রাজিউল হুদা দীপ্ত: বিশ্বাস…..একটা শক্তির নাম, একটা ক্ষমতার নাম। আমার মধ্যে বিশ্বাস জিনিসটা অনেক বেশী কাজ করছিলো। কাজ করছিলো,বৈশাখের দিন TSC তে সেই ঘটনার আগ পর্যন্ত। বিশ্বাস ছিলো, আমার মতো তরুণদের প্রতি।
হ্যাঁ,আমি জানি খারাপ তরুণের খোঁজ করলে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা গল্পে যতগুলো ইঁদুর ছিলো তার থেকেও বেশী খারাপ ছেলে বের হবে। তবে,আমার বিশ্বাস ছিলো তারা এতোটা খারাপ না যে একটা মেয়েকে এতোগুলো মানুষের সামনে যৌন নিপীড়ন করতে উঠেপড়ে লাগবে, আমার বিশ্বাস ছিলো তারা এতো টাও কাপুরুষ না যে বিবস্ত্র হওয়া নারীর ক্রন্দন রূপ এতোগুলো পাপী চোখ একসাথে দেখতে চাইবে, আমার বিশ্বাস ছিলো তারা এতোটাও নির্লজ্জ না যে নিজের লজ্জা ত্যাগ করে তারা একটা মেয়ের লজ্জা ধার করতে চাইবে।
আমার বিশ্বাস ভেঙে গেছে। এইটা হয়তোবা অনেক আগে ভেঙে যাওয়া উচিত ছিলো। বোকামো আমার। বিশ্বাস ভেঙে গেলে মানুষ shock এর মধ্যে থাকে। তার মধ্যে আতংক কাজ করে। হ্যাঁ,আমার মধ্যে shock ছিলো। তাই,আমি নির্বাক ছিলাম। কিছু লিখার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু,কি লিখতাম? Feeling sad, feeling Shy লিখেতো আমাদের কাজ শেষ হয় না। সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠেছি। এখন আমার মধ্যে আতংক কাজ করছে। আতংক আমার প্রিয়জনদেরকে নিয়ে। এটি কাটিয়ে উঠবার নয়।
অন্য দেশের স্বভাব চরিত্র নিয়ে আমরা হাত তুলি। তারা খেলায় চুরি করলে,আমরা পুরো দেশ উঠেপড়ে লাগি তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের দেশেরই কিছু বোঝা যখন সেই দেশের ‘The Rapist’ ভাবমূর্তি আমাদের দেশে ফুটিয়ে তুলতে চায়, আমরা কতটা সোচ্চার হয়ে উঠি?
যে শাহবাগে আমরা জাহানারা ইমাম এর প্রতিকৃতি ঝুলিয়ে তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি, ঠিক সেই একই জায়গাটাতে যখন একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভোগের আশায় অনুসরণ করে, আমরা কতটা সচেতন হয়ে উঠি? মানুষ প্রশ্ন করা পছন্দ করে না। তারা শুধু উত্তর চায়। আমার উত্তর লাগবে না। আমি জানি না এর উত্তর কি, আমি জানি না এর শেষ কোথায়, আমি জানি না আমার কি করার আছে?
আমি শুধু জানি, আমি শান্তি চাই,আমি জানি আমার বোনের গায়ে যদি হাত দেয়া হয় সেই হাত যেন মমতার হাত হয় কামুক হাত হয়, আমি জানি, আমি চাইনা এইসব ঘটনার কারণে একজন ছেলে হয়ে ওদের জন্য কারো কাছে কোনো দোষ না করে দোষী হতে।
আমার বলতে দ্বিধা নেই, আমি অনেক বেশী emotional. এইসব ঘটনা আমাকে কাঁদায়, ভীত করে। লজ্জিত করে কোনো একটা মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে, অথচ আমি তো লজ্জা নিয়ে বাঁচতে চাই না। কাউকে শাসন করার ক্ষমতা আমার নেই, দেশ পাল্টে ফেলার ক্ষমতা আমার নেই। তাই বলে ‘আমার কিছু করার নাই’ এই attitude নিয়েও আমি বাঁচতে চাই না। আমার মৃত্যু আসুক,আমি মরে যাই। আর ছোট হতে চাইনা। হ্যাঁ,এই ইস্যু নিয়ে অনেকেই স্ট্যাটাস দিবে। তারপর আমরা সবাই চুপ হয়ে যাবো। কিন্তু, কেনো?
হ্যাঁ, আমার মধ্যে ঘৃণা কাজ করে। ১৯৭১ এ যে নারী নিজের ঘাড়ে বন্দুক তুলে নিয়েছিলো, যে নারীর হাত ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধার থালায় মমতা দিয়ে রান্না করা মাছ তুলে দিয়েছিলো ,যে নারীর বুক মৃত ছেলের লাশ জাপটে ধরে রেখেছিলো, যে নারীর চোখ স্বাধীন দেশে পতাকা উড়তে দেখেছিলো, সেই নারীর ঘাড় থেকে যখন ওড়না খুলে ফেলা হয়, সেই নারীর হাত নিয়ে যখন টানাটানি করা হয়, সেই নারীর বুকের লজ্জা যখন খালি করে দেয়া হয়, সেই নারীর দুই চোখ যখন অদৃশ্য এক হাত দিয়ে ডেকে দেয়া হয়, আমার ঘৃণা হয়।
না, সেইসব তরুণের প্রতি না। ঘৃণাটা হয় আসলে নিজের প্রতি। আমি এই ঘৃণা থেকে মুক্তি চাই। আমি এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে আমি বাংলাদেশী হয়ে বাঁচবো।