আমরা কি মানুষ?

Sylhet Rajanশান্তা মারিয়া: এমন একটি ঘটনার পরও আমাদের কি নিজেদের ‘মানুষ’ নামে অভিহিত করার কোনো অধিকার রয়েছে? অথবা এই ঘটনার পর ‘পিশাচ’রা পরস্পরকে গালি দেবে ‘মানুষ’ বলে। এমন একটি ঘটনার পরও এ‌দেশের মানুষ সুস্থভাবে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে, খেলা দেখছে, জয়ে উল্লাস করছে, ঈদের কেনাকাটা করছে। এমন ঘটনার পরও আমরা লজ্জায় অবনত হচ্ছি না। জাতি হিসেবে আমরা আর কত ‘ছোট’ হলে লজ্জা পেতে শিখব?

একটি শিশুকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে, অপরাধীরাই সেই দৃশ্য ভিডিও করছে, সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে আর তারপরও আমরা সুস্থ আছি, আমাদের দৈনন্দিন জীবন চলছে! শিশুটিকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কোনো বন্দীশিবিরে নয়,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কোনো পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্পে নয়। কোনো মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা এটি করছে না। এই হত্যা চালাচ্ছে ‘সাধারণ মানুষ’। আমাদের দেশের মানুষ। সমাজের সাধারণ মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধ কোন স্তরে পৌঁছালে এ ঘটনা ঘটা সম্ভব!

শিশুটি মার খাচ্ছে, কাঁদছে, চিৎকার করে মাকে ডাকছে আর তার হত্যাকারীরা আনন্দের সঙ্গে সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করছে। যেন কোনো উৎসব হচ্ছে তাদের।

এই সংবাদটি পড়ার পর থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার ভয় হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমার চারপাশে, রাস্তাঘাটে এমন অনেক খুনি ঘুরে বেড়াচ্ছে, অনেক ‘ড্রাকুলা’ ঘুরে বেড়াচ্ছে, যারা যে কোনো সময় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে আমার উপর, আমার কিশোর সন্তানের উপর। আমি কোথায় পালাব? কোথায় গেলে আমার সন্তানের নিরাপত্তা দিতে পারব? আমি হয়তো আর কোনোদিন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজের দিকে বিনা লজ্জায় তাকাতে পারবো না।

যে সমাজের মানুষ একটি শিশুকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করে উল্লাসের সঙ্গে আমিও যে সে সমাজের একজন সেটা কিভাবে উচ্চারণ করি? নিহত রাজনের মায়ের মধ্যে আমি নিজেকে দেখছি।

শিশু রাজনকে হত্যা করা হচ্ছে মুসলমানদের জন্য পবিত্র বলে খ্যাত রোজার মাসে। যারা হত্যা করছে তারাও নাকি মুসলমান বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে। হয়তো সবজি বেচা টাকায় রাজন তার নিজের জন্য একটি নতুন পোশাক কিনেছিল, হয়তো মায়ের জন্য কিনেছিল একটি নতুন শাড়ি। ঈদের দিনে হয়তো শিশুটি সমবয়সীদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে চেয়েছিল।

শিশুটির চেহারা যতবার দেখছি আমার অন্তরটা হাহাকার করে উঠছে। এই হত্যাকারীদের কেন ক্রসফায়ারে মারা হচ্ছে না? এদের আর একদিনও বেঁচে থাকার অধিকার নেই।  

শেয়ার করুন: