নারীবাদ বিষয়টা অত সহজ না

Meye 7জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: নারীবাদী শব্দে অনেকেরই গায়ে জ্বালা ধরে বোঝা যায়। তারা ঠিক হেফাজতের ১৩ দফা সমর্থন করেন এমন কেউও নন। তাদের অনেকেই পরিশীলিত(!) আচরণ করেন। বর্ণচোরাও বটে। রেগে গেলে কিংবা কোন কারণে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকট হলেই কেবল তারা ধরা পড়েন।

তবে নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝি- নারীবাদী হয়ে উঠা এত সহজ বিষয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেমিনিজম নিয়ে গবেষণাপত্র লেখা আর নিজে ফেমিনিস্ট ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠা মোটেও এক বিষয় নয়। সাড়ে আট বছর বিলেতে থাকাকালীন সেখানকার সামাজিক অবকাঠামোগত কারণে নারীর সমান ক্ষমতায়ন নিয়ে যে শিক্ষা পেয়েছি তা বই পড়ে শেখা সম্ভব ছিলনা। দেশে ফিরে প্রচন্ড পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় আবার- যেই লাউ সেই কদু।

এখানে নারীর সমক্ষমতার কথা বলা মানে কেউ কেউ নারীকে দাঁড়িয়ে হিসু করার ক্ষমতায়নের সাথে তুলনা করেন। কাবিননামায় “নারী কুমারী কিনা” শর্ত থাকার বিরুদ্ধে ব্লাস্টের করা মামলায় উপস্থিত থেকে সহায়তা করেছিলাম বলে এক নারী আইনজীবী সহকর্মী খেদের বশে জানতে চেয়েছিলেন আমি নারী কিনা? আমার এত মাথা ব্যাথা কেন? আমার সত্যিই কোন মাথা ব্যাথ্যা নেই। আমি নিজে পুরুষতন্ত্রের যে শিক্ষা এই সমাজ থেকে পেয়েছি এবং তার ফলে যেটুকু ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেছি- মাঝে মাঝে তার কিছু প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করি মাত্র।

আমি মনে প্রাণে এখনো পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা পোষণ করি, আমার চিন্তা চেতনা দীর্ঘদিনের অসম ক্ষমতা চর্চার দূষণে দুষ্ট। আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত সবখানেই পুরুষেরই জয় জয়কার। আমি একা নারীবাদী হই কি করে? আমি ধীরে ধীরে নারীবাদী হওয়ার কঠিন পথ পরিক্রমণ করছি মাত্র।

নাজনীন আখতার তন্বীরা জীবনকে ত্যাগ করতে চায় জীবনকে ভাল করে পাওয়ার আশায়। তাদের হেরে যাওয়ার গল্প অনেকের মন ছুয়ে যায়- এটুকুই। তন্বীরা যে ক্ষমতার অসম লড়াইয়ে আমাদের নিস্ক্রিয়তার কারণে হেরে যায়, আমাদের নারীবাদী হয়ে উঠতে না পারার ব্যর্থতার কারণে হেরে যায়- তা আমরা ভেবে দেখিনা।

তন্বীর করা মামলায় তার নির্যাতক স্বামী এখন জেলে, কিন্তু এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কি তাকে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে দেবে? তাদের অহমে লাগবে না? হয়ত শীঘ্রই দেখব রাখব বোয়ালরা সব তার পেছনে দাঁড়িয়ে পুরুষের জয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.