যদিও আমি নারীবাদী নই

Cage 2আসমা বেগম: সাংবাদিক দম্পতি নিয়ে পড়ছি কয়েকদিন ধরেই। আমার কাছে বিষয়টা বেশ জটিল। আসলে বিষয়টা তেমন জটিল ছিল না, কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থতা বিষয়টাকে বেশ জটিল করে তুলেছে।

পরকীয়া প্রেমের যতগুলো কারণ বিদ্যমান, তার মধ্যে সবচেয়ে সবচেয়ে করুণ, অমানবিক এবং প্রথমদিকের কারণ হলো স্ত্রীর গর্ভকালীন সময়, তারপরের লিস্ট এ থাকবে স্ত্রীর অসুস্থতার সময়। কিন্তু কেন? ভালবাসা কি কমে যায়? মায়া কি মরে যায়? তারা কি বুঝে না যে এটা সাময়িক? তারা কি জানে না এই সন্তান তারও? তার শুক্রাণুর বোঝাই স্ত্রী বয়ে বেড়াচ্ছে?

না, যায় না। নিজের ভিতর যে যুদ্ধ চলতে থাকে, সে যুদ্ধে বর্তমান বিজয়ী হয়। বর্তমান চাওয়া-পাওয়া, অভ্যস্ত জীবনের চাহিদারা পরাজিত করে মায়া, ভালবাসা, প্রেম বা বোধ বিবেচনা। একবার পরাজিত হয়ে গেলে, গলা টিপে হত্যা করে নিজের মানবিকতাকে। এক অর্থে সে নিজে নিজেকে হত্যা করে। তাই বিচ্ছেদটা ও আর স্বাভাবিকভাবে হয় না।

দুই পক্ষ দুইভাবে স্বাভাবিক সুন্দর সমাধান করতে চায়। কেউ পেরে উঠে না, কারণ এক পক্ষ তৃতীয় পক্ষের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে যায়। সেখানে তাকে আরেকটা যুদ্ধ করতে হয়। এক সময় আরও জটিল হয়ে যায় স্বামীর অপরাধবোধ, দুই দিক থেকেই। তখন সে হয় প্রেমিকার সাথে বা তার স্ত্রীর সাথে পশুর মতো আচরণ করে। হয় সে প্রেমিকাকে মাঝপথে স্ত্রী-সন্তানের দোহাই দিয়ে ছেড়ে আসে, বা স্ত্রীকে ছেড়ে যায় প্রেমিকার কাছে। এক নারী আরেক নারীকে দায়ী করছে। যেখানে সব অন্যায় বা সকল সিদ্ধান্তই নিয়েছে স্বামী।

ভাইরে, তোমাদের স্ত্রীও তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। তার অনেক অনেক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু স্ত্রীর নিজের কারণে তুমি সাময়িকভাবে অসুস্থ, তুমি সাময়িকভাবে তাকে তোমার সঙ্গ দিতে পারবে না, শুধু এই কারণে তোমার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়াবে না। সাময়িক অসংগতি মেনে নিবে তোমার যত্নআত্তিও করবে। বিয়ে করাই হয় এই সকল দুঃসময়ে একজন সার্বক্ষণিক বন্ধুর জন্য। আর কেউ না থাকলে ও একজন মানুষ তার পাশে থাকবে। নইলে বিয়ের মতো এই ঝামেলার জিনিস কে করবে? কেন করবে?

বন্ধুত্ব কি অনেক বেশি সম্মানীয় ও আদরের না। বন্ধু কোন কিছু আশা না করে বন্ধুর পাশে থাকে।

যে সব মেয়ে বা নারী বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়েছেন (পড়তেই পারেন) এবং এই প্রেমকে প্রেম বা অন্য কোন সম্পর্কের নামে আভিহিত করতে চাইছেন, দয়া করে আরেকবার ভাবুন। বন্ধুত্ব ঠিক আছে, কিন্তু নাম দেয়ার মতো সম্পর্কে জড়ানোর আগে আরও গভীরে বন্ধুর অবস্থান জানুন। তার স্ত্রী-পরিবারের অবস্থা জানুন। তার ছেলেমেয়ের কথা ভাবুন। আপনার একটা সিদ্ধান্ত আরেকটা পরিবারের অনেকগুলো মানুষের জীবন দুঃসময় বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে তার পূর্বের ছেলে মেয়েদের জীবনে।

তারপর ও যদি নিজেদের বিরত রাখতে না পারেন, দয়া করে যেই সাহস আর আবেগ দেখিয়ে প্রেম করছেন, এই সাহস আর আবেগ দিয়ে তিনজন বা চার জন, একটু বড় ছেলেমেয়ে থাকলে তাদের সাথে নিয়ে বিষয়টা আলোচনা করুন। একটা বাচ্চার বেড়ে উঠার জন্য বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসা থাকার দরকার আছে। কোন সন্তান বড় হয়ে যদি জানতে পারে, তারা বাবা বা মা চিৎকার করে তার জন্ম অস্বীকার করছে, সেই সন্তানের কেমন লাগবে?

সেই সন্তান কিভাবে তার বাবা বা মাকে ভালবাসবে? আপনি যেই ভালবাসার জন্য সবকিছু করলেন, আপনার ভবিষ্যৎ সেই ভালবাসাই বুঝলো না। সে শুধু বুঝলো কিছু পাশবিক সঙ্গম।

স্ত্রীকে মেরে বাংলাদেশেই কেবল বীরপুরুষ হওয়া যায়। যেই নারী প্রেমিকের বউ পেটানোর শব্দ শুনে তার প্রেম নিয়ে আশ্বস্ত হয় সেই নারী কেমন নারী? এই প্রেমই বা কেমন প্রেম।!!!

নাজনীন আখতার তন্বীকে শুভেচ্ছা। ভয় পেও না। হার মেনে যাবার কিছু নেই।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.