পরিবর্তন আসতে হবে ঘর থেকেই

Joyosree
জয়শ্রী দত্ত

জয়শ্রী দত্ত: তো যা বলছিলাম, নববর্ষের নারী লাঞ্ছনার ব্যাপারে আজকাল কিছু নতুন থিওরি এসেছে বদমাশদের শুধরানোর প্রকল্প হিসেবে … কেউ বলছে ‘ মা বোন ভাববার দরকার নেই ,শুধু নারী ভেবেই সম্মান করা হোক’, আবার কেউ বলছে ‘সবাইকে মা বোন ভেবে সেক্সুয়ালি ডিস এঙ্গেইজড করতে হলে নিজের ই সেক্সুয়াল মোরালিটি আরেকবার রিভাইজ করেন’…ইত্যাদি ইত্যাদি… ।

সার কথা হলো কোন এবিউজেই ‘মা বোন’ ভাবার দরকার নেই আর !!! শুধু ‘নারী’ ভাবলেই চলবে !

ঠিক আছে, থিওরির চল একদম যে নেই,তা কিন্তু নয়। তবে থিওরি মাথায় ঢুকানোর মতো মগজ,সময় ,ধৈর্য, কয়জনের আছে আজকাল? তাই প্রাকটিকেলের সাথে পাল্লা দিয়ে আজকাল থিওরি মার খায়। কেননা থিওরি অনেক বোরিং হয়ে গেছে দুনিয়া জুড়ে, তাই সব হাতে কলমে আর চোখ ,জিহবা এসব দিয়ে শর্টকাটে চলে গেছে অধিকাংশরা।

কিছু প্রাকটিকেল উদাহরণ দেয়া যাকঃ

একটা শিশুর প্রথম জগতই হলো তার পরিবার। প্রথম আশ্রয়, বন্ধুত্ব ,শিক্ষা শুরু হয় মায়ের হাত ধরে। আর কন্যা ,বোন এরা মায়ের ই ভ্রুন সংস্করণ। একটা ছেলে শিশু আপনাদের ‘নারী’ থিওরি বোঝে না, সে বোঝে মায়ের, বোনের আদর, ভালবাসা, মমতা ভাগাভাগি। সে বোঝে যখন সে আছাড় খেয়ে পড়ে যায়, মমতাময়ী কেউ এগিয়ে এসে কোলে তুলে নেয়।

সে এটাও বোঝে তার বেড়ে ওঠার সামনে প্রতিদিন তার বাবা তার মাকে দুটো চুমু খেলে মা তো বাবার হয়ে গেল, তাহলে মা তো বোধ হয় তাকে আর ভালবাসে না ! মায়ের ভালবাসা আদায় করতে সে আরও ফন্দি-ফিকির করে মায়ের পাশে পাশে মন ভোলানো এটা সেটা করে বেড়ায়। বাবা মেয়ের জন্য সেরা খেলনা আনলে তার অভিমান হয়, তখন বোনটি সেই খেলনা ভাইয়ের সাথে শেয়ার করল, তাতেই শিশুটি মহা খুশি। এভাবেই সে একদিন ভালবাসতে শিখে কোন নারীকে, এমনকি তার বাবার চেয়েও বেশি হয়তো! কারণ সে বাবাকে দেখে শিখেছে কিভাবে মা –মেয়ে- বোনকে ভালবাসতে হয়, কোন ‘থিওরি’ বা সাইকোলজির বই পড়ে নয় ।

আবার যে পরিবারে বাবা সারাদিন মা মেয়ে পেটায়, গালিগালাজ করে  পান থেকে চুন  খসলেই , আর সেই ঘরের নারীরা ভয়ে তটস্থ হয়ে দৌড়ে গিয়ে বাবার/ ভাইয়ের আজ্ঞা পালন করছে … সেখানে সেই শিশুটি প্রথম প্রথম খুব ভয় পেয়ে কাঁদে বাবার এমন চিৎকারে, কিন্তু ধীরে ধীরে সে এটাই বুঝেছে ‘বুঝি এমনই নিয়ম ! বুঝি এভাবেই মাকে, মেয়েকে, বোনকে শাসাতে হয়, বুঝি এরা আমাদের জন্যই জন্মেছে …!

হলো তো এবার দুটি শিশুর দুই রকম ‘প্রাকটিকেল’ শিক্ষা, কথার ঝুড়ি ‘নারী’ থিওরি কি কাজে লাগলো এখানে? সে যা শেখার তা বেড়ে উঠতে উঠতেই শিখেছে ঘরের আর চারপাশের প্রাকটিকেল আচরণ থেকেই। নরম মাটির দলা এক আকৃতিতে শক্ত হয়ে গেলে কি আর পরে ‘নারী’ থিওরির চাকতিতে ঘোরালে কাজ হয়?

ঘর থেকেই শুরু হয় পারস্পরিক ভালবাসা, সম্মান, দায়িত্ব-কর্তব্য। নিজেকে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালবাসে এই জগতে আজকাল, তাই নিজেকে আর নিজের মানুষদের আগে ভালবাসতে দেখান, সম্মান করতে দেখান আপনার বাচ্চাকে । তাহলে রাস্তায় অন্য মেয়েকে নির্যাতন করতে গেলে বা অত্যচারিত হতে দেখলে নিজের ঘরের ভালবাসার মানুষগুলোকে একই পরিস্থিতে ভেবে আপনার সন্তানের গা গুলিয়ে আসবে নিশ্চিত, লিটন-অমিত-সুমনের মাঝে আপনার সন্তানকেও দেখে গর্বিত হবেন একদিন।

ছোটবেলা থেকেই ঘরের নারীদের হাতে কলমে পেটানো শিখিয়ে তারপর শুধু ‘নারী’ থিওরি দিয়ে বদমাশদের মন ফেরানো যাবে নাকি জমাট হয়ে থাকা অত্যাচারি পুরুষ চরিত্রটা এতদিন পরে বদলানো যাবে? গেলেও কিছুটা যেতে পারে শুধুমাত্র কঠিন থেকে কঠিনতম আইন ও অমার্জনীয় শাস্তির বিধানের কার্যকারিতার মাধ্যমে, অন্য কোন কথার ঝুড়ি এখানে নিষ্ফল !

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.