দু:স্থ নারী থেকে জনপ্রতিনিধি জাহানারা বেগম

jahanara 1উইমেন চ্যাপ্টার: বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের শানুয়ার গ্রামের অতিদরিদ্র কৃষক মো. আজাহার আলী মৃধার সাথে ২৫ বছর আগে বিয়ে হয় জাহানারা বেগমের। বিয়ের পর থেকেই অভাব যেন লেগেই ছিল সংসারে।

জাহানারা বেগমের ভাষায়, সামান্য জমির মালিক তার স্বামীর একার আয়ে সংসার চলছিল না। অবশেষে নিজেও কৃষিকাজে সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকেই শুরু তার নতুন পথচলা। কিন্তু জন্মের পর থেকে কোনদিনও কৃষিকাজে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথমদিকে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। প্রতিবেশীদের কাছে পরামর্শ চাইলেও তারা খুব একটা উৎসাহ দেখায়নি। তখন তিনি উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করেন।

এতেই একসময় দিন বদলে যায়। কৃষিকাজে তাঁর আগ্রহ দেখে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। সেখানে তিনি কম্পোস্ট সার, সবুজ সার, বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ পাই। এর পরপরই স্বামীকে নিয়ে সরাসরি কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েন এবং কৃষিকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদও শুরু করেন, যেমন ভুট্টা, গম, মুগ ডাল, মুশুরি ডাল, সরিষা ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি।

জাহানারা বলছিলেন, প্রথমদিকে সবাই তাকে খুব তিরস্কার করতো তার এই কাজের জন্য। কৃষির সাথে তাঁর সম্পৃক্ততার বিষয়টি এলাকার লোকজন ভাল চোখে দেখেনি। তারা বিভিন্ন সময় তাকে নিয়ে সমালোচনা করতো; কিন্তু স্বামী বরং তাকে কৃষিকাজে উৎসাহ দেয়ায় এই কাজটিকেই আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন জাহানারা।

তাঁর ভাষায়, “আমার কাজের সফলতা দেখে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় এলাকায় ‘‘একটি কৃষক মাঠ স্কুল” দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০০৭ সালে আমাকে সভানেত্রী করে একটি কৃষক মাঠ স্কুল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আমার দক্ষতায় ঐ স্কুলে ২৫জন কৃষাণী ও ২৫ জন কৃষক নিয়ে মোট ৫০জনের একটি দল গঠন করে। দলের সদস্যরা মাসে মাসে ১০ টাকা করে সঞ্চয় শুরু করি। আমি ঐ সঞ্চয়কৃত টাকা দিয়ে দরিদ্র কৃষাণ-কৃষাণীদের মাঝে বিনা সুদে কৃষি লোন দিয়ে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষক মাঠ স্কুল এর মাধ্যমে একটি গুটি ইউরিয়ার মেশিন দেন”।

কৃষিতে জাহানারার সাফল্য পুরো এলাকায় নতুন আলোড়ন তৈরি করে। বিভিন্ন সময়ে কৃষাণ-কৃষাণিরা আমার কাছে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ নিতে আসেন। কৃষিকাজে সফলতার মাধ্যমে তিনি এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি পান। যার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় বিভিন্ন সালিশ ও অন্যান্য সভা সমাবেশেও অংশ নেন। একসময় তাঁর কাজের সফলতা তাঁর সামনে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। এলাকার লোকজনই, যারা একসময় তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা সমালোচনা করতো, সেই তাদেরই আগ্রহের কারণে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও বিপুল ভোটে জয়লাভ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোন।

 

শেয়ার করুন: