ঋতুচক্র নিয়ে আমরা নিশ্চুপ কেন এখনও?

তানিয়া কামরুন নাহার: সুস্থ, সুন্দর, হাসিখুশি শিশুর জন্য নিরাপদ মাতৃত্ব, প্রসব কালীন সময়ে করণীয়, গর্ভকালীন সময়ের যত্ন সম্পর্কে সবাই এখন ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে। কিন্তু একটি ব্যাপারে আমরা সবাই এখনো নিশ্চুপ, নারীর ঋতুচক্র। যেন এক অচ্ছুৎ ব্যাপার।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এটি নারীর কাছে গোপন এক লজ্জা, ভীতিকর ব্যাপার, অভিশাপ আর পুরুষের কাছে সস্তা রসিকতার বিষয়। অথচ নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও সকলের সুস্থ সুন্দর যৌন জীবনের জন্য নারীর ঋতুস্রাব ও এ সংক্রান্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন হবার সময় এসেছে আজ আমাদের।

ঋতুচক্র নিয়ে আমাদের কুসংস্কার, অজ্ঞানতা, ভুল ধারণা রয়েছে প্রচুর। ঋতুস্রাবের সময়ে শরীরের দূষিত রক্ত বেরিয়ে যায়, এসময়ে সন্ধ্যা বা রাতে মেয়েদের বাইরে থাকা যাবে না, চুল খোলা রাখা যাবে না, মেয়েটিকে অচ্ছুৎ/অপবিত্র/অসুস্থ ভাবা, মাছ খেতে না দেওয়া, ঘরে বন্দী হয়ে থাকা, এমনি সব কুসংস্কার এখনো অনেকেই অক্ষরে অক্ষরে মেনে থাকে। অথচ এসবের কোন ভিত্তিই নেই। একজন কিশোরী এই ঋতুচক্রের মাধ্যমেই ধীরে ধীরে নারী হয়ে উঠে। সুস্থ একজন নারীরই নির্দিষ্ট একটি চক্রে প্রতি মাসে ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। এটি প্রকৃতিরই একটি স্বাভাবিক নিয়ম।

শুধু মানুষই নয়, শিম্পাজি, গরিলা, ওরাং ওটাং, রেসাস জাতীয় বানর, কিছু প্রজাতির বাদুর ও হাতিদের মধ্যেও ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। প্রজাতি রক্ষার ধারাবাহিকতার জন্য প্রকৃতির এ এক বিশেষ চক্র। তাই একে অভিশাপ বা লজ্জা হিসেবে না ভেবে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। শুধু নারীই নয়, পুরুষদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নারীর শরীরের এই প্রাকৃতিক চক্র নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব থেকে পুরুষদের বের হয়ে আসতে হবে। এ নিয়ে অহেতুক নোংরা ঠাট্টা করার কিছু নেই।

কেননা, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে কারো শরীরে ডিম্বাণু তৈরি হয়, ঋতুস্রাব হয়ে থাকে, তেমনি আবার কারো শরীরে তৈরি হয় শুক্রাণু। এই পৃথিবীতে আমাদের জন্ম নেবার পেছনে এসব কিছুই একটা কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে নারীর শরীর থেকে ১০ থেকে ১০০ মিলি লিটার পর্যন্ত রক্ত বেরিয়ে যায়। তাই ঘরে/বাইরে সব ধরনের কাজে নারীএর প্রতি সকলের সহযোগিতামূলক মানসিকতা থাকা উচিত। অবশ্যই এ বিষয়ে মাত্রাছাড়া কৌতুহল দেখাতে গিয়ে নারীকে বিব্রত ও বিরক্ত করা ঠিক হবে না কারোরই। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনের সময়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্যানিটারি প্যাড সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আজ বিশ্ব ঋতুস্রাবসংক্রান্ত পরিচ্ছন্নতা দিবস। সব ট্যাবু ও কুসংস্কার ভেংগে নারীর নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আমাদের ঋতুস্রাব সংক্রান্ত পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সবার সচেতন হতে হবে। সচ্ছন্দে নারীর সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং নতুন একটি সুস্থ প্রজন্মের কথা ভেবেই  এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে।

শেয়ার করুন: