উইমেন চ্যাপ্টার: পাকিস্তানের করাচিতে গুলি করে হত্যা করা হলো সাবিন মাহমুদকে। একজন একনিষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী, টিটুএফ (দ্য সেকেন্ড ফ্লোর) এর প্রতিষ্ঠাতা সাবিনকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা নিজ গাড়িতে গুলি করে রেখে যায়।
আর্টস এন্ড কালচার নিয়ে যিনি কাজ করছিলেন, যিনি একটি অভিন্ন প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে চাইছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন, এরকম বহুগুণে গুণান্বিতা সাবিনকে বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেয়া হলো করাচির রাস্তায়। হাসপাতালে নিতে নিতেই সব শেষ। সাথে থাকা সাবিনের মা-ও গুরুতর আহত হয়েছেন এই হামলায়।
শিক্ষাবিদ মা এবং বিজ্ঞাপন পেশার বাবার একমাত্র মেয়ে সাবিনের জন্ম করাচিতেই। করাচি গ্রামার স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ও লেভেল শেষ করার পর তিনি লাহোরের অত্যন্ত সুপরিচিত কিন্নেয়ার্ড কলেজ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন। করাচিতে ফিরে তিনি যোগ দিয়েছিলেন টেকনোলজি কোম্পানি সলিউশন্স আনলিমিটেড এ। যার প্রধান ছিলেন যাহির কিদভাই, পরবর্তীতে যিনি আজীবনের জন্য বন্ধুতে পরিণত হন সাবিনের।
এক সাক্ষাতকারে মিজ সাবিন বলেছিলেন, তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তোলার মতো পরিবর্তন আনা, আর এর মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ইন্টারনেট, কমিউনিকেশন টেকনোলজিকে। টিটুএফ ছিল সেই স্বপ্নেরই অংশ। টিটুএফ ছিল সাবিনের ব্রেইনচাইল্ড। তিনি একে মুক্ত আলোচনার এক উন্মুক্ত প্লাটফর্ম হিসেবে ধীরে ধীরে গড়ে তুলছিলেন।
লাহোর এবং করাচিতে একসময়ের জনপ্রিয় কফি হাউজের ধাঁচে টিটুএফ ছিল একাধারে বুকস্টোর এবং ক্যাফেও। পাকিস্তানের শহুরে সমাজে পরিবর্তন আনার অভিপ্রায়ই ছিল এই সংস্থার মূল লক্ষ্য।
দ্য সেকেন্ড ফ্লোর ছিল নন-প্রফিট প্রজেক্ট। আলোচনা-সেমিনার-প্রদর্শনী, নাটক-ড্রামার আয়োজন করা হয় এই প্রজেক্টের আওতায়। যেখানে অংশ নেন স্থানীয়-আন্তর্জাতিক অনেক নামকরা শিল্পী, সাহিত্যিক এবং কর্মী। সংগঠনের কার্যক্রমের পরিধি বিস্তৃতি পাওয়ায় রাত-দিন এর তহবিল সংগ্রহ, মার্কেটিং এর কাজে শ্রম দিচ্ছিলেন মিজ সাবিন।
ব্যক্তিজীবনে একজন সেতার বাদক এবং অল পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিজ মাহমুদ শুধুমাত্র মিউজিক প্রোগ্রামের আয়োজকই ছিলেন না, তিনি তার সংগঠনে সঙ্গীতজ্ঞদের জন্য স্থানও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে করাচিতে নিজ অফিসে কাজ করে বাসায় ফেরার পথে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
উইমেন চ্যাপ্টার এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ এবং ঘৃণা জানাচ্ছে। উইমেন চ্যাপ্টার সবসময়ই মুক্তচিন্তার পক্ষে এবং সবধরনের সাম্প্রদায়িকতা, নারী নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপক্ষে সোচ্চার।