আমরা নায়লা নাইম প্রজন্ম

Naylaমারজিয়া প্রভা: নাইলা নাইমকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি না। অধিকাংশ মানুষ তাঁকে যেভাবে চিনে আমিও সেইভাবেই তাঁকে চিনি। তাঁর জনপ্রিয় হবার সিস্টেমকে সমালোচনা করা আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য না।

নাইলা নাইম ফেবুতে কিছু মডেলিং এর ছবি শেয়ার করে আলোচনায় আসেন। সে থেকে বাংলা ছবির আইটেম কন্যা, নায়িকা এবং সবশেষে তিনি যাচ্ছেন বলিউড মাতাতে। এই সাফল্যের জন্য তাঁকে অভিনন্দন।

মডেলিং এমন একটা প্রফেশন যেটার মূল দিক থাকে কোন ব্র্যান্ড প্রমোট করা। আপনি কোন জিনিষ কিনবেন, সেটার মূলে থাকে জিনিষটা আপনাকে কত আকৃষ্ট করল!  তাই ব্র্যান্ড প্রমোটিং এ আলাদা ভ্যালু পেয়েছে মডেলিং প্রফেশন। এখানে মডেলদের ইচ্ছামত কাজ করার সুযোগ খুব একটা থাকে না। তাই তাদের বাধ্য হয়েই অনেক কিছু করতে হয়। নাইলা নাইমের যে ছবিগুলো ফেবুতে হইচই ফেলে দিয়েছিল, তা ছিল মূলত নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের অন্তর্বাসের প্রমোটিং এর ছবি।

অনেকে আজকাল এই পণ্যপ্রথার শিকার মনে করছে নারীকে। বলছে, পুরুষতন্ত্র নারীকে এই রকম খুললামখুল্লা করে পণ্য বানিয়েছে, নারী নিজেও জানে না সেটা। কিন্তু সেটা কি খালি নারী হচ্ছে? পণ্যপ্রথার শিকার হচ্ছে  তো পুরুষও। তাই স্পোর্টস পারসোনালিটি হওয়া সত্ত্বেও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডের ন্যুড পিক প্রকাশিত হয়, তিনিও অন্তর্বাসের মডেল হন।

প্রতিযোগিতার বাজার এখানে। যৌনতা, আবেগ এবং আবেদনকে পুঁজি করে ব্যবসা চলে। এই ব্যবসায় মেয়েরা যতটুকু পণ্য হচ্ছে, হচ্ছে ছেলেরাও। এবং আমরা যারা ক্রেতা এবং ভোক্তা জিইয়ে রাখছি এই প্রতিযোগিতাকে। তাই আইটেম সং এর দুনিয়া আসছে বাংলা ছবিতে, মডেলিং হয়ে উঠছে আরও আবেদনের জায়গা!

Prova
মারজিয়া প্রভা

এই পণ্য প্রথা টিকিয়ে রাখার দায়ভার আমাদের হলেও, আমরা নিঃসঙ্কোচে  কিন্তু কোন পুরুষ না, নারী মডেলকেই দোষ দেই! তাদের কাজের যথেচ্ছার সমালোচনা করি! পুরুষ টপলেস বডি দেখালে সেটাকে দেহসৌষ্ঠব দেখান হয়, কিন্তু নাইলা নাইম যখন অন্তর্বাসের মডেল হিসেবে ছবি দেয় আমরা হই-হই করে উঠি? কেন? পুরুষ মডেল যে কাজ করছে, নায়লা নাইম কি ব্যাতিক্রম? যদি নিন্দা করতে হয়, পুরো পণ্যপ্রথাকে ঘেন্না করব, নাইলা নাইম কেন সাবজেক্ট হয়ে উঠবে?

প্লেবয় ম্যাগাজিন নারীদেরকে প্রথম এই কাতারে নিয়ে আসে, যৌনতার সুড়সুড়ি সাবজেক্ট করে। ৬০ বছর এখনও মাতিয়ে যাচ্ছে প্লেবয়, যার মূল পাঠক ছিল তরুণ ছেলেরা। আশ্চর্যের বিষয় এই পত্রিকার বর্তমান চিফ পারসন একজন মেয়ে, ক্রিস্টি হেফনার! তাদের বক্তব্য হচ্ছে “একটা মেয়ের শরীর তাঁর নিজস্ব জমিদারি, সে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে তা দেখাবে”।

হক কথা! কিন্তু তবুও আমরা সাবজেক্ট করি নায়লা নাইম। পণ্যপ্রথাকে আমরা ভালোবাসি, কিন্তু পণ্যপ্রথার প্রয়োজনে তাঁর আবেদন লুকটাকে না! আজিব মানুষ!

আমি নাইলা নাইমকে শ্রদ্ধা করি। তাঁর কাজকে শ্রদ্ধা করি। যেসব মানুষ তাঁকে সমালোচনা করে বিচ্ছিরিভাবে, তারা নিজেরাও পণ্যপ্রথাকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু শুধু নারী বলে তাঁর এই আবেদনকে তারা মেনে নিতে পারে না। পুরুষ মডেল তাদের কাছে ব্যাপার না, ব্যাপার নাইলা নাইম!

নাইলা নাইম, পারপাস অফ হার প্রফেশন, নিজেকে প্রেজেন্ট করে, তিনি তাঁর প্রফেশনে যথেষ্ট সৎ এটাই তার প্রমাণ।

আচ্ছা একটু ভাবুন তো, আমরা নিজেরাও কি অসেচতনভাবে আবেদনময়ী হয়ে উঠার চেষ্টা করি না? ৩৬-২৬-৩৬ হতে চাই না? ফেয়ার লুক আনতে চাই না? ফেয়ার এন্ড লাভলি, পন্ডস বাজার করছে কীভাবে তাহলে?

পুরুষতন্ত্র না, নাইলা নাইম প্রজন্ম তৈরি করেছে পুঁজিবাদ। আর আমরা দোষ দেওয়া শুরু করি নারীর আবেদনকে। যেখানে নারীর আবেদন একটা আউটপুট মাত্র, কোন রিজন না! 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.