তামান্না ইসলাম: কিছুদিন আগে অফিসে একটা খুব জরুরি কাজ পরে গেল, সেইদিনই কাজটা শুরু করতে হবে। কাজ পেলে আমি সাধারণত আমার টিমের জন্য নিয়ে নিতে চেষ্টা করি। কাজটা অন্য গ্রুপের, আমার টিমের কেউই খুব এক্সপার্ট না ওই বিষয়ে। কোন কিছু কমিট করে বসার আগে ভাবলাম টিমকে একটু জিজ্ঞেস করে দেখি আদৌ ওরা পারবে কিনা করতে।
পুরা টিমকেই ইমেইল পাঠালাম, “এই কাজ এসেছে, আজকে থেকেই শুরু করতে হবে, তোমরা কেউ আগ্রহী করতে?”
ঠিক দুই মিনিটের মাথায় একটা ছেলে উত্তর দিল “আমি এই কাজের বিন্দু বিসর্গ জানি না। তবু আমি কাজটা করার চেষ্টা করতে চাই।”
ঘণ্টা খানেক পরে একটা মেয়ে ইমেইল করলো ” আমি অমুকের সাথে কথা বলে কাজটা সম্পর্কে এই ধারণা নিয়েছি। তুমি চাইলে আমি ওর সাথে এই ব্যাপারে আরও আলোচনা চালাবো এবং কাজটা করে যাব।”
এখন অনুমান করুন কাজটা আমি কাকে দিয়েছিলাম। অবশ্যই ছেলেটাকে। আমার দরকার ছিল শুধু জানা যে কে আগ্রহী এবং কার আত্মবিশ্বাস আছে। টিমের সবাই কার কতোটুকু ক্ষমতা সেটাতো আমার আগে থেকেই জানা।
যে আগে উত্তর দিয়েছে তাকে কাজটা না দিয়ে আমি যদি দেরী করতাম, অন্য টিমের কেউ সেই কাজটা নিয়ে নিত। এভাবেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা মেয়েরা পিছিয়ে পড়ি।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি মেয়েরা রিস্ক নিতে চায় না, কারণ মেয়েরা সাবধানী। এই কারণে তাদের আত্মবিশ্বাসও ঠিক মতো বিকশিত হয় না। শুধুমাত্র এইএকটি কারণে অনেক ক্ষেত্রেই একটা যোগ্যতা সম্পন্ন মেয়ের যথার্থ মূল্যায়ন হয় না।
প্রশ্ন উঠতে পারে সাবধানী হওয়া কি খারাপ? অবশ্যই না।
আরেকটা উদাহরণ দেই। এই সাবধানী হওয়ার কারণেই মেয়েরা কাজে অনেক ডিটেল হয়। এই কারণে তাদের উপরে নির্ভর করা যায় বেশী। এবং অনেক অনেক ক্ষেত্রে তারা পরিশ্রমীও হয় বেশী। জানি না এটা আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে হয় কিনা, তবে চাকরির শুরু থেকেই মেয়েদের পরিশ্রমে একটা কন্সিসটেনসি থাকে।
একটা কাজ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা যতটা যত্ন নিয়ে করে, ছেলেদের ক্ষেত্রে সাধারণত একটা তাড়াহুড়া দেখা যায়। তবে অতিরিক্ত সাবধানী হতে গিয়ে যদি আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখানো হয়, সেটার ফল উল্টা হতে পারে, যে কোন চাকরিতেই সময়ের সীমাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েদের আরেকটি বড় গুণাবলী আছে যেটা জীবনের যে কোন ক্ষেত্রেই খুব জরুরি। নেটওয়ার্কিং, অন্য কথায় সামাজিকতা, যোগাযোগ। মানুষের সাথে কথা বলে তার সাহায্য নেওয়া, সম্পর্ক গড়ে তোলা, এই ব্যাপারগুলো মেয়েরা অনেক সহজেই পারে।
আমি অনেক সময় খেয়াল করেছি, মিটিঙের শেষে আমার গ্রুপের মেয়েটা ঠিকই একবার আমাকে জিজ্ঞেস করবে, “তোমার কি আজকে শরীর ভালো নেই?”
অথচ এই একই কথা গড়ে ৫ জন ছেলের মধ্যে একজনের মুখে হয়তো শুনি। এই সামান্য একটা কথা নিজের অজান্তেই মানুষের মনের অনেক গভীরে চলে যায়, আমরা যে যাই কাজ করি না কেন, দিনের শেষে আমরা কিন্তু মানুষই। তাই মনের প্রভাব সেখানে থাকবেই। এছাড়াও যে কোন পালা পার্বণে, কারো জন্মদিনে সবার আগে মেইল আসে ওই মেয়েটার কাছ থেকেই “সামনের সপ্তাহে অমুক দেশে যাচ্ছে, কে কে তার আগে লাঞ্চে যেতে চাও?” ও একাই আমাদের টিমটাকে একটা সেমি পরিবারের মতো ধরে রেখেছে। প্রকৃতি মেয়েদেরকে এই বিশেষ গুণগুলো দিয়ে পাঠিয়েছে সব কিছুকে গড়ার জন্য, ধরে রাখার জন্য।
এই সব কিছু চিন্তা করলে, আমার মনে হয় না, মেয়েরা কোন দিক থেকেই ছেলেদের চেয়ে ছোট। আমার মনে হয় না আমি সম অধিকারের দাবী জানাই, বরং আমার মনে হয় পুরুষ এবং নারী সবার নিজস্ব একটা ভূমিকা আছে। জীবনকে, জগতকে চালিয়ে নিতে গেলে উভয়েরই সেই ভূমিকায় আলাদা আলাদা ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে, নিজ নিজ ইউনিক শক্তিগুলোকে, গুণাবলীকে কাজে লাগাতে হবে।