চাকরির মতো বিয়েরও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন

Draupodi 1শামীম আরা নীপা: একজন দাম্পত্য জটিলতাভুগী মানসিক কষ্টগ্রস্ত নারী দুঃখে-কষ্টে বলে উঠেছিলেন “আরে ভাই, ভাতারের সাথেই বেশ্যামি করতে হয় সব থেকে বেশী” — কথাটা শুনে অপলকভাবে তাকিয়েছিলাম তার দিকে। অনুধাবন করার চেষ্টা করে সফল হয়েছিলাম… এমন জাতীয় একটি কথাই অনেকদিন আগে আমার এক বন্ধুর মা বলেছিলেন বলে শুনেছিলাম।

কথাটা শুনে কেউ মনে বিরুপ কিছু নিয়েন না… জীবন মানেই নাটক … জীবনের পরতে পরতে মানুষকে নাটক করেই চলতে হয়… নিজের কষ্ট মুখ বুঁজে সইলে কেউ ফিরেও তাকায় না কারও দিকে, বরং সেই নীরবতার ভুল ব্যাখ্যাই দিতে থাকে এবং বোঝা চাপাতে থাকে দায়িত্বের ও মানসিক যন্ত্রণার।

ব্যাতিক্রম আছে হয়তো, তবে তা খুব কম – এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম ও ব্যাতিক্রম।

ধরেন ২/৩ ঘন্টা দাঁড়িয়ে কাজ করার দরুন আপনার অসহনীয় ব্যাক পেইন/ কোমর ব্যাথা করছে, কিন্তু আপনি কাউকে কিছু না বলে চুপ করে সইলেন এবং কাজ শেষে ১০ মিনিট বসে ব্যাথাটাকেই আত্মস্থ করার চেষ্টা করতে থাকলেন – ঠিক ঐ সময়েই পরিবারের সাথে আপনাকে কোথাও বের হতে হবে, সবাই রেডি, কিন্তু আপনি নড়তে পারছেন না — এই অবস্থায় আপনাকে কেউ জিজ্ঞেসও করতে আসবে না যে আপনার কী হয়েছে। উল্টা বলবে, আপনি আরাম-আয়েশ করে বসে থেকে সময় নষ্ট করছেন, সবাইকে অপেক্ষা করিয়ে স্বেচ্ছাচার করছেন।

মানসিক যন্ত্রণায় অতীষ্ঠ হয়ে যদি ব্যাথার কথা বলেও ফেলেন, তারপরও আপনাকে অনেকেই আমলে নেবে না … আপনার ব্যাথার থেকে তখন বড়ো হয়ে দাঁড়ায় কারো ঘরে কিংবা গাড়ীতে রাস্তায় অপেক্ষা করে থাকা।

বোঝার পরিবর্তে এই ভুল বুঝে নেয়ার মানুষ এর সংখ্যাই অনেক বেশি … চুপ না থেকে আপনি যদি “উহু আহা” করে ব্যাথার অধিক ব্যাথা দেখিয়ে বাড়ি মাথায় তুলতেন, তাহলে সবার টনক নড়তো, আপনাকে নিয়ে তখন সাড়া পড়তো জীবনসঙ্গীর মস্তিষ্কেও — এটাই বাস্তবতা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে … যে যত দেখাতে পারবে সে তত আদর পাবে।

নারী/পুরুষ যে কেউ এমন সব ঘটনার শিকার হতে পারে এবং হয়ও … বাংলাদেশ যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার দেশ তাই এই সমাজে নারীরাই এমনতরো অপমান নিপীড়নের শিকার হন বেশী – এই সত্যটাকে না মেনে উপায় কি বলেন!

আমরা যতই চেষ্টা করি মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে, সমাজ এবং মানুষ এর মানসিকতা আমাদের পথ রুদ্ধ করে দেয় … পুরুষের পাশাপাশি নারীরাই ঘর -সংসার, কর্মক্ষেত্রে নারীর শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।

সমসাময়িক দাম্পত্য কিছু জটিলতা দেখে মনে হয়, মানুষগুলোর প্রথমে একটা বিয়ে করে সংসারের অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিয়ে তারপর দ্বিতীয় বিয়ে করে সুখী সংসার গড়ে তোলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রথমেই যার সংসার সহনীয় এবং সুখের, সে হলো চান কপালি — সোনায় সোহাগা তার কপাল … কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইস, বোঝাপড়া, সংসারের নিয়ম-কানুন, চাওয়া-পাওয়া, সন্তান বিষয়ক পরিকল্পনা, শ্বশুরবাড়ি ম্যানেজমেন্ট – এসব কিছুরই একটা অভিজ্ঞতা না নিয়ে সংসার করতে গেলে প্রায়শঃ ই নারীকে নানান গঞ্জনা – ভর্ৎসনার শিকার হতে হয়।

তবে একা নারীই নয়, পুরুষরাও কখনো কখনো এসবের শিকার হয় … নিজের ল্যাকিংস বিবেচনা না করেই পরস্পরকে দোষারোপ করা, দাম্পত্য সমস্যাকে পরিবারের অন্য সদস্য বা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা শুরু হয়, তারপর আসে ইগো প্রবলেম, ব্যাস হলো কারবার সারা।

তাই চাকরির অভিজ্ঞতার মতো বিয়ের অভিজ্ঞতাও আজকাল জরুরি হয়ে পড়েছে … দিওয়ানা মদীনা হয়ে বিয়ে করা এবং তারপর ভুল বুঝতে পারা কিংবা এইটা অনুভব করা যে “নাহ, এইভাবে এই মানুষটার সাথে আর সংসার করা সম্ভব নয়” ইনস্ট্যান্ট তালাকের কিংবা সেপারেশন এর সিদ্ধান্ত নেয়া – এসবও একরকম পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় বটে।

বিয়ের আগে গায় , “আমারও পরান যাহা চায়, তুমি তাই গো”, আর বিয়ের পর গায়, “আমি জেনে-শুনে বিষ করেছি পান” …!!! কাজের অভিজ্ঞতার মতো বিয়ের অভিজ্ঞতা নেয়ার যুগ চলে এসছে বৈকি!

“ছেলে/ মেয়ে ৯৯% ই ভালো , শুধু একটু নেশা করে/ নাইট ক্লাবে যায় আর কি” অবস্থায় পতিত সম্পর্কগুলো। মানুষ, জাতি, সমাজ, দেশ এইসব পারিবারিক এবং সামাজিক অবক্ষয় মুক্ত হোক, এই আশা – প্রত্যাশাই করি।

লেখক: অ্যাক্টিভিস্ট

 

শেয়ার করুন: