রুমানার ফিরে দাঁড়ানো

Rumana Manzurফারজানা শাম্মী: “সুখ- দুঃখ তো হলো আমাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক ক্রিয়া। তাই আমি নিজেই হতে চাই এই ক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক।” চার বছর ধরে এই মন্ত্রেই নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন রুমানা মনজুর। আর তাই তো রুমানা দৃষ্টি হারালেও হারায়নি তার ভিশন, তার পার্সপেক্টিভ। রুমানা আজও সেই আগের মতোই বিশ্বাস করে জীবনকে উদযাপন করায়।

তিনিই সেই রুমানা, যার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়েছিল তারই স্বামী।

গত ২৩ মে ২০১৫, TEDx Stanley Park এর আমন্ত্রণে “লাইট থ্রু ডার্কনেস” শিরোনামের রুমানার বক্তব্য হৃদয় ছুঁয়েছে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার।  ভ্যাঙ্কুভার সময় সকাল ১০:৩০, আর আমার এখানে টরন্টো সময় দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। ঘুম থেকে উঠেই ফোন করলাম রুমানাকে, ও বেরিয়ে যাবার আগেই উইশ করার জন্য।

লাইভ স্ট্রিমিং দেখার জন্য রেজিস্টার করে রেখেছিলাম আগের রাতেই। ভীষণ উত্তেজনায় লগ ইন করে বসে রইলাম অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগে থেকেই, কিছুতেই যেন মিস না হয়।

বার বার শুধু মনে হচ্ছিল ইশ! টরন্টো থেকে ভ্যাঙ্কুভার এ দূরত্বটা এত বেশি না হলেও তো পারতো!

১৩ জনের মধ্যে রুমানাই ছিল প্রথম বক্তা। এই অন্ধকার পৃথিবীতে তার উঠে দাঁড়ানোর- চলতে শেখার  সংগ্রাম, মেয়ে আনুশেহ’র হাত ধরে মনের আলোয়  তার অন্ধকার পৃথিবীকে চিনে নেয়ার গল্পই উঠে এসেছে ওর বক্তব্যে।

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়া তে পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স করার সময় রুমানা তার থিসিস এর জন্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে দেশে এলে বদলে যায় তার পৃথিবী। এক সময়ের ভালবাসার মানুষটি তার দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিলেও, নিতে পারেনি রুমানার জীবনী শক্তি। থমকে যাওয়া পৃথিবীতে নতুন করে আবারও সব শেখার পালা, বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে নেয়া পড়াশোনাটা চালিয়ে নেয়ার জন্য।

রুমানার ভাষায়, এ যেন সাঁতার শেখার আগেই সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পরা। অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পথ চলতে চলতে ২০১৩ তে মাস্টার্স শেষ করে সেই বছরই জুরিস ডাক্তার স্টুডেন্ট হিসেবে আইন পড়তে শুরু করে একই ইউনিভার্সিটিতে।

Rumana 2নিরবে নির্যাতন সহ্য করে যাওয়া অসহায় নারীদের সাহায্য করাই এখন রুমানার লক্ষ্য। নারী নির্যাতন মুক্ত একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে রুমানা।  যে পৃথিবী নারীর প্রতি সংবেদনশীল নয়, আনুশেহ’র জন্য এমন পৃথিবী চায়না ও। আর এ জন্যই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এবং সেই সাথে সচেতনতা তৈরী করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সে আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

বক্তব্যের শেষে সবার প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় রুমানা, ” তোমরা থাকবে কি আমার সঙ্গে?” থিয়েটার ভর্তি মানুষ একসঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে চিত্কার করে একাত্মতা ঘোষণা করে , “ইয়েস উই উইল।”

রুমানা, আমরা সবাই আছি তোমার সাথে…সাথেই থাবো…প্রমিস। তোমার স্বপ্নটা আমরা ছড়িয়ে দেব। আনুশেহ’র জন্য গড়ে দেব একটা সুন্দর পৃথিবী।

ফারজানা শাম্মী: প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.