তুরীন আফরোজকে এ কোন বিকৃত মানুষের হুমকি?

Let 2Let 1গোধূলি খান: হাতে লেখা একটি চিঠি যেখানে নেই প্রেরকের নাম। প্রাপক ব্যারিস্টার তুরীন আফরোজ, চিঠির ভাষায় যে কেউ অসুস্থ বোধ করতে পারে। একজন মানুষ কতটা বিকৃত আর অসুস্থ মনে হলে এই ধরনের চিঠি লিখতে পারে তা ধারণার অতীত। চিঠি পড়ে মনে হয় ব্যক্তিটি মৃত জন্তুর সাথে সহবাসে আগ্রহী, যাকে ইংরেজিতে নেক্রোফিলিয়া অর্থাৎ যে মৃত প্রাণীর সাথে যৌনকর্মে আসক্ত।

বেনামী পত্র লেখকের রুচি ও চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে এই চিঠির মধ্যে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, একজন মানুষ নিজকে দিয়ে বিচার করে অন্য আরেকজনকে। ফলে প্রেরকের মানসিকতার জ্বলন্ত প্রমাণ এই চিঠি। এধরনের একজন বিকৃতমনের মানুষ পারে নাম-পরিচয় গোপন রেখে কাউকে উত্যক্ত করতে। চিঠি দিয়ে অশ্লীল আক্রমণ করতে, এদের সামনে এসে দাঁড়ানো বা কথা বলার ক্ষমতা নেই। এরা নোংরা কথা লিখে আনন্দ লাভ করে। এরা কিছু করার ক্ষমতা না রাখলেও, বিরক্ত বা মানসিক পীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিঠির ছত্রে ছত্রে সেই পীড়ন সুস্পষ্ট। এধরণের মানুষ সমাজের জন্য ক্ষতির। এরা সমাজে বসবাস করে ধীরে ধীরে বিকৃতি ছড়ায়।

পেশাগত দায়িত্ব পালনে এধরণের আক্রমণে হতাশা প্রকাশ করেন তুরীন আফরোজ। তিনি বলেন, পেশাদারিত্বের চেয়েও একজন নারী হিসেবে আমাকে এ চিঠিতে আক্রমণ করা হয়েছে বেশি। চিঠির ভাষা এতোটাই অশালীন যে, এটা সভ্য সমাজের ভাষা হতে পারে না। বুধবার (১০ জুন) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি এ চিঠি পান। তুরিন আফরোজ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।

ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবমাননাকর’ বিবৃতি দেওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-২ এর দণ্ডপ্রাপ্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ২২ জন নাগরিকের কেউ এ চিঠি পাঠিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন তুরীন। 

তিনি বলেন, চিঠির বিষয়বস্তুতেও এটি উল্লেখ থাকায় তার এ ধারণা হচ্ছে। গত ১২ মে তুরিন আফরোজের নামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। তিনি আগেরদিন, অর্থাৎ ১১ মে অভিযুক্ত নাগরিকদের আদালত অবমাননার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রুল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন।

Tureen
তুরীন আফরোজ

তুরীন ওইদিন বলেন, এ বিবৃতির মাধ্যমে তারা (২৩ নাগরিক) ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বার্গম্যানের শাস্তির যৌক্তিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বিচারপতিদের কর্তৃত্বকেও ক্ষুন্ন করেছেন তারা। নাগরিকদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে না। বিবৃতিদাতাদের উপযুক্ত শাস্তিও দাবি করেছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। অশ্লীল মন্তব্য ও ব্যক্তিগত আক্রমণ করে লেখা বেনামি এ চিঠি পাওয়ার পর অনিরাপদ বোধ করছেন তুরিন আফরোজ। বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

চিঠি পড়ে মনে হয়েছে, তার কাজের প্রতি ক্ষোভ থাকলেও, শুধুমাত্র নারী হবার কারণে নোংরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন বেশি। ওইদিন তুরীন আফরোজের বদলে কোন পুরুষ প্রসিকিউটার থাকলে কি তাকে এই কথা লিখতে পারতো?

তুরীন আফরোজকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠির তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। নারীর প্রতি সর্বত্র এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। একজন নারীর প্রতি এ ধরনের মনোভাব কোন ভাল কিছু বয়ে আনবে না। এই চিঠির ভাষা প্রমাণ করে, কোন স্ট্যাটাসের নারীই আজ কিছু নোংরা পুরুষের কুৎসিত থাবা থেকে মুক্ত নয়, এরা সমাজের শত্রু, এদের আইনের আওতায় আনার অনুরোধ করছি যথাযথ মহলের কাছে। এই নোংরা কীটের হাত থেকে আমাদের সমাজের কোন নারী আর নিরাপদ নয়। দিনে দিনে নারীর জন্য আমাদের সমাজে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।

নারীর প্রতি সবধরণের আক্রমন, নিপীড়ন ও সহিংসতার বিচার দাবী করছি। আশা করছি বিভিন্ন নারী সংগঠন গুলি ঐক্যমতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে এগিয়ে আসবে। উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতির অবসানে একযোগে কাজ করবে।

: সাংবাদিক ও লেখক।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.