শিরোনামহীন

women 7গোধূলি খান: তোমার জন্মলগ্নে আমার শরীরে ছিল না বোরখা, ছিল শুধু তোমাকে সুস্থ জন্ম দেবার আকুতি, তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখাবো বলে সব কষ্ট সয়েছি হাসিমুখে, জন্মে যে আমাকে দেখেছো, তখন ছিল না আমার মুখে কোন নেকাব, ছিল মুখে তোমাকে বুকে তুলে নেবার আনন্দ। দশটি মাস তোমাকে আগলে আগলে রেখেছিলাম আমার শরীরে, দেইনি ফুলের টোকা ব্যথা পাবে বলে।

বার বার হাত বুলিয়েছি স্ফীত নগ্ন পেটে, ছুঁতে চেয়েছি তোমাকে, স্পর্শে করতে চেয়েছি আমার গর্ভে বেড়ে ওঠা তোমাকে। আমার স্ফীত নগ্ন পেটে তোমার হাতের-পায়ের আকৃতি ফুটে উঠলে আনন্দিত হয়ে ডেকেছি অনেককে, যেন পিকাসোর আঁকা কোন অমরচিত্র, তখন আমার শরীরে ছিল না কোন আবায়া।

তুমি যখন ছিঁড়ে খুঁড়ে বের হয়ে আসলে আমার জঠর থেকে, আমি বেদনায় নীল হয়ে গেছি, রক্তস্নাত আমি তবুও হেসেছি তোমাকে বুকে নিয়ে, আঁতুড় ঘরে নিয়ে যায়নি কোন বোরখা। তোমার ক্ষুধা মেটাতে কখনো বাঁধা দেয়নি কোন হিজাব। তবু আজ কেন দিতে হবে এতো জবাব?

তুমি যখন আমার ভিতর থেকে বাইরে আসলে তোমাকে জড়াতে ছিল আমার শাড়ি ছেঁড়া, তোমার তুলোর মতন নরম শরীর প্যাঁচানোর জন্য আমার পুরানো শাড়ি রেখেছিলাম টুকরো টুকরো করে, আমার নরম শাড়ির টুকরো পরম মমতায় জড়িয়ে দিয়েছি। কোন টুকরো ছিল না বোরখার। আমার শাড়ির আঁচল সব সময় তোমাকে আশ্রয় দিয়েছে ভালবাসায়, কখনও তা তোমার শরীরের ঘাম মুছেছে, কখনও বা খালি মেঝেতে পেতেছি তুমি শুয়েছ বলে, রোদে পুড়বে তাই বুকের আঁচল নামিয়ে ঢেকে দিয়েছি তোমার মাথা।

আমার আঁচল তোমাকে ঢেকে রেখেছে সব বালাই থেকে। এই আঁচলেই বেঁধে রেখেছি খুচরো পয়সা, কখন রেখেছি চকলেট লজেন্স, আর অপরিসীম আদর। আমার শাড়ির ভাঁজে, আঁচল জুড়ে তোমার প্রতি ভালবাসা। আমার শাড়ির আঁচল ধরে হেঁটেছো কত পথ, তখন তো হাত বাড়াওনি ধরতে কোন বোরখার পার। তবু আজ কেন দিতে হবে এতো জবাব?

অনেক ভিড়ের মাঝে আমার শাড়ির একটু অংশ দেখা গেলে তুমি অভয় পেয়েছ। আমার শাড়িগুলি সবই তোমার চেনা, তাই ভিড়ের মাঝে আঁচল ধরে হাঁটা। আমার শাড়ির আমার আঁচল সবই চেনা, আমার শাড়ির আঁচলে তোমার ঘুড়ি-নাটাইয়ের পয়সা বাঁধা।

আমার শাড়ির আমার আঁচল তোমার অনেক চেনা, এই আঁচলে তোমার ভিজে মুখ, শরীর মোছা। আমার শাড়ির আমার আঁচল তোমার অনেক চেনা, এই শাড়ির এই আঁচলে তোমার জ্বরতপ্ত কপালের জলপট্টি ভেজা। আমার এই শাড়ির এই আঁচল তোমার তোমাকে ঠাণ্ডা রাতে অনেক ওম দিয়েছে। কোন বোরখা তো ছিল না।

আমার এই শাড়ির এই আঁচল তোমার চেনা, তেল-হলুদ-মসল্লার গন্ধ মাখা, দূরে যাচ্ছ সাথে আমার শাড়ি দিয়ে বানানো কাঁথা, গায়ে দিয়ে ঘুমাও তুমি। শাড়ির কাঁথা হয়ে তোমার সাথে থাকি। সাথে তো নিয়ে যাওনি হিজাব, তবু আজ কেন দিতে হবে এতো জবাব?
পথের ধারের ফকিরনি বলো আর সাতমহলা বাড়ির বউটি, জাঁদরেল পুলিশ বা মিলিটারি অফিসার, তোমার জন্য সবখানে আমার একটা পরিচয়, ঘরে বাইরে সবখানে। কিন্তু তোমার কেন এতো চেহারা? কেন আমি চিনতে পারি না।

তোমার হাতে কার ছেঁড়া শাড়ির টুকরো, তোমার নখের মাঝে কার শরীরের চামড়া, তুমি কার শাড়ির আঁচল পায়ে দলছো? তুমি বা তোমরা কার শাড়ি কেড়ে নিচ্ছ? কার শরীরে বসাচ্ছ থাবা? কার শরীরে বসাচ্ছ দাঁত?
আহ্ কেন তোমায় সেদিন এনেছিলাম?
কে দেবে আজ জবাব?

লেখক: সাংবাদিক।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.