আমার না বলা গল্প-১০: পুরুষ তুমি কি মানুষ?

child-girl-rapeসুরঞ্জনা চৌধুরী: আমার বয়স যখন ছয়-সাত-আট হবে, একেবারেই শিশু-সবচেয়ে কাছের বান্ধবী, একই ক্লাসে পড়ি, আমাদের প্রতিবেশী। তার বাবা সরকারি কর্মকর্তা, অন্ধ। কোন কারণে চাকরি করার সময়ই অন্ধ হয়েছেন।

বড় কর্তাদের সুনজর ও দয়াপ্রসূত চাকরিটা চালিয়ে যাচ্ছেন-শিক্ষিত, রুচিশীল ও পর্দানশীন স্ত্রী আর সহকর্মীদের সহযোগিতায়। তিনি অফিসের কাজ বাড়িতে বসেই করেন বেশি। যদিও অফিসে যান নিয়মিত।

স্ত্রী বাসার দোতলায় বসে লেখালেখির কাজ এবং কখনো কখনো অধ:স্তন সহকর্মীরা সাহায্য করেন কাজকর্মে। এলাকার সবাই তাকে মানবিক চোখে দেখে। আমাদের পরিবারের সাথে খুব ভাব।

উনার দুই ছেলেমেয়ের সাথে আমরা দু’বোন পড়ি, আর তাদের ছোট্ট শিশু মেয়েটি আমার চোখের মনি, সারাদিন তাকে আদর করি.. আর সেজন্যেই ওদের বাসায় সারাদিন যাতায়াত।

চাচা আর খালাম্মা ডাকি বান্ধবীর বাবা-মাকে। রোজই ওদের বাসায় যাই, সকাল-বিকেল। বাবার মতো লোকটাকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করি শিশু বয়সের শিক্ষা ও সারল্যে। কিন্তু প্রায়ই একটা ব্যাপার লক্ষ্য করতে থাকি যে, তিনি আমার বয়সী তার নিজ মেয়ের চেয়ে আমাকেই বেশি বেশি আদর করতে চেষ্টা করেন। আদরটা কেমন জানি (!)। আমার কাছে ঠিক ভাল লাগে না!

তখন ছোট বয়সে যে আদরের মানে বুঝিনি- আজ বুঝি, সে আদর কী ছিল- তাছাড়া শিশু হলেও মেয়েদের একটা তৃতীয় নয়ন থাকে যা দিয়ে কিছু একটা বুঝে নেয় কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ, তাই হয়তো ব্যাপারটা মন্দ বলে বুঝতাম।

অন্ধ বলে যদিও নিশ্চিত হতে পারতাম না, তবু বুঝতাম লোকটা এমন কিছু করার চেষ্টা করে যা ভাল নয়-সবসময় আমাকে কোলে বসাতে চেষ্টা করে আর আমার শরীরের নীচের অংশে হাত বুলাতে চায়, আরও কিছু যেন চেষ্টা করে। আমি যতো সরে যাই তিনি ততো চেষ্টা করেন। মাঝে মাঝে দুই হাতে কোলে তুলতে চান, আর সেই ফাঁকে আমার বুকেও হাত দেন যদিও তখন আমি এত ছোট যে শারীরিক সেরকম কোন লক্ষণই প্রকাশ হয়নি, তবু আমি খারাপ কিছু হচ্ছে আমার সাথে -এমন বুঝতে পারি আর পিছলে পিছলে পড়ে যাই উনার হাত থেকে মুক্তি পেতে।

কিন্তু তিনি নাছোরবান্দা, চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন, আর আমি ততই উনার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই, না পারি নিজে ঠিকমত বুঝতে, না পারি কাউকে বলতে। এদিকে আমার বান্ধবীকে বলা উচিৎ নয় এটাও বুঝতে পারি, তাছাড়া সে বুদ্ধি, ম্যাচুরিটি বা সাহসই বা কিভাবে থাকবে ওই ছোট বয়সে!

যে ব্যাখ্যাটা আজ আমার কাছে পরিষ্কার, তা কি তখন বুঝতাম? আরও একটা কাণ্ড করতেন, আমাকে ঘাড়ে তুলতেও চেষ্টা করতেন মাঝে মাঝে… ছোট বয়সের অভিজ্ঞতা, নোংরা একটা অনুভূতি সারা শরীর মনে, একটা গ্লানি যা এই মধ্যবয়সেও বয়ে বেড়াচ্ছি…..একটা বিচ্ছু যেন হেঁটে বেড়ায় আমার শরীর- মনে। এখনও মনে পড়লে গা ঘিনঘিন করে….সেই থেকেই পুরুষ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসার জায়গায় ঘৃণা আর ভয় বাসা বেঁধে আছে।

আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে যা এই না বলা কথায় বলা যেতে পারে একে একে.. তাতে সমাজের কোনো পরির্তন হয়তো হবে না, তবু আমার ঘেন্নার প্রকাশটা তো হবে! আর যদি কোনো মা- বাবা একটু হলেও সচেতন হয় তার মেয়ে শিশুর বেলায় (!) তাই লেখাটা লিখছি।তবে আজ আর অন্য গল্প( সত্যি) নয়। অন্যকোনো দিন..।

আমার লেখাটি বর্ণনামুলক- আবেগ দিয়ে, যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারলাম না- কিন্তু শেয়ার করার চেষ্টা করলাম আমাদের সমাজে, পরিবারে মেয়ে শিশুবেলা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ আর পুরুষ চরিত্র বোঝার জন্য -এমনকি সে বাবার সমকক্ষ হলেও।

 

শেয়ার করুন: