তামান্না কদর: ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, খুন এর বিপরীতে মৃত্যুদণ্ড নিয়ম চালু রাখার পক্ষে আমি। পৃথিবীর সকল মানুষের বিরুদ্ধাচরণ করলেও আমি এ তিনটি অপরাধের জন্যে মৃত্যুদণ্ডকেই শাস্তি হিসেবে বেছে নিয়েছি। মানবতা দেখাতে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে অপরাধের মাত্রা বাড়ানোর পক্ষে আমি নই। তবে এখানে একটি মৃত্যুদণ্ডকে ছাড় দেয়ার একটি অবকাশ তৈরি করা যায়।
সবচেয়ে ভালো হয়, ধর্ষণ সন্ত্রাসের জন্যে ধর্ষণ সন্ত্রাসীর খোঁজাকরণ।
‘চোখের বদলে চোখ; এভাবে একদিন দেখা যাবে সকলেই অন্ধ হয়ে গেছে’-এমন একটি বাক্য অনেককে বলতে শোনা যায়। এটি একটি চরম ফাঁকিবাজি বাক্য। পৃথিবীতে অপরাধীর সংখ্যা নিরাপরাধ লোকের চেয়ে বেশী নয়।
ধরা যাক, ১০০ জনে ৫ জন চোখ হরণকারী, এই ৫ জন চোখ হরণ করলো; বদলে ৫ জন অপরাধীর চোখ তুলে নেয়া হলে মোট ১০ জন দৃষ্টিহীন হলো। বাকী ৯০ জন দৃষ্টিসম্পন্ন। তাহলে চোখের বদলে চোখ নিলে একসময় সকল মানুষ দৃষ্টিহীন হবে, এই-ভাবাস্বপ্নটি দিয়ে খুনের বদলে মৃত্যুদন্ড বাতিল করার যুক্তিটি অবশ্যই খোঁড়া যুক্তি। গুরুতর অপরাধী হলো ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, খুন সন্ত্রাসী, এরা ক্যান্সার। ক্যান্সার আক্রান্ত অঙ্গ আমরা শরীরে বহন করে চলবো কেনো? এই অংশ সমূলে উৎপাট করাই প্রয়োজন।
ছবিতে ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ এর শিকার এবং খুন হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনের অবয়ব দেথে এদের জীবনের ভয়াবহতা কল্পনা করা যাবে না। স্বচক্ষে এইসব নির্যাতিতদের দেখলে এবং তাদের প্রত্যাহিক জীবন নিরীক্ষণ করলে কোনো বিবেকবান মানবতাবাদী মানুষ ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, খুন সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ড না চেয়ে পারবেন না।
এইসব নির্যাতিত মানুষেরা; খুন হয়ে যাওয়া ব্যক্তির স্বজনেরা, ধর্ষণ ও এসিড সন্ত্রাসের শিকার মানুষেরা শরীরে বেঁচে থাকলেও প্রতিমূহূর্তে মানসিক এবং সামাজিক মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে। ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে পারে পুরুষেরাই, নারীর পোশাক বা চলাফেরার বাধ্যবাধকতা নয়।
যখন নারীরা পুরুষকে যৌন হয়রানির জন্যে গালি দিতে থাকে তখন অনেক পুরুষকেই বলতে শুনি- ‘সকল পুরুষকে এক পাল্লায় মাপবেন না, আমরা ভালো অনেক পুরুষ আছি।’ সকল পুরুষকে এক পাল্লায় মাপতে নারীরাও চায়ও না, কিন্তু মাপতে বাধ্য হয়।
তো যারা ‘ভালো পুরুষ’ আছেন তারা সকলে মিলে ধর্ষণ সন্ত্রাসীকে ধরে ধোলাই করে দিন না! নিজেদের ইজ্জত বাঁচান, পুরুষের ইজ্জত বাঁচান। ধরা যাক, রাজধানীর সবুজবাগে একটি ধর্ষণ সন্ত্রাস হলো, আমরা যারা এই এলাকার বাইরের আছি তার এর সত্যতা নিয়ে দোলাচলে থাকতে পারি। এই এলাকার বাইরের লোকের পক্ষে সম্ভব নয় ধর্ষণ সন্ত্রাসীকে ধোলাই করা কিন্তু ওই এলাকার ভালো পুরুষেরা তো নিশ্চয়ই ধর্ষণ সন্ত্রাসীকে চেনে এবং ঘটনার সত্যতা জানে। তবে তারা বসে থাকে কেনো? কেনো সকল ভালো পুরুষ এর প্রতিকার করে না?
আমি খুব দৃঢ়চিত্তেই এইসব ভালো পুরুষদের আহবান জানাই আপনার এলার চিহ্নিত ধর্ষণ সন্ত্রাসীকে উপযুক্ত শাস্তিটি দিন। সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া ধর্ষণের উপযুক্ত বিচার এদেশের আইনে সম্ভব নয়।
নাকি আপনারা মনেই করেন যে, পুরুষ উত্তেজিত হয়ে ধর্ষণ করতেই পারে। তবে আর আপনাদেরকে ভালো পুরুষ বলি কী করে? তখন আপনারাও প্রত্যেকে এক একজন প্রচ্ছন্ন ধর্ষক। চেতনায় ধর্ষক। আর আপনাদেরই বা কতোটা দোষ দিব! বাংলাদেশ আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা যেভাবে দেয়া আছে এবং এর বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে করার কথা বলা হয়েছে তাতে দেখা যায় পুরুষ এখানে ব্যক্তি বা মানুষ আর নারী একটি বস্তুমাত্র, যাকে মন চাইলেই দলিত করা যায়।
আর বিচার চাইতে গিয়ে নারী আরও কয়েক দফা মৌখিক এবং সামাজিক ধর্ষণের শিকার হয়। আইনেও বোধ করি অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। কারণ এ সমাজ পুরুষের, আইন তৈরি করে পুরুষ, বিচারও করে পুরুষ, ধর্ষণও করে পুরুষ। এক পুরুষ আরেক পুরুষের খোঁজাকরণ সইবে কেনো? পুরুষ তো নারীর আজন্ম শত্রু। ইতিহাস এমনই বলে। নারীকে নিয়ন্ত্রণের জন্যে হেন মন্দ কাজ নেই যা পুরুষ করে নি।
উদাহরণ টানবেন না যে বাংলাদেশে নারী চালায়, অনেক নারী আছে জজ, অনেক নারী আছে পুলিশ ইত্যাদি ইত্যাদি। দেশটা এখনো পুরুষতন্ত্র নামক সন্ত্রাসের শিকার আর পুরুষতন্ত্র এক ভয়াবহ সন্ত্রাসের নাম। উল্লিখিত নারী শোকেসে সাজানো সম্রাজ্ঞী এবং বাকিরা তার পরিচারিকা মাত্র। নিজের মতো করে কোনো কিছু করার সক্ষমতা বা মানসিকতা তার ধারণ করে না।