna, Dhaka-1000
Phone (PABX): + 880 2 9611111
Fax: +880 2 9556677
Email: [email protected]

ফোন আর ইমেইলে রেস্পন্স পাবা না ।সোজা চলে যাও , অফিসে। মোহাম্মদপুরের বাসের কথা জানি। এটিসিএল বাস ধরে রমনা ওভারব্রিজে নামবে, ঠিক বিপরীতেই এই আইইবি ভবন ।

‪#‎যদি‬ ঘটনা আরও ভয়াবহ হয়, মামলা করবঃ
অবশ্যই মামলা করবে। কিছু সোর্স দিচ্ছি
১) ঢাকা মেট্রোপলিটন ওমেন সাপোর্ট ডিভিশন
Duty Officer : 01745774487, 02-9110885
Helpline : 01755556644, 01755556645, 01733219005, 01733219030
২) Justice for woman এর administrator.। তোমাকে লিগ্যাল হেল্প নিতে সাহায্য করবে। কুঞ্জ আপু, জাস্ট আপিকে একটা মেসেজ দাও।https://www.facebook.com/aishwarikazahin
৩) নিকট RAB অফিসে যোগাযোগ কর।
৪) ল-ইয়ার হিসেবে মামলা লড়তে পাবে, জাবির ভাইকে, অসাধারণ মানুষ, জাস্ট একটা মেসেজ।https://www.facebook.com/Da.Saint.Iblish

কাহিনী কি শেষ? না , শেষ না! আমি প্রতিটা স্টেপ ফলো করে এগিয়েছি। সবার সহযোগিতা পেয়েছি। আদাবর থানার সহযোগিতা নিয়ে কথা হবে না। এখনও লড়ছি।
সবার আগে তো থাকা চাই সাহস, প্রতিবাদ করার মানসিকতা। সেটা আগে গড়ে তোল নিজের মধ্যে। তারপর আপনাআপনি এই কাজগুলো হবে।
আমি জেগেছি, তুমি জাগবে, তোমার পাশের মেয়েটা জাগবে, একদিন সব মেয়ে জাগবে, তারপরই না বন্ধ হবে এই সাইবার ক্রাইম ! তাই না ?
চলো, নিরাপদ সাইবার জীবনের জন্য না হয় একটু লড়ি। আমাদের সম্মানের জন্য না হয় এই প্রতিবাদ করি।
মেয়েলি জীবন বলে খালি মার-ই খাবো নাকি? সবাই তো তাই ভাবে? চলো, ওদের ভুল প্রমাণ করি। চলো জেগে উঠি। 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.