মনোরমা বিশ্বাস: ‘কুমারী’ বা ‘অ-কুমারী’ বলে কোন কথা নেই। একজন মেয়ে বাই নেচার ‘মা’‘ হবে এটাই সবচে বড় কথা। পৃথিবীর বুকে এরচে আনন্দ-সংবাদ আর কী হতে পারে?
শারীরিকভাবেও যদি দেখি একজন মেয়ের মা হওয়াটা খুবই ন্যাচারাল। আমাদের পূর্বপুরুষদের দিকে যদি দেখি, যখন বিবাহ প্রথা প্রবর্তিত হয়নি, তখনো নিশ্চয় নারী পুরুষের যৌথ আনন্দের ফসল সন্তান এসেছে, আমরা ঐ পবিত্র শুভাগমনকে নাকচ করে দেব?
আদিম সমাজের ঐ প্রেমে মোড়া দৈহিক সম্ভোগকে আজকের কুৎসিত চোখ অপবিত্র বলার কে? নৈতিকতা কি চিরকালীন হয়? আজ যা অনৈতিক ও অবৈধ, কাল তা নৈতিক ও বৈধ হবে না, এ গ্যারান্টি কে দিয়েছে? বিয়ে প্রথার বয়স বেশি দিন নয়, কিন্তু ইতিমধ্যে তাতে ভাঙ্গনের সুর শোনা যাচ্ছে !
বিয়ে প্রথা অকার্যকর হয়ে এর মধ্যেই পশ্চিমে ‘লিভ টুগেদার ‘ বাড়ছে। শুধু তাই নয়, লিভ টুগেদারেও ইদানিং ক্লান্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। মানবিক সম্পর্ক বিশেষত নারী-পুরুষের সম্পর্কের ধারাটি কোনদিকে ধাবিত হচ্ছে, সমাজ বিজ্ঞানীদের কৌতুহলী দৃষ্টি সেদিকে। মেতেছেন সে গবেষণায়।
আমাদের উপমহাদেশে বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে জন্ম নেয়া শিশুদের যেখানে অবজ্ঞা মেশানো জঘন্য গালি ‘ জারজ ‘ বলে ডাকা হচ্ছে সেখানে এই পৃথিবীরই আরেক প্রান্তে, এখানে এই ইউরোপ, আমেরিকায় তাদের ভালোবেসে ডাকা হচ্ছে ‘ লাভ চাইল্ড’।
সনাতনী মূল্যবোধের দোহাই দিয়ে এ পরিবর্তনের ঢেউ রক্ষণশীল সমাজপতিরা কতদিন ঠেকিয়ে রাখবেন? সন্তানের আইডেন্টিটি নির্ধারণে বাংলাদেশে এই কবছর আগেও শুধু সন্তানের পিতৃপরিচয় দিলেই চলতো, এখন মায়ের নাম দেয়াও আবশ্যিক হয়েছে।
এই তো সেদিন ভারতের সুপ্রীম কোর্ট জনৈকা কুমারী মাতার সন্তানের অভিভাবকত্ব দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে রায় দিল। মেয়েরা বসে নেই, একটু একটু করে এগোচ্ছে।
মা হিসেবে সন্তান জন্ম দেবার মৌলিক অধিকার যেমন তার আছে, তেমনি তার সন্তানের পিতা নির্বাচন করার অধিকার , সন্তানের উপর আইনী অধিকার ইত্যাদি সকল অধিকারও মেয়েদের আছে। সেদিন খুব দূরে নয়, যেদিন মেয়েরা তাদের অধিকার ফিরে পেয়ে মুক্ত হবে।